বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশন (Bengal Imams Association) পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে আগামী ২৫শে মে ঈদ উৎসব পালন করার জন্য তাঁরা ব্যাকুল নন, বরং তাঁরা চেয়েছেন যে লকডাউন চলুক। অন্ততঃ ৩০শে মে পর্যন্ত তো অবশ্যই চলুক। ইমামরা জানিয়েছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার যদি লকডাউন তুলেও নেয়, রাজ্য সরকার যেন তা না তোলে। আরও লিখেছেন যে অন্য কোনো দোকান খোলা থাকলেও (সম্ভবতঃ যে দোকান ওঁদের অর্থাৎ মুসলিমদের নয়, সেই দোকানগুলোর কথা বলতে চেয়েছেন) ওঁরা তাই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কোনো প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না। মহামারীর আবহে ইমামদের এমন চিঠি অত্যন্ত প্রশংসনীয় সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। একথা সত্য যে সুস্থ জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো কিছু নেই এবং মুসলিম ধর্মগুরুরা সে কথা লিখিতভাবে স্বীকার করে ঔদার্য ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। যাঁরা মুসলিম ধর্মগুরুমাত্রেই কট্টর ও ধর্মান্ধ বলে মনে করেন, ইমামদের এই চিঠি তাঁদের মনোভাব পরিবর্তনে সহায়তা করবে। এবং সেই কারণেই হয়ত বা ইমামদের এমত প্রস্তাবে রাজ্যের অমুসলমান জনগণও অবিমিশ্র খুশি হয়েছেন। প্রস্তাবটিকে সদর্থক প্রস্তাব বলেছেন অনেকেই। এ-ও বলেছেন যে রাজ্য সরকারের উচিত এই প্রস্তাব গ্রহন করা এবং এই অনুসারেই কাজ করা। মুসলিম ধর্মগুরুরা ঈদ পালন করতে চান নি, ঈদের দিন রাস্তায় নেমে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং অগ্রাহ্য করে নমাজ পড়ার কথা বলেন নি, তা অনেককেই আপ্লুত করেছে। বাস্তবেও ইমামদের এই চিঠি তাঁদের পরিণতমনস্কতার সাক্ষ্য বহন করে। মানবিকতার দিক থেকে এটি তাঁদের একটি সময়ানুগ পদক্ষেপ।

ইমামদের এই চিঠির রাজনৈতিক তাৎপর্যও অবশ্য কম নয়। চিঠির বয়ান ও বক্তব্য থেকে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসে যেগুলির সম্যক আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এই চিঠির দ্বারা ইমামরা যেন পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন যে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর বিভিন্ন বিষয়ে চাপ সৃষ্টি তাঁরা করে থাকেন। তা যদি না হত, তাহলে অন্য দোকান খোলা থাকলেও তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা বিব্রত করবেন না, একথা বলার আর অন্য কি তাৎপর্য থাকতে পারে? পরবর্তী প্রশ্ন হল, ইমামরা যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে থাকেন সেই বিষয়টিকে এইরকম লিখিতভাবে তথ্যায়িত করার কি প্রয়োজন ছিল? তবে কি এর দ্বারাও তাঁরা একরকম ক্ষমতা প্রদর্শনই করলেন? যদি করেও থাকেন, তাহলেও রাজনৈতিকভাবে তা নিন্দনীয় নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে যে মুসলিমরা চিরকালই দেশের নাগরিক পরিচয়ের বাইরে নিজেদের একটি সমান্তরাল পরিচয় এবং সমান্তরাল রাজনৈতিক অস্তিত্ব বজায় রেখে চলেছেন। সেই পৃথক রাজনৈতিক সত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ক্ষমতা প্রদর্শন অন্যায্য নয়, বিশেষতঃ মুসলিম ধর্মগুরুরা যেখানে চিরকাল ইসলামিক পরিচয়ের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের চেষ্টা করে এসেছেন।

ইমামদের চিঠি থেকে আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন তুলে দিলেও, রাজ্য সরকার যেন তা না তোলে এমন অনুরোধ করার মধ্যে কেন্দ্র-রাজ্য অসহযোগের একটা প্রণোদনা রয়ে গেল কি? কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা রাজ্য সরকার যে না মানতেও পারে এমন বার্তা ইমামদের চিঠিতে লক্ষ্য করে একথা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হন, তার পিছনেও হয়ত বা এই মুসলিম ধর্মগুরুদের প্রত্যক্ষ সমর্থন আছে। এমন আন্দাজ করাও অযৌক্তিক হবে না যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যান হয়ত বা এঁদেরই পরামর্শে, বিশেষতঃ ইমামরা নিজেরাই যেখানে পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে থাকেন

