সামনে থেকে পারদ দেখেছো কখনো
চকচকে চোখে আলোতে লুকোনো কিছু অজানা কাব্য।
না হলে ঘুমিয়ে পরে ঝাঁসির রানী অন্তরে ,ঘুম ভাঙে হুঙ্কার দেয়
হর হর মহাদেব।
কথা বলবো না ,উত্তর দেব না
আসলে সব কথা বলি নি কখনো আমি নিজের কাছে।

তাঁর ডাক নাম মানু, পিতার নিকট আদরের ছাবিলি , ভালো নাম মনিকর্ণিকা (Monikarnika)। 19 শে নভেম্বর 1827 সালে কাশীর ( বারাণসী) এক করাডে ব্রাহ্মন পরিবারে জন্ম নিলেন সেই তেজদীপ্ত শক্তি শালী এক নারী ….যিনি আজও জীবিত আছেন পৃথিবীর মানুষের মধ্যে এক জীবন্ত শক্তি রুপিনী হয়ে।

কোর্টের কার্যরত পিতার মাতৃ হারা এই কন্যা একটু বেশি স্বাধীন ভাবেই বড় হয়ে উঠছিলেন কাশীর বুকে। অশ্ব চালনা, অস্ত্র চালনা, আর্চারী শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি তাঁর বান্ধবীদেরকে নিয়ে নিজস্ব একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন

দিন যায় , বছর গড়িয়ে মনু বড় হয়। পিতা মরুপান্ত তাম্বে কন্যাদান করেন ১৮৪২ সালে ঝাঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাও নিওয়াকরের হাতে। তিনি হন ঝাঁসীর রানী। বিবাহের পর রাজ শ্বশুর গৃহে তাঁর নাম হয় লক্ষী বাই

সুখে দুখে বিবাহিত জীবন বেশ অতিবাহিত হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল বেশ কিছু গুপ্ত শত্রু। বিধাতা কারুর জীবনে সদা সুখ লিখে দেন না। বিশেষ করে যারা বৃহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ক্ষণজন্মা হন তাদের তো নয়ই। রানীরও তাই হল। তিনি একটি পুত্রের জন্ম দিলেন বটে, নাম হল দামোদর রাও (Damodar Rao)। কিন্তু ভাগ্য এর পরিহাসে চারমাসের কচি শিশুটি ঈশ্বরের প্রিয় হল।

পুত্র শোক ভুলতে রাজা এবং রাণী উভয়েই আনন্দ রাওকে দত্তক নেন। আনন্দ রাও ছিলেন গঙ্গাধর রাওয়ের জ্যেঠাতো ভাইয়ের ছেলে। জীবিত থাকা অবস্থায় ঝাঁসীর রাজা তার পুত্রের মৃত্যু রহস্য কখনো উদঘাটন করতে পারেননি। ঝাঁসীর মহারাজা গঙ্গাধর রাও ২১ নভেম্বর, ১৮৫৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন

এদিকে বিদেশি শক্তি তখন ভারতের মাটিতে তার আসর সাজিয়ে বসেছে। দেশীয় রাজ্য গুলিকে গ্রাসের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসী’র স্বত্ত্ব বিলোপ নীতি গ্রহণ করল। তার স্বীকার হলেন রানী। ফলত ঝাঁসীর সিংহাসন নিয়ে প্রতিবন্ধকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ঝাঁসীর রাণীর নামে বার্ষিক ৬০,০০০ টাকা ভাতা হিসেবে মঞ্জুর করা হয় এবং ঝাঁসীর কেল্লা পরিত্যাগ করার জন্য হুকুম জারী হয়।

এই দিকে ১৮৫৭ সাল ,লি ইনফিল্ড রাইফেলের আচ্ছাদনে শুকরের মাংস এবং গরুর চর্বি ব্যবহার করা হয় , এই ইস্যু কে ভিত্তি করে শুুরু হয় সিপাহী বিদ্রোহ।

