গত বছর বিদ্যুতের লাইনের জন্য রাস্তা খুঁড়তে গিয়ে উদ্ধার হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা। তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল শিক্ষা মহলে। এ বার উচ্চমাধ্যমিকের উর্দু প্রোজেক্টের খাতাও একইভাবে রাস্তায় পড়ে থাকার ঘটনা ঘটল। স্কুলের তরফে অভিযোগ, হায়ার সেকেন্ডারি কাউন্সিলের গাফিলতির ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে।
গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মধ্যমগ্রামের কাছে দোলতলায় যশোর রোডের উপরে প্রায় ২০০ মিটার জায়গা জুড়ে কিছু খাতা পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় ব্যবসায়ী বিধান মন্ডল। প্রাক্তন সেনাকর্মী বিধানবাবুর ডানহাত নেই। জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে শরীরে ২২টি বুলেট লেগেছিল তাঁর। ফলে প্রাণে বাঁচলেও ডানহাত খুইয়ে এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই কমজোর তিনি। ওই অবস্থায় কোনওরকমে খাতাগুলি কুড়িয়ে নিজের দোকানে নিয়ে আসেন সেনা মেডেল পাওয়া বিধানবাবু। কিন্তু দু’দিনের বেশি হয়ে গেলেও এখনও কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি বলেই জানিয়েছেন তিনি।
বিধানবাবুর কথায়, “খাতাগুলির উপর মোমিন হাইস্কুলের নাম লেখা ছিল। সঙ্গে হায়ার সেকেন্ডারি এক্সামিনেশন, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, প্রজেক্ট ওয়ার্ক প্রভৃতি লেখা থাকায় আমি বুঝতে পারি, উচ্চমাধ্যমিক সংক্রান্ত কোনও খাতা হবে। তাই আমি সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসি। ৫০ থেকে ৬০টি খাতা পড়ে ছিল সেখানে। আমি চাইনি, এর ফলে ছাত্রদের কোনও ক্ষতি হোক। কিন্তু এখনও পর্যন্ত হায়ার সেকেন্ডারি কাউন্সিলের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এভাবে গাফিলতির ফলে যেন ছাত্র-ছাত্রীদের মনোবল নষ্ট না হয়।”
এ ব্যাপারে নারকেলডাঙার মোমিন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিদ আসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবটা জানালে তিনি স্বীকার করে নেন, খাতাগুলি তাঁদের স্কুলেরই উচ্চমাধ্যমিক প্রজেক্টের। শাহিদবাবু বলেন, “যে খাতাগুলির কথা বলছেন সেগুলি আমাদের স্কুলেরই পরীক্ষা দেওয়া ছাত্রদের। এগুলি উর্দু ভাষার প্রজেক্ট ওয়ার্কের খাতা। এই প্রজেক্টে ২০ নম্বর করে থাকে। কাউন্সিল থেকে আমাদের স্কুলে যে টাবুলেশন শিট পাঠানো হয়েছিল, সেখানে আমরা প্রত্যেক ছাত্রর প্রজেক্টের নম্বর লিখে কাউন্সিলে পাঠিয়ে দিয়েছি অনেকদিন আগেই। তারপর কাউন্সিলের তরফে আমাদের জানানো হয়, ২৮-২৯ মার্চের মধ্যে বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে প্রজেক্টের খাতাগুলি জমা করে আসতে হবে। আমরা সেইমতো সব জমা করে আসি। তার রিসিটও আছে আমাদের কাছে। তারপর যে ঘটনা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণভাবে কাউন্সিলের গাফিলতিতেই হয়েছে।” শাহিদবাবু অভিযোগ করেছেন, “এখনও উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরোয়নি। অর্থাৎ খাতাগুলির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু তারপরেও এ ভাবে রাস্তায় খাতা কেন পড়ে থাকবে, তার জবাব চাইতে কাউন্সিলে যাবো।”
এ ব্যাপারে শিক্ষক মহলের একাংশের অভিযোগ, উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেরোনর পরে প্রজেক্টের নম্বর নিয়ে কোনও ছাত্র যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তাকে খাতা দেখাতে বাধ্য কমিশন। কিন্তু এরকম ঘটনা ঘটলে সেটা কীভাবে সম্ভব? ওয়েস্ট বেঙ্গল কাউন্সিল অফ হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশনের আধিকারিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তাঁরা কথা বলতে অস্বীকার করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এই ব্যাপারে মেসেজ করা হয়েছিল। তিনি এখনও মেসেজ দেখেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে সেটা এই প্রতিবেদনে আপডেট করে দেওয়া হবে।