মুসলিম সমাজে ইমামরা শুধু ধর্মগুরু নন। তাঁরা মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক, এমনকি পারিবারিক জীবনেরও অভিভাবক। সাধারণ মুসলমান জনগণকে তাঁদের নির্দেশেই চলতে হয়। এমতাবস্থায়, মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ উৎসব ঈদের আগে কোভিডের আবহে এই ধর্মগুরুদের কি করনীয় ছিল তা তাঁদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। যে সিদ্ধান্তই তাঁরা নিন, রাজনৈতিকভাবে তা তাঁদের নিজেদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য লাভজনক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। আবার উক্ত দ্বিমুখী লাভের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন কোনো সুবিধা নিতেও তাঁরা রাজি হন নি যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম-তোষণের বিরুদ্ধে রাজ্যের অমুসলমান জনগণের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। মুসলিম ভোটের বিশেষত্ব হল যে তা ঐক্যবদ্ধ এবং সেই ঐক্যবদ্ধতার আদত কারণ হল সাধারণ মুসলমান সমাজ ধর্মগুরুদের দ্বারা আক্ষরিক অর্থেই পরিচালিত। কিন্তু অমুসলমান ভোট ঐক্যবদ্ধ নয়, কারণ অমুসলমান সমাজ ধর্মগুরু-অধ্যুষিত নয়। ইমামদের আশঙ্কা সম্ভবতঃ এই যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুসলিম-তোষণে বিরক্ত হয়ে রাজ্যের অমুসলমান ভোটও যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়, তবে ভোটের রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ ভোটের গুরুত্ব খর্ব হবে কারণ মুসলমান ভোট শতাংশের হিসেবে এখনও অমুসলমান ভোটের চাইতে অনেকটাই কম। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম-তোষণে বিরক্ত হয়ে রাজ্যের অমুসলমান ভোট এককাট্টা হোক্, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম ধর্মগুরুরা তা চাইতে পারেন না। মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত মুসলিম-তোষণে সেই কারণেই তাঁরাও হয়ত বা খানিক বিব্রতই। ইমামদের এই চিঠি তাই সম্প্রদায়গতভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদেরকে রাজ্যের অমুসলমান জনগণের ক্ষোভের পরোক্ষ টার্গেট হওয়া থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যেও হতে পারে। মমতা যদি তোষণও করেন, সম্প্রদায়গতভাবে ওঁরা বলতে পারবেন যে এমন তোষণ তাঁরা অন্ততঃ চান না। এ রাজ্যে মুসলমানের ভাবমূর্তি আরও অধিক ক্ষুণ্ন না করার রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবেও ইমামদের এই চিঠিটি প্রশংসনীয় ও নিজেদের সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার্থে রাজনৈতিক পরিণতবুদ্ধির পরিচয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদেরকে তোষণ করলেও তাঁরা নিজেরা যে সে তোষণ চান না, এমন বলার মধ্য দিয়ে রাজ্যের অমুসলমান জনগণের ক্ষোভ কিছু হলেও প্রশমিত করতে তাঁরা চেয়েছেন বলে মনে হয়। এবং তাঁদের ক্ষোভ প্রশমিত হলেই ভোটে তাঁদের এককাট্টা হওয়ার প্রবণতাকে ঠেকানো যাবে। তাতে সম্প্রদায়গতভাবে মুসলমান ভোটের তুলনামূলক গুরুত্ব বেশি থাকবে, ফলে মুসলমান সমাজের তাতে লাভ, আবার মমতারও তাতে লাভ। কিছু বিক্ষুব্ধ অমুসলমান ভোট আবার তার ফলে মমতার কাছেই ফিরে যাবে। ইমামরা জানেন, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) থাকলেই তাঁদের সুবিধা সর্বাধিক। ইমামদের চিঠিকে এ রাজ্যের অমুসলমান জনগণ যেভাবে স্বাগত জানিয়েছেন, তাতে ইমামদের সেই উদ্দেশ্য আপাতদৃষ্টিতে সফল‌ বলেই প্রতীত হয়। একথাও অনস্বীকার্য এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয় যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায় মুসলিম ধর্মগুরুরা সাধারণ ঐক্যহীন অমুসলমান জনগণের চেয়ে বহু এগিয়ে।

দেখা যাক্, এমত মহামারীর আবহে ইমামরা ঈদের আগে কি কি করতে পারতেন।

. প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ঈদ পালনের নির্দেশ দিতে পারতেন সাধারণ মুসলমান জনগণকে
২. কিছু না করে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় চুপ করে থাকতে পারতেন
৩. সাধারণ মুসলমান জনগণকে মহামারীর কারণে উৎসব পালন করতে বারণ করতে পারতেন

