শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন চলে মাত্রাছাড়া। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অতীষ্ঠ মহিলারা এ বার সরাসরি যে কোনও আশ্রয় থেকেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮এ ধারায় বধূ নির্যাতনের মামলা করতে পারে সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে মঙ্গলবার।
দেশের শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, পণের দাবি-সহ নানা দিক দিয়েই বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে মহিলাদের উপর নির্যাতন চলে। গৃহহিংসার অভিযোগ কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করেন, আবার কেউ মুখ বুঝে সহ্য করে বিপদ ডেকে আনেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে বিতাড়িত হলে বা চলে যেতে বাধ্য করা হলে সেই মহিলাদের ঠাঁই হয় নিজের মা, বাবার কাছে, আবার অনেককেই আশ্রয়ের খোঁজে হয়রান হতে হয়। বন্ধু, আত্মীয় বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দ্বারস্থ হতেও দেখা যায় অনেককে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যেত অপরাধস্থল থেকেই মহিলারা বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করতেন। আগের রায়গুলিতে ৪৯৮এ ধারার প্রয়োগ নিয়ে আইনি সংজ্ঞা অনুযায়ী একটা অস্পষ্টতা থেকে গেছিল। সেই অস্পষ্টতা দূর করে মেয়েদের স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এ বার থেকে মহিলারা যে কোনও সময়, যে কোনও আশ্রয় থেকেই ৪৯৮এ ধারার প্রয়োগ করতে পারেন। মামলাটির গুরুত্ব খতিয়ে দেখে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবে আদালত।
১৯৮৩ সালে ফৌজদারি আইনে ৪৯৮-ক ধারাটি যুক্ত হওয়ার পর থেকেই তার বিরোধিতা শুরু হয়। দাবি করা হয় যে, সামান্য কারণে, শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে কোনও বধূ অভিযোগ আনলে স্বামী-শ্বশুরকে অযথা হয়রান করে পুলিশ। এমনকি এও দাবি ওঠে যে, ৪৯৮-ক ধারাটি অসন্তুষ্ট স্ত্রী তাহার শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে ‘অস্ত্রস্বরূপ’ ব্যবহার করছে। এর অপব্যবহারের ফলে ‘আইনি সন্ত্রাস’ ছড়িয়ে পরিবারতন্ত্রের ভিত নষ্ট হতে পারে।
৪৯৮-এ ধারার অপব্যবহার হচ্ছে, এই ধরনের বহু অভিযোগ পেয়ে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ হিসেবে কিছু নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল বধূ নির্যাতনের মামলায় প্রতিটি জেলায় এক বা একাধিক ‘পরিবার কল্যাণ কমিটি’ গঠন করে অভিযোগ যাচাই করতে হবে। তারপরেই আইনি পথে গ্রেফতারি হতে পারে। তবে মারধর এবং মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতারিতে কোনও বাধা নেই। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ সেই নির্দেশিকাকে খারিজ করে দেয়। বলা হয় পণের দাবিতে বধূ নির্যাতনের সংখ্যাই বেশি, তা ছাড়া অন্য কারণও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনও কমিটির দ্বারস্থ না হলে সরাসরি পুলিশ তদন্ত করে বিষয়টি দেখতে পারে। বিশেষত ৪৯৮এ-এর ক্ষেত্রে যেখানে ফৌজদারি অপরাধ জড়িত, সেখানে অন্য কমিটি ঢুকে পড়লে পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য লঘু হয়ে যেতে পারে।
সমীক্ষা বলছে, ভারতে বিবাহিত মহিলাদের চল্লিশ শতাংশই কোনও না কোনও নির্যাতনের শিকার। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ২০১২-তে পণের দাবিতে বধূনির্যাতনের অভিযোগে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৬২ জন স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোক গ্রেফতার হন। তবে বেশির ভাগ মেয়েরাই নিরুপায় না হয়ে ৪৯৮এ ধারায় মামলা করে না।