করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিস্থিতিতে যখন বিশ্ব বাণিজ্যে বড় ধরনের আঘাত লেগেছে। এবং উৎপাদনশীল দেশ চিনের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা হলেও নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে। ঠিক সেই পরিস্থিতি স্বদেশী উৎপাদনের উপর জোর দিয়ে অর্থনৈতিক চাকা ঘোরানোর দাওয়াই দিতে চাইলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর পরামর্শ, স্বদেশী উৎপাদনের উপর যেমন জোর দিতে হবে, তেমনই বিদেশে উৎপাদিত বস্তুর উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। এ ভাবেই নতুন উন্নয়নের মডেল গড়ে তুলতে হবে বলেই তাঁর মত।
ভাগবত বলেন, “সঙ্কট এসেছে, সঙ্কট কেটেও যাবে। কিন্তু সঙ্কট মিটে গেলে দেশকে স্বাবলম্বী হতে হবে। রাষ্ট্র পুনর্নিমাণের কাজ চলছে। তার জন্য দেশের প্রতি স্বাভিমান জাগাতে হবে। স্বদেশী ভাবনা জাগাতে হবে। কৃষি, শিল্প, সব ক্ষেত্রেই বিদেশের উপরে নির্ভরতা কমাতে হবে।”
স্বদেশী জাগরণ আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের মতাদর্শেই রয়েছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে উদারীকরণের বাজারে সেই মতাদর্শের বাস্তবে প্রতিফলন এতোদিনে খুব একটা হয়নি। এমনকি অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee) জমানায় বা এখন নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) জমানাতেও সেই লক্ষ্যে খুব বেশি সুবিধা করে উঠতে পারেনি সঙ্ঘ পরিবার। কারণ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুকূল ছিল না। বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক আদানপ্রদানের যে পরিবেশ মুক্ত অর্থনীতিতে গড়ে উঠেছে, তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন ধারা নেওয়া সম্ভবও ছিল না।
কিন্তু সঙ্ঘ প্রধানের মতে এখন করোনা সংকট নতুন করে উত্থানের নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁর কথায়, যে সংকট তৈরি হয়েছে তা কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যেমন, যে পরিযায়ী শ্রমিকরা শহর থেকে গ্রামে ফিরে গিয়েছেন, তাঁরা করোনা সংকট কেটে গেলে ফের কি শহরে ফিরবেন? ফিরলেও কি তাঁরা কাজ পাবেন? কারণ, শহরে ব্যবসা,বাণিজ্য, কাজ-কর্মও তো বন্ধ হয়ে রয়েছে। তা হলে? সে ক্ষেত্রে তাঁদের গ্রামে কর্মসংস্থানের জন্য কী সুযোগ তৈরি করা যায় তা ভাবতে হবে। স্বদেশি উৎপাদন বাড়াতে হবে।
মোহন ভাগবতের (Mohan Bhagwat) কথায়, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে যত বেশি সম্ভব স্বদেশি বস্তুর ব্যবহার বাড়াতে হবে। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, তা হলে বাজারে স্বদেশি বস্তুর চাহিদা বাড়বে। তা উৎপাদন করে জীবিকা চলতে পারে বহু মানুষের। তবে তিনি এও বলেন, স্বদেশে উৎপাদিত বস্তুর সেই গুণমান সঠিক হতে হবে। এটা উৎপাদক, নির্মাতা, কারিগর সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। উৎপাদিত বস্তুর গুণমান নিয়ে কোনও আপস করলে চলবে না।
এ দিন নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরে বসে আরএসএস প্রধান সমস্ত স্বয়ংসেবকদের উদ্দেশে এই বার্তা দেন। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারণে পরিবেশ আগের থেকে অনেক শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে কোন কোন কাজ আর না করলে পরিবেশ শুদ্ধ থাকে তা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। জলের ব্যবহার ঠিকমতো করতে হবে, জলের সংরক্ষণ করতে, বনসৃজণ করতে হবে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে হবে এবং স্বচ্ছতা পালন করতে হবে। জৈব সারের মাধ্যমে ফসলের আরও বেশি উৎপাদন এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানোর কথাও বলেন তিনি। মোহন ভাগবতের কথায়, “করোনা-উত্তর পুনর্নিমাণের সময়ে জল সংরক্ষণ, জৈবিক পদ্ধতিতে কৃষির বিস্তার, গোরক্ষা, প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশ, স্বচ্ছতা ইত্যাদির উপরে জোর দিতে হবে।” শুধু শিল্প বা কৃষি নয়, রাজনীতি, প্রশাসন, সমাজ জীবন সবক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা রক্ষা করতে হবে। সমাজে শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।” করোনা সঙ্কট মোকাবিলার পরে এক নতুন ভারতের উত্থান হবে বলেও এদিন আশা প্রকাশ করেছেন মোহন ভাগবত।
সেই সঙ্গে সঙ্ঘ প্রধান বলেন, করোনা সংকট আমাদের আরও একটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তা হল, নাগরিক অনুশাসন মেনে চলা। যেখানকার মানুষ নাগরিক অনুশাসন মেনে চলেননি সেখানেই সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। যাঁরা অনুশাসন মেনে চলেছে, তাঁদের এলাকায় পরিস্থিতি অনেক ভাল। এদিন সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকদের আরও বেশি করে ত্রাণ কাজে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ভাগবত বলেন, “সঙ্ঘের কার্যক্রম বন্ধ আছে কিন্তু কার্য বন্ধ নেই।” ভাগবত বলেন, সকলকে সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার শিক্ষা নিতে হবে। নাগরিক অনুশাসনের পালনই হল আসল দেশপ্রেম।