যদি প্রথম পদক্ষেপ তাঁরা নিতেন, অর্থাৎ যদি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ঈদ পালনের নির্দেশ সাধারণ মুসলমান জনগণকে দিতেন, এবং ঈদের আগে লকডাউন যদি প্রশাসনিকভাবে উঠেও যেত, তাহলেও মহামারী বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ মুসলমান তেমনভাবে ঈদ উৎসব পালন করতে এবছর অগ্রসর হত কিনা বা হতে পারত কিনা, সে সম্বন্ধে সন্দেহ থেকেই যায়। কারণ ইতিপূর্বেও বেশ কিছু মুসলিম ধর্মগুরু এমন কথা একাধিকবার বলেছেন যে মসজিদে করোনা ঢুকতে পারবে না। আবার ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা একথাও বলেছেন যে করোনা ভাইরাস বেছে বেছে ‘কাফের’দের মারবে ইত্যাদি। কিন্তু সাধারণ মুসলমান মানুষ বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছেন যে ধর্মগুরুদের এইসব কথা সত্যি হয় নি। প্রচুর সংক্রমণ হয়েছে মসজিদের মধ্যে, সংক্রমণ ছড়িয়েছে এমনকি তাবলীগি জামাতিদের মধ্যেও। অনেক রাজ্যে মসজিদে জমায়েতের পর অনেক ইমাম সাহেব মারাও গিয়েছেন। এইসব ঘটনার ফলে ইমামদের বিশ্বাসযোগ্যতা সাধারণ মুসলমানের কাছে কিঞ্চিৎ হলেও ধাক্কা খেয়েছে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে যে বর্তমানে লকডাউন উঠলেও জনজীবন স্বাভাবিক হতে বহু সময় লাগবে এবং পূর্ববর্তী স্বাভাবিকতা সহজে ফিরবে কিনা, বা আদৌ ফিরবে কি না তাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। সাধারণ মুসলমান মানুষেরাও তা বুঝতে পারছে। তাই যদি ইমামরা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ঈদ পালনের নির্দেশ সাধারণ মুসলমান জনগণকে দিতেন, তাহলে তাঁদের অনেকে রোগের ভয়ে হয়ত ধর্মগুরুদের নির্দেশও এবার অমান্য‌ করে বসতেন। অন্ততঃ সে সম্ভাবনা ছিলই। যে সাধারণ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলিম ইমামের সব কথা শোনেন, জীবনমৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে তিনিও হয়ত জীবনরক্ষার স্বার্থে ইমামের কথা এবছর অগ্রাহ্য করে বসতে পারতেন। জীবনের কাছে সব তুচ্ছ। তাই সাধারণ মুসলিম সমাজে ইমামদের নির্দেশ অগ্রাহ্য করার ট্রাডিশন শুরু করার রাজনৈতিক ঝুঁকিটি নিতে ইমামরা পারেন নি এবং সঙ্গত কারণেই। তাঁদের কথা অমান্য করার দৃষ্টান্ত একবার স্থাপিত হয়ে গেলেই ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে ইমামদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে এবং ভয়ের‌ ফানুস ফেটে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে এই ঝুঁকি ইমাম সাহেবরা নেন নি। এ তাঁদের ব্যক্তিগত লাভলোকসানের হিসেব এবং তাতে তাঁরা ঝুঁকিহীনতার রাস্তায় হেঁটেছেন। এতে রাজনৈতিক পরিণতমনস্কতা ছাড়া অন্য কিছু নেই।

যদি দ্বিতীয় পদক্ষেপ তাঁরা নিতেন অর্থাৎ যদি প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় চুপ করে থাকতেন, তাহলে সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সে-ই হয়ত তাঁদের উচিত কর্তব্য হত। কিন্তু এটা বাস্তব যে নিজেদের সমাজের ভিতরে বা নিজস্ব সম্প্রদায়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিম ধর্মগুরুরা কখনও, কোনো দেশেই ধর্মনিরপেক্ষতা পালন করেন নি। ঘোষিত ইসলামিক দেশগুলির কথা যদি ছেড়েও দিই, অন্যান্য তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বা অনৈসলামিক দেশে মুসলিমরা ও তাঁদের ধর্মগুরুরা তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে চিরকাল সীমাবদ্ধ রেখেছেন কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার প্রয়োজনটুকুর মধ্যেই। সত্যি, মিথ্যে বলতে পারব না, তবে যতটুকু শুনেছি বা নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, তাতে, ইসলাম ধর্মে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়টিই সম্ভবতঃ নেই। এবং আমাদের দেশে যতই ওঁরা নিজেদের সুবিধার্থে সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই পাড়ুন না কেন, নিজস্ব সম্প্রদায়ের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও যে ওঁরা সাধারণ ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিকের কর্তব্য পালন করবেন, তা আশা করা সম্ভবতঃ বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। তাই তা প্রত্যাশিতও নয় এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রে তা ঘটেওনি। মুসলিম ধর্মগুরুদের কাছ থেকে যা প্রত্যাশিত তা-ই ঘটেছে, অর্থাৎ ওঁরা সরকারি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় চুপ করে বসে থাকতে পারেন নি। আগেভাগেই সরকারকে চিঠি দিয়ে নিজেদের সাম্প্রদায়িক অবস্থান জানিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন। অবশ্য, যদি ওঁরা চুপ করে অপেক্ষাও করতেন, তাহলেও লকডাউন উঠে গেলে সাধারণ মুসলমান জনগণ ইমামদেরকে জিজ্ঞেস করেই তাঁদের কর্তব্য স্থির করতেন। সেক্ষেত্রে তখন তাঁদেরকে ধর্ম-উৎসব ঈদ পালন করতে বারণ করাও ইমামদের পক্ষে অস্বস্তিকর হত, আবার ঈদ পালনের নির্দেশ দিলেও যে সকল সাধারণ মুসলমান মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন, তা বোধ হয় নয়। কারণ এবছর অবস্থা প্রতিকূল। বহু মুসলমান মানুষের কোভিড সংক্রমণ হয়েছে, এবং বহু লোক মারাও গিয়েছেন। এমতাবস্থায় ইমামদের নির্দেশ সত্ত্বেও অনেকেই হয়ত জমায়েতে আসতেন না। ফলে সেই একইভাবে ইমামের কথা অমান্য করার ট্রাডিশন সাধারণ মুসলমান সমাজে শুরু হত, যে ঝুঁকি ইমামরা নিজেদের সমাজ-রাজনৈতিক আধিপত্য ও প্রতিপত্তি বজায় রাখার স্বার্থেই হয়ত নিতে পারেন নি। আবার উল্টোদিকে যাঁরা ইমামদের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে ঈদের জমায়েতে আসতেন তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ পরবর্তীকালে কোভিডে আক্রান্ত হলে (হওয়াই স্বাভাবিক) সাধারণ মুসলিম জনগণের মধ্যে ধর্মগুরুদের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস আরও একবার টলে যেত। সে ঝুঁকিও ইমামসাহেবদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিল না। সাধারণ অন্ধ ধর্মপ্রাণ বেচারা ভক্তদের ওঁরা যা-ই বোঝান না কেন, নিজেদের মনে ওঁরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে রোগ ধর্ম বিচার করে হয় না। একজন মানুষ, তিনি যে ধর্মাবলম্বীই হোন না কেন, যদি স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করে অন্য বহু মানুষের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি করতে যান, তবে তাঁর রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে তিনি মুসলিম না কাফের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। অন্য যে অভিযোগই করা যাক না কেন, মুসলিম ধর্মগুরুরা যে তাঁদের সম্প্রদায়ের মানুষের শুভাকাঙ্ক্ষী সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ খুব কম। তাই বহু মানুষের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ঈদ পালনের প্রত্যক্ষ নির্দেশ দেওয়া এবছর ইমাম সাহেবদের পক্ষে বোধ হয় সম্ভবও ছিল না, সেটি সরকারি সিদ্ধান্তের আগেও সম্ভব ছিল না, পরেও সম্ভব ছিল না।

