৮ নভেম্বর ২০১৬। রাত ৮টা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটা ঘোষণায় বদলে গিয়েছিল ভারতের আর্থিক কাঠামো। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। তার বদলে বাজারে এসেছিল ২০০০ টাকার নোট। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, এত বড় টাকা নিয়ে বাজারে লেনদেন করা সমস্যার। আর বেশিরভাগ এটিএম থেকে ২০০০ টাকার নোটই সবথেকে বেশি পাওয়া যেত। কিন্তু সেই নোটই নাকি এখন বাজারে অমিল। উনিশের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তত উধাও হয়ে যাচ্ছে এই ২০০০ টাকার নোট। কী এমন হলো যে হঠাৎ করে দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না এই নোটের?
২০০০ টাকার নোট কমে যাওয়ার পিছনে অর্থনীতিবিদরা প্রধান দুটি কারণের কথা উল্লেখ করছেন। প্রথমত, ভোটের আগে বড় নোট মজুত রাখা ও দ্বিতীয়ত, বড় নোটের চাহিদা কমে যাওয়া।
ভোটের আগে ২০০০ টাকার নোট ছাপা বন্ধ ও মজুত রাখা:
এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তা জানিয়েছেন, “সাধারণ মানুষের চাহিদার কথা ভেবে আমরা ছোট অঙ্কের টাকা বেশি পরিমাণে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ফলে ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটের বেশি লেনদেন হচ্ছে।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, জানুয়ারি মাসের পর থেকে ২০০০ টাকার নোট ছাপা বন্ধ করে দিয়েছে আরবিআই। কিন্তু তারপরেও বাজারে থাকা ২০০০ টাকার বেশিরভাগ নোট মজুত করে রাখা হয়েছে। ভোট সামনে থাকায় এই বড় অঙ্কের টাকাকে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, “বাজারে ২০০০ টাকার লেনদেন হঠাৎ করেই কমে গিয়েছে। এখন আর নতুন করে এই নোট ছাপা না হলেও ইতিমধ্যেই বাজারে বিশাল পরিমাণে এই নোট রয়েছে। কিন্তু সেগুলোও লেনদেন হচ্ছে না।” তাঁর আরও বক্তব্য, “নির্বাচনের সময় সাধারণত এটা হয়ে থাকে। কিন্তু এত বেশি পরিমাণ টাকা মজুত করে রাখা হয়েছে, যে মনে হচ্ছে টাকার ঘাটতি হয়েছে।” যদিও আরবিএই-এর অন্য এক উচ্চপদস্থ কর্তার বক্তব্য, টাকার কোনও ঘাটতি নেই।
২০০০ টাকার নোটের চাহিদা কমে যাওয়া:
বড় অঙ্কের টাকার চাহিদা কমে যাওয়াও একটা অন্যতম কারণ, এমনটাই বক্তব্য তাঁদের। স্টেট ব্যাঙ্কের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, জানুয়ারি মাস পর্যন্তও বড় অঙ্কের টাকার চাহিদা মানুষের মধ্যে বেশি ছিল। বাজারে থাকা টাকার প্রায় ৭৮ শতাংশ টাকা ছিল ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোটের। কিন্তু গত তিনমাসে এই চাহিদা অনেকটাই কমেছে। চাহিদা কমে যাওয়ার ফলেই ব্যাঙ্কগুলিও চেষ্টা করছে ছোট অঙ্কের নোটের লেনদেন বেশি করতে। আবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক উচ্চপদস্থ কর্তার বক্তব্য, “এই নতুন ২০০০ টাকারও জাল নোট ছড়িয়েছে বাজারে। আর তাই আরবিআই নিজেদের কাজ করছে। সাধারণ মানুষের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।”
এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ব্যাঙ্কগুলিও চেষ্টা করছে এটিএম মেশিনে যতটা বেশি সংখ্যক ছোট অঙ্কের নোট ঢোকানো যায়। কনফেডারেশন অফ এটিএম ইন্ডাস্ট্রির ( ক্যাটমি ) এক কর্তা জানিয়েছেন, এটিএম-এ ২০০০ টাকার নোটের পরিমাণ কমে গিয়েছে। বেশিরভাগ এটিএম-এই ২০০০ টাকার ক্যাসেটে ২০০ টাকার নোট ব্যবহার করা যায় কিনা, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্যাটমির ডাইরেক্টর ভি বালাসুব্রমন্যন জানিয়েছেন, “২০০০ টাকার নোটের যোগান কমে গিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ এটিএম-এ ২০০ টাকার নোট রাখার ক্যাসেট নেই। ফলে বারবার টাকা ভরা হচ্ছে।” সাধারণত একটি এটিএম মেশিনে চারটি ক্যাসেট থাকে। একটিতে ১০০ টাকার নোট, একটিতে ২০০০ টাকার নোট ও বাকি দুটিতে ৫০০ টাকার নোট রাখা হয়। এই মেশিনগুলিতে ২০০০ টাকার ক্যাসেটের জায়গায় ২০০ টাকার ক্যাসেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে।