~~~তৃতীয়~~~
।।দেবী বঙ্গেশ্বরীর মন্দির, সেবায়েত ও পূজারী।।
মন্দিরের উত্তর দিকে অবস্থিত হাজরা পুকুরটি দীর্ঘদিন ঘোষেদের নামে নথিভুক্ত আছে । নবকলেবর নির্মাণকালে মূল মন্দিরের পাশে তালপাতার ছাউনি দেওয়া একটি অস্থায়ী কক্ষে দেবীর ঘট বসিয়ে পুজো করা হয় । তবে নবকলেবরে প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় পুরাতন ঘট হাজরা পুকুরে ডুবিয়ে গর্ভগৃহে নতুন ঘট স্থাপন করা হয় । যাগযঞ্জ সহ প্রাণপ্রতিষ্ঠার উৎসব #সয়লা নামে পরিচিত।
মন্দিরের প্রাচীন নথিপত্র ঘেঁটে জানতে পারা যায় ১৩৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ, ১৩৬১ বঙ্গাব্দে রায়বাহাদুর দেবেন্দ্রনাথ মিত্রের অর্থানুকূল্যে এবং ১৩৯০ বঙ্গাব্দএ তৎপুত্র সমরেন্দ্র মিত্র ও সৌরিন্দ্র মিত্রের অর্থানুকূল্যে নবকলেবর নির্মিত হয়েছিল । শেষ দুবার মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন জঙ্গিপাড়ার নিকট মথুরাবাটি গ্রামের সূত্রধর সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট শিল্পী মদন শীল। তার পূর্বের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন মদন শীলের পিতা সুদক্ষ প্রসাদ শীল।
প্রথম নির্মাণ শিল্পের নাম জানা যায় না কারণ মন্দিরের অধিক প্রাচীন কাগজপত্রাদি হদিশ পাওয়া যায় না। তবে আঁটপুর মিত্র বংশের তৃতীয় শাখার উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব রায় বাহাদুর দেবেন্দ্রনাথ মিত্রের পিতামহ অন্নদা প্রসাদ মিত্রের সময় বঙ্গেশ্বরী দেবী ও বোমনগর গ্রামের প্রতিষ্ঠান হয়। প্রতিষ্ঠাসন আনুমানিক ১৮৫০ থেকে ৬০ খ্রিস্টাব্দ।
প্রায় সমকালে প্রথম শাখা প্রসন্ন কুমার মিত্রের স্বপার্জিত অর্থে আটপৌরে রাসমঞ্চ, সদরবাটির প্রাচীর ও সিংহদ্বার, বড় পুষ্করিণীর পাকা ঘাট নির্মাণ অনেকগুলি সংস্কার কার্য করে বংশের গৌরব রক্ষা করেছিলেন । মথুরামোহন মিত্রের জ্যেষ্ঠপুত্র অন্নদাপ্রসাদ মিত্র কতৃক বোমনগরের প্রতিষ্ঠার কোনো তথ্যনির্ভর লিখিত প্রমাণাদি নেই। বর্তমান পরচাগুলিতে মন্দিরের উত্তরাধিকারীদের নাম উল্লেখ করা আছে।
প্রতিষ্ঠাতার নাম সুচিহ্নিত করা নেই। তবে মন্দির এর গঠন, স্থাপত্য ও বিগ্রহের নামকরণ এবং মূল বিগ্রহের সঙ্গে পরিকর দেব দেবীর উপস্থিতি লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে দেবীর প্রতিষ্ঠার উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ এর পূর্বে হওয়া সম্ভব নয়। বর্তমানে বঙ্গেশ্বরীর সেবায়েত মিত্র বংশের দুজন।
দেবীর পূজার পৌরহিত্য করে বোম নগর নিবাসী শান্তি বটব্যাল এবং জাঙ্গিপাড়া নিবাসী গোপাল চক্রবর্তী এবং সন্তোষ চক্রবর্তী । বটব্যালরা পশ্চিমবঙ্গীয় রাঢ়
ব্রাহ্মণ ও গোত্র শান্ডিল্য । বটব্যাল বংশের রামগতি বটব্যাল প্রথম পূজার অধিকার পান । সেই থেকে বংশানুক্রমে বটব্যাল এখানে পূজা করে আসছেন।
চার পুরুষ ধরে মন্দিরের স্বচ্ছতার দায়িত্ব পালন করছেন পরামানিক সম্প্রদায়ের বীণাপাণি দাস এর পরিবারবর্গ। এনাদের সবাইকেই নিয়োগ করে গেছেন মিত্র বংশের পূর্বপুরুষ । পূর্বে দেবত্তর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২২ বিঘা যা এখন ১০ বিঘা জমিতে দাঁড়িয়েছে।
বোমনগরে দালান আকৃতি বঙ্গেশ্বরী মন্দির। এটি ২০ ফুট ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ,প্রস্থ ১৯ ফুট , ১৩ ফুট উচ্চতা। ভিত্তিভূমি থেকে চাতালের উচ্চতা ২ ফুট । সমুখস্থ চাতালের প্রস্থ ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি । দুইটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি সোপান অতিক্রম করে টিনের চালে আচ্ছাদিত চাতালে প্রবেশ করা যায় । হাতেখানেক তফাতে চারটি স্তম্ভ বিশিষ্ট নাটমন্দির টির দৈর্ঘ্য কুড়ি ফুট ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি , উচ্চতা ১২ ফুট ।উপরে টিনের চালের আচ্ছাদন ।দক্ষিণমুখী মূল মন্দিরের প্রবেশ অংশটি ত্রিখিলান বিশিষ্ট ,দুটি চতুষ্কোণ পূর্ণস্তম্ভ , অনুরূপ অর্ধস্তম্ভ বিশিষ্ট। অনালঙ্কৃত মন্দির গাত্রের রং হলুদ । কড়িবর্গা শোভিত গর্ভগৃহের ৬ ইঞ্চি উচ্চতাযুক্ত একটি দুই থাকের বেদীর উপর দেবী অধিষ্ঠিতা।
দুর্গেশনন্দিনী
(ক্রমশ)