স্বাভাবিকভাবেই প্রথম বা দ্বিতীয় পদক্ষেপ না নিয়ে ইমামরা তিন নম্বর পদক্ষেপটিই নিয়েছেন এবং অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। এর ফলে সাধারণ মুসলমানের কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি তাঁদের হতে হল না, উপরন্তু তাঁরা এত মানুষের সমর্থন ও প্রশংসা উপরি হিসেবে পেলেন। যে উৎসব হয়ত এবছর এমনিতেই বানচাল হত, সেই উৎসবকে বাতিল ঘোষণা করে বস্তুতঃ “উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ” করে নিজেদের ভাবমূর্তির কিছু উন্নতি ঘটাতে পারলেন পশ্চিমবঙ্গের ইমামরা। রাজনৈতিক চাল হিসেবে এ চাল নিঃসন্দেহে বুদ্ধিদীপ্ত অথচ তাঁদের সমান্তরাল সমাজ-রাজনৈতিক ধূর্ত অ্যাজেণ্ডার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।

এতক্ষণ বিষয়টিকে ইমামদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার পর এবার একজন অমুসলমান ভারতীয় নাগরিকের দৃষ্টিকোণ থেকে এটিকে দেখা যাক্।‌ ইমামরা এবছর ঈদ উৎসবের উদযাপন চান না তা অতি উত্তম এবং সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত তো তাঁরা নিজেদের মধ্যে রাখলেও পারতেন। আলাদা করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তা জানানোর প্রয়োজন হল কেন বা সাংবাদিক বৈঠক করে সাড়ম্বরে তা ঘোষণা করার প্রয়োজনই বা পড়ল কেন সেই উত্তরটি খুঁজে পাওয়া দরকার। বস্তুতঃ সেই উত্তরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই চিঠির আদত রাজনৈতিক প্রণোদনা।