ঐ সময়ে লক্ষ্মী বাঈ তার বাহিনীকে নিরাপদে ও অক্ষত অবস্থায় ঝাঁসী ত্যাগ করাতে পেরেছিলেন। সমগ্র ভারতবর্ষব্যাপী প্রবল গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই চরম মুহুর্তে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অন্যত্র মনোযোগের চেষ্টা চালায়। লক্ষ্মী বাঈ একাকী ঝাঁসী ত্যাগ করেন।

তার নেতৃত্বে ঝাঁসী শান্ত ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রয়েছিল। হলদী-কুমকুম অনুষ্ঠানে ঝাঁসীর রমণীরা শপথ গ্রহণ করেছিল যে, যে-কোন আক্রমণকেই তারা মোকাবেলা করবে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণকে তারা ভয় পায় না।

সিপাহী বিপ্লব (Sepoy Revolution) অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে ঝাঁসি । রানী লক্ষীবাঈ বিক্ষুব্দ সৈনিকদের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংহত করতে থাকেন। অন্যান্য স্থানীয় রাজাদের সাহায্য কামনা করেন।

রানী লক্ষীবাঈ নিয়মিত সৈন্যের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলতে থাকেন। যে সৈন্যবাহিনীতে নারীরা যোগ দিয়েছিল। অভিজ্ঞ সেনাধ্যক্ষরা রানীর পাশে দাঁড়াল।

স্যার হিউ রস- এর নেতৃত্বে ১৮৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ সৈন্যরা ঝাঁসির অভিমূখে এগুতে থাকে। রানী অত্যন্ত কার্যকরী এক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলেন। ব্রিটিশরা ঝাঁসি অবরোধ করে। ২ সপ্তাহ ধরে চলে সংঘর্ষ। ব্রিটিশরা ঝাঁসি দূর্গে ভয়াবহ গোলা বর্ষন করতে থাকে ।

ঝাঁসি অবরোধকালে নারীরা সৈন্যদের জন্য খাদ্য ও অস্ত্রবহন করে। স্বয়ং রানী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করেন। অবশ্য মাত্র ১,৫৪০ সুশৃঙ্খল সৈন্য নিয়ে ব্রিটিশরা ঝাঁসি দখল করে নেয়। রানী পুরুষের ছদ্মবেশে রাতে অন্ধকারে সেই দত্তক পুত্রটিকে নিয়ে দেওয়াল টপকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন, যে ছেলেটিকে ঝাঁসির সিংহাসনে বসানোর জন্য জীবন বাজী রেখেছিলেন

ব্রিটিশরা ঝাঁসি জয় করে বাবা মরোপান্ত তামবে কে ফাঁসি দেয়! এবং রাজ্যটিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

লক্ষীবাঈ কালপি নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। অন্যান্য বিদ্রোহীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। …এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন তাতয়া তোপি। যা হোক। ব্রিটিশরা ঘিরে ফেলছিল। আর যুদ্ধ করে জেতা সম্ভব হচ্ছিল না। ব্রিটিশরা উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী। বিজ্ঞানকে তারা ব্যবহার করেছে মারণাস্ত্র তৈরির কাছে

… ঐ বছরই ১৭ জুন লক্ষীবাঈ গোয়ালিয়র যুদ্ধে নিহত হন।

তিনি পুরুষবেশে ছিলেন। তাঁর অনুগত সৈন্যরা মৃতদেহটি গোপনে সরিয়ে ফেলে দ্রুত চিতায় তুলে দেয়। কেননা, ব্রিটিশ সৈন্য কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। লক্ষীবাঈ সম্বন্ধে এক ইউরোপীয় উৎসে বলা হয়েছে …

Because of her bravery, courage, and wisdom, and her progressive views on women’s empowerment in 19th century India, and due to her sacrifices, she became an icon of Indian independence movement. The Rani was memorialized in bronze statues at both Jhansi and Gwalior, both of which portray her on horseback.

দুর্গেশনন্দিনী

তথ্যঃ

The Rani of Jhansi
By Ishaan Tharoor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.