১৪ই এপ্রিল‚ ২০২০ তে প্রধানমন্ত্রীর (The Prime Minister) ভাষনের পর আমরা সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম যে‚ এই “চীনা ভাইরাস ” এর জন্যে আমাদের সবাইকে কমপক্ষে ১৫ দিনের জন্য নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে ও চারপাশের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে হবে। আমরা আরও জেনেছিলাম যে স্থানীয় পরিস্থিতির ও অবস্থার গুরুত্ব সাপেক্ষে “সামাজিক দূরত্ব” ও ” কোয়েরেন্টাইন ” (Quarantine) আরও বাড়ানো হতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টিতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। “জীবন বনাম জীবিকা” এর ন্যারেটিভ অনুসারে ভারতের অবস্থান মোটেও দ্বার্থ্যবোধক বা নিরপেক্ষ নয়। বরং নির্দ্বিধায় ও নিঃসন্দেহে ভারতের অবস্থান জীবিকার পক্ষে। সময়‚ সংস্থান ও বর্তমানে ভারত যে গম্ভীর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তার সাপেক্ষে এই অবস্থান নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হতেই পারে। যাইহোক‚ আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা বুঝতে পারছি যে নতুন উদীয়মান ওয়ার্ল্ড অর্ডারে এটাই ভারতের নিয়তি।

আমাদের ছোটোবেলা থেকেই‚ বা এই যে এখন আমরা জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি‚ আমাদের জ্বর হয়েছে এমন মনে হলেই আমরা কখনোই হুটহাট করে যেকোনো ওষুধ খেয়ে নিইনা। প্রথমে আমরা শরীরের তাপমাত্রা মাপি‚ জ্বরের কারণ বিশ্লেষণ করি‚ অবস্থা কতটা গুরুতর তা বুঝি ও তারপর জ্বর কমানোর ব্যবস্থা নিই। সংক্ষেপে বলতে গেলে আমাদের নিজেদেরই নিজের “হেলথ কার্ড” হতে হবে যাতে সবসময়‚ সব পরিস্থিতির জন