ইমামদের চিঠির বয়ান থেকে আন্দাজ করা যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে মুসলিম-তোষণের রাজনীতি করেই অভ্যস্ত, ইমামরা তা জানেন ও অনুমোদন করেন। সুতরাং ঈদের কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী যে এ রাজ্যে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হতে পারেন এবং ঈদের জন্যই হয়তো লকডাউন শিথিল করা বা তোলার কথাও ভাবতে পারেন, তা ইমামদের পক্ষে আন্দাজ করা কঠিন হয় নি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা করা হলে ভবিষ্যতে রাজ্যে কোভিডের অধিকতর সংক্রমণের দায় যে প্রত্যক্ষভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ওপর এবং পরোক্ষভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপরেই এসে পড়বে সেটা বুদ্ধিমান ইমামদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ইতিপূর্বেই ঘটে যাওয়া দিল্লির তাবলীগি জামাতের উদাহরণ তাঁদের সামনেই ছিল। তাই আগে থেকেই নিজেদের ভিন্নতর অবস্থানের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন তাঁদের ছিল। কিন্তু যদি তাঁরা সেই কথা গোপনে শুধু মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেন, তাহলে ইমামরাই যে সম্মিলিতভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে লকডাউন না তোলবার পরামর্শ দিচ্ছেন তা এই লকডাউনের বাজারে রাজ্যের সমস্ত সাধারণ মুসলমান জনগণকে জানানো কঠিন হয়ে পড়ত, কারণ বিপর্যয় মোকাবিলা আইন কার্যকরী থাকায় মুসলমানদের নিয়মিত জমায়েত সর্বত্রই এখন কিঞ্চিৎ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ধর্মগুরুদের পরামর্শে সাধারণ মুসলিম সমাজ দেশের আইন নয়, বরং ধর্মগুরুদের কথাকেই আইন হিসেবে মেনে চলতে অভ্যস্ত। সেটিই মুসলিম ধর্মগুরুদের সমান্তরাল সমাজ রাজনৈতিক সিস্টেম। ফলতঃ, ঈদের সময় মুখ্যমন্ত্রী যদি ইমামদের পরামর্শ মেনে লকডাউন চালিয়ে যান, তাহলেও, সাধারণ মুসলমান মানুষ যতক্ষণ না জানতে পারতেন যে রাজ্য সরকারের সেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ইমামদের সম্মতিক্রমেই নেওয়া হয়েছে, ততক্ষণ তাঁরা সে সিদ্ধান্ত মান্য করতেন না এবং ঈদ উপলক্ষে হয়ত লকডাউনের নিয়ম অমান্য করেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন ঈদের নমাজ পড়তে। আমরা দেখে থাকি যে সাধারণ মুসলমান সমাজের মধ্যে দেশের আইন অমান্য করার প্রবণতা খুব বেশি। এর কারণ সম্ভবতঃ এই যে ওঁরা ইমামসাহেবদের কথাকেই আইন হিসেবে মান্য করেন, দেশের আইনকে নয়। ছেলেবেলা থেকে ইমামরা হয়ত সেই শিক্ষাই ওঁদের দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই শিক্ষায় শিক্ষিত সাধারণ মুসলমান যদি মহামারীর সময়েও দেশের আইন অমান্য করে ঈদ উপলক্ষে হই হই করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তাহলে তার ফলে স্বাস্থ্যহানি ঘটবে মুসলমানদেরই আরও বেশি করে, চাপ পড়বে গোটা রাজ্যের উপর এবং মুসলিম সম্প্রদায় তথা মুখ্যমন্ত্রীর উপর চূড়ান্ত ক্ষেপে উঠবে রাজ্যের অমুসলমান জনগণও। এইটি ঠেকানোর প্রয়োজন ইমামরা অনুভব করেছেন বলেই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন বলে আন্দাজ করা যায়। গণমাধ্যমের কাছে সেই সিদ্ধান্ত প্রচার করার প্রয়োজন সম্ভবতঃ পড়েছে এই কারণে যে গণমাধ্যমকে জানানোই রাজ্যের প্রতিটি কোণে মুসলমান জনসমাজের কাছে এই বার্তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার সহজতম উপায়। উপরন্তু গণমাধ্যমকে জানানোর মাধ্যমে একাধারে রাজ্যের মুসলিম জনতার মধ্যেও যেমন নিজেদের ও মুখ্যমন্ত্রীর ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া গেল, তেমন অমুসলমান জনগণের মধ্যেও নিজেদের একটি নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রয়াস করা হল। এটি একটি সচেতন দ্বিমুখী রাজনৈতিক প্রয়াস যা অত্যন্ত পরিণত ও হিসেবী পদক্ষেপ। এর পর যদি ঈদের সময় কোনোপ্রকার আইনি গোলযোগ ঘটে, তবে তার জন্য সম্প্রদায়গতভাবে মুসলমানদের দায়ী করার রাস্তা কৌশলে বন্ধ করে দিলেন ইমামরা।

এ প্রসঙ্গে অবশ্য উল্লেখ্য যে গতকাল রাত্রে হুগলির তেলিনিপাড়া, চন্দননগর ও সিঙ্গুরে এবং মালদহের চণ্ডীপুরে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ হিংসাত্মক হয়ে উঠেছিলেন। সিঙ্গুরের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে ৭০ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা মধ্যে ৪৫জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাঁদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে এলে তাণ্ডব শুরু করে তারা। ভাঙচুর, মারপিট, থুতু ছিটোনো ইত্যাদি। তারা দাবী করে যে কোয়ারান্টাইন সেন্টারে রেখেই তাদের চিকিৎসা করতে হবে, হাসপাতালে তারা যাবে না। অন্য জায়গাগুলিতেও দেখা যায় একই প্রকার চিত্র। ক্ষুব্ধ ও উন্মত্ত হয়ে ঐ বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ এলাকার হিন্দুদের বাড়ি, ঘরদোর, দোকান, এমনকি ফার্মেসি পর্যন্ত আক্রমণ করে ভাঙচুর করেন এবং এলাকার অন্যান্য মানুষের মধ্যেও নিজেদের সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। জানা যাচ্ছে যে তাঁদের মধ্যে আজমেঢ় শরীফ থেকে তীর্থ করে ফেরা মানুষজনও ছিলেন। অর্থাৎ ইমামরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে লকডাউন চালিয়ে যেতে বললেও, আদতে নিজেদের সম্প্রদায়ের মানুষদেরকে অন্য কোনো প্রকার নির্দেশ দিচ্ছেন কি না, তা বোঝার উপায় নেই। ইমামদের চিঠির কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার দিনেই হুগলি ও মালদা জেলায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ইঙ্গিতবহ এবং সন্দেহজনক। রোগের চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে ঐ সম্প্রদায়ের মানুষের অসহযোগিতার মনোভাব এবং তার প্রতিক্রিয়ায় অন্যদের প্রতি অযথা আক্রোশ প্রদর্শনের মত অর্বাচীনতা ইমামসাহেবরা আটকাতে পারছেন না কেন, এ প্রশ্ন তোলা সঙ্গত এবং কর্তব্য।

ইমামদের চিঠি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুসলিম-তোষণের রাজনীতিকে ওপেন সিক্রেট না রেখে, প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। প্রশ্ন হল, ধর্মগুরুরা আর কতদিন ধর্মনিরপেক্ষ ভারত রাষ্ট্রের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে পরিচালনা করবেন? একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ই বা আর কতদিন দেশের আইনের উপরে তাঁদের ধর্মগুরুদের কথাকে স্থান দেবেন? রাষ্ট্রকর্মে থিওক্রেটিক ধর্মের কোনো প্রয়োজন নেই। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতার নামের আড়াল থেকে ইমামসাহেবদের অঙ্গুলিহেলনে আর কতদিন চলবেন মুসলমান সম্প্রদায়? কবে তাঁরা ইমামদের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রের মূলধারায় যোগ দেবেন? মুসলিম সমাজের প্রকৃত মঙ্গলার্থে এ দেশ থেকে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড তুলে দেওয়ার আশু প্রয়োজন।

১২ মে বেলার দিক থেকে আবার উত্তপ্ত ভদ্রেশ্বর তেলিনি পাড়া

https://www.facebook.com/LocketChatterjeeBJP/videos/2713545868887593/

দেবযানী ভট্টাচার্য্য (Debjani Bhattacharyya)

Communal riots in Hooghly and Malda on the day of Imam’s letter to CM of WB: A mere coincidence?

Bengal Imams Association in a letter to the West Bengal Chief Minister, said that they were not anxious to celebrate Eid on May 25, but wanted a lockdown till May 30. The imams said that even if the central government lifts the lockdown, the state government should not lift it. They further wrote that even if any other shop is open (probably the other shops mean the non-Muslim shops), they will not embarrass the Chief Minister by asking any question. There is no doubt that such a letter from the Imams in the wake of the epidemic is highly commendable. It is true that there is nothing more important than a healthy life and the Muslim clergy have acknowledged this in writing and shown generosity and sensitivity. For those who find the Muslim clergy to be fanatical and bigoted, this letter from the Imams will help them change their attitudes. That may be the reason why some non-Muslim people of the state have been very happy with the proposal of the Imams. Many have called the proposal a positive one. They also wish that the state government should accept the proposal and act accordingly. Muslim clerics did not want to celebrate Eid, did not take to the streets on the day of Eid and did not call for prayer ignoring social distancing. This has made some overjoyed. In fact, this letter of the Imams bears witness to their maturity. This is a timely step for them in terms of humanity.
Of course, the political significance of this letter of the Imams no less. From the statements of the letter a few questions arise which need to be thoroughly discussed. By this letter, the Imams seem to have indirectly admitted that they put pressure on the Chief Minister of the state on various issues. If it were not so, would they have embarrassed the Chief Minister by questioning her even if another shop was open? The next question is, was it necessary to inform the Chief Minister that the Imams put pressure on her in writing? Don’t they somehow smack of the show power? Even if it does, it is not politically reprehensible! History will testify that Muslims have always maintained a parallel identity and parallel political existence outside the country’s civic identity. It has never been unfair to display this power from the point of view of that Muslim political entity, especially the Muslim clerics who have always tried to gain political power on the basis of Islamic identity.
One more thing is noticeable from the letter of the Imams. Even if the central government lifts the lockdown, is there any hint for central-state non-cooperation in requesting the state government not to do so? It is not uncommon for the imams’ letter to convey the message that the state government may not accept the central government’s announcement. It seems that there may be direct support from these Muslim clerics behind various issues that the West Bengal chief minister has clashed with the central government. It would not be unreasonable to speculate that the Chief Minister of West Bengal may have clashed with the Central Government or on their advice, especially where the Imams themselves have indirectly admitted that they are putting pressure on the Chief Minister.
In Muslim society, imams are not just religious leaders. They are the guardians of the social, political, and even family life of Muslims. Ordinary Muslims have to follow their instructions. In this context, it is necessary to consider from their point of view what these religious leaders had to do in the times of Covid 19 before Eid. Whatever decision they make politically, is needed to be for their own benefit and for the benefit of the general Muslim community. Again, they did not agree to take any advantage from the Chief Minister of West Bengal for this so that the anger of the non-Muslim population of the state against the Muslim appeasement of Mamata Banerjee may not increase. The peculiarity of the Muslim vote is that it is united and the main reason for that unity is that the general Muslim society is literally ruled by religious leaders. But the non-Muslim vote is not united, because the non-Muslim society is not ruled by religious leaders. The imams fear that if the non-Muslim vote in the state unites against the West Bengal chief minister’s Muslim appeasement policy, the importance of a united Muslim vote bank for West Bengal politics will be diminished, as the Muslim vote percentage is still much lower than the non-Muslim vote. So, annoyed by Mamata Banerjee’s Muslim appeasement, the non-Muslim vote consolidates in the state is not what Muslim clerics want. That may be the reason why they are a little embarrassed by the overt Muslim appeasement of the Chief Minister. This letter of the Imams may therefore be intended to protect the Muslims of West Bengal from being the indirect target of the anger of the non-Muslim people of the state. Even if Mamata appeases, they can communally say that at least they do not want such appeasement. This letter from the Imams is also commendable as a political initiative not to tarnish the image of Muslims in the state and is a sign of political maturity in the interest of their community. Although the Chief Minister appeases them, it seems that the Muslims want to calm down the non-Muslim people of the state by showing that they themselves do not want that appeasement. This endeavour is only to stop consolidation of non Muslim votes out of anger for Muslim appeasement. It will also maintain the importance of the Muslim vote so the Muslim community will benefit from it, and Mamata too. Some disgruntled non-Muslim voters will go back to Mamata as a result. Imams know that if Mamata Banerjee is the Chief Minister of this state, their advantage is maximum. The way in which the non-Muslim people of this state have welcomed the letter of the Imams seems to indicate that the purpose of the Imams has succeeded. It is also undeniable and highly commendable that Muslim clerics are far ahead of non-Muslim people in general in their political wisdom and intelligence.
Let’s see what options the Imams could have had before Eid in the face of such an epidemic.

  1. They could have instructed the common Muslim people to observe Eid without heeding the administrative decision
  2. They could have remained silent waiting for the decision of the administration without doing anything
  3. Ordinary Muslims could be banned from celebrating Eid due to the epidemic
    If they had taken the first step, that is, if they had instructed the general Muslim public to observe Eid without heeding the administrative decision, and if the lockdown had been officially lifted before Eid, would ordinary Muslims in epidemic-ravaged West Bengal have celebrated Eid this year? Doubts about this remain. This is because several Muslim clerics have said more than once in the past that corona cannot enter the mosque. Furfura Sharif’s Peerzada also said that the corona virus will kill the ‘infidels’ selectively. But ordinary Muslims have seen from experience that these statements of the religious leaders did not come true. There has been a lot of infection through the mosques, and the infection has spread even among the preachers. Many imams have died after gathering in mosques in many states. As a result of these incidents, the credibility of the Imams has been shaken, albeit a little, for the ordinary Muslims. Ordinary people are realizing that even if the current lockdown is lifted, it will take a long time for public life to return to normal and it is not certain whether the previous normalcy will ever return. So if the Imams had instructed the general Muslims to observe Eid without heeding the administrative decision, many of them might have disobeyed the instructions of the religious leaders for fear of getting sick. At least that is a possibility. The ordinary devout Muslim who abides by the words of the Imam, when facing life and death situation, might have ignored the words of the Imam this year, in the interest of saving his life. So the imams could not take the political risk of starting the tradition of ignoring the instructions of the imams by the general Muslim society and for good reason. Once the example of disobeying them is established, the image of the Imams as God’s representatives will be tarnished and the fear psychosis will ignite. Imam Sahib did not personally take this risk. This is an account of their risk assessment and they have chosen to walk the risk-free path. There is nothing but political maturity in it.
    If they had taken the second option, that is, if they had remained silent in anticipation of the administration’s decision, they might have had the same duty as citizens of a secular state. But it is a fact that Muslim clerics have never, in any country, practiced secularism in making decisions about their own society or their own community. Leaving aside the so-called Islamic countries, Muslims and their clerics in other so-called secular or non-Islamic countries have forever limited their sense of secularism only to the extent that they need to take advantage of the state. True, from my own experience, secularism is probably not feasible in Islam. And in our country, no matter how much they seek constitutional secularism for their own benefit, it is probably an exaggeration to expect them to perform the duties of ordinary secular citizens in making decisions about the internal affairs of their own community. So it is not expected and it will not happen in this particular case. What was expected of the Muslim clerics has happened, meaning they could not sit idly waiting for an administrative decision. Earlier, they had written a letter to the government informing them of their communal position. Of course, even if they waited in silence when there is a lockdown, the general Muslim people would ask the imams to decide their duty. In that case, it would have been uncomfortable for the Imams to forbid them to observe the religious festival of Eid. Because this year the situation is unfavorable. Many Muslims have contracted Covid infection, and many have died. In this situation, despite the instructions of the Imams, many people might not have come to the gathering. As a result, the tradition of disobeying the imam in the general Muslim society, is a risk that the imams may not have been able to take in the interest of maintaining their socio-political dominance and prestige. On the other hand, if some of those who had come to Eid gatherings to follow the instructions of the Imams and got infected, the deep trust and faith in the religious leaders among the general Muslim people would be shaken. It is not possible for the Imams to take that risk. Whatever they mean to the ordinary blind, devout devotees, they know very well in their own minds that disease is not judged by religion. If a person, regardless of his religion, ignores the rules of hygiene and goes into contact with many other people, he is likely to get sick. In that case, it does not matter whether he is a Muslim or a disbeliever. No matter what other allegations may be made, there is little room for doubt that Muslim clerics are well-wishers of their community. Therefore, it may not have been possible for the Imams this year to direct the observance of Eid at the risk of the lives of many people. It was not possible before or after the government’s decision.
    The Imams have taken the third option very wisely. As a result, they did not have to face any question from ordinary Muslims, in addition, they received the support and admiration of so many people. The imams of West Bengal were able to improve their image by announcing the cancellation of the festival which had to be canceled this year anyway. As a political move, this move is undoubtedly intelligent but in line with their parallel sly socio-political agenda.
    After looking at the matter from the point of view of the Imams for so long, let us now look at it from the point of view of a non-Muslim Indian citizen. Imams dont want to celebrate EID this time is fair enough, but they could have kept that decision to themselves. Was it is necessary to write a letter to the Chief Minister and to get it announced it in a formal manner at a press conference? Let us find out the answer as to why it is necessary, in fact, the real motivation of this letter is hidden in that answer.
    From the statements of the Imams in the letter, it can be inferred that the Imams knew and approved that the Chief Minister of West Bengal was accustomed to the politics of Muslim-appeasement. Therefore, it was not difficult for the Imams to guess that the Chief Minister may take special steps in this state in view of Eid and may even think of easing or lifting the lockdown for Eid. But in the present circumstances, it should not be difficult for intelligent imams to understand that the responsibility for further transmission of Covid in the state in the future will fall directly on the Chief Minister and indirectly on the Muslim community. They had before them the example of the Tablighi Jamaat of Delhi. So they needed to inform the Chief Minister about their position in advance. But if they had only secretly informed the Chief Minister, it would have been difficult to inform all the common Muslims of the state in this lockdown that the Imams are collectively advising the Chief Minister to lockdown, as regular gatherings of Muslims are now slightly hampered. The general Muslim community is accustomed to follow the words of religious leaders, not the law of the land that is the parallel social political system of Muslim clerics. As a result, if the Chief Minister continues the lockdown during Eid without the advice of the Imams, the general Muslim public would not abide by the state government’s administrative decision and may take to the streets in violation of the Eid lockdown rules. We see that the tendency to disobey the laws of the country is very high amonst the general Muslim society. Probably the reason for this is that they follow the words of the Imams as law, not the law of the land. Imams may have been teaching them since childhood. But if Muslims disobey the laws of the land even during the epidemic and take to the streets on the occasion of Eid, it will result in more perceptive damage to the Muslim community, pressure will build up on the entire state and by the non-Muslims. It can be assumed that the Imams felt the need to stop this and expressed their views in a letter to the Chief Minister. The need to publicize the decision to the media is probably due to the fact that informing the media is the easiest way to get the message across to the Muslim community in every corner of the state. In addition, by informing the media, the message of unity between themselves and the Chief Minister was conveyed to the Muslim masses of the state as well as to the non-Muslim people in an effort to project a neutral image of themselves. It is a conscious two-way political endeavor that is highly mature and accountable. It would also allow for an escape route for the imams, if there was any law and order disturbance during Eid.
    In this context, it should be noted that people of a certain community in Telenipara, Chandannagar and Singur in Hughli and Chandipur in Malda became violent on the night of May 11, 2020. At the Quarantine Center in Singur, 45 out of 60 people from the Muslim community reported positive. When they were taken to the hospital, they started rioting, vandalism, mayhem, spitting, etc. They demanded that they be treated at the quarantine center, not at the hospital. Similar images can be seen in other places. Angered and frantic, the people of that particular community attacked and vandalized the houses, shops and even pharmacies of the Hindus in the area and tried to spread their infection among other people in the area. It is come to knowedge that among them were people returning from Azamgarh Sharif. In other words, even if the Imams write a letter to the Chief Minister asking him to continue the lockdown, there is no way to understand whether the imams are giving any other instructions to the people of his community. The incidents of communal violence in Hooghly and Malda districts on the day the imams’ letter was published in the media are indicative and suspicious. It is reasonable and obligatory to ask why the Imams are not able to prevent the non-cooperation of the people of that community with the treatment of the disease and the unwarranted aggression towards others in response to it.
    The Imams’ letter has brought the politics of Muslim-appeasement of the Chief Minister of West Bengal in the open. The question is, how long will the clergy run the chief minister of a secular Indian state? How long will a particular community place the words of their religious leaders above the law of the land? There is no need for theocratic religion in state work. How long will the Muslim community continue to abide by the directions of the Imams under the guise of secularism? When will they leave the subjugating to the Imams and join the mainstream of the state? There is an urgent need to remove the Muslim Personal Law Board from this country for the real welfare of the Muslim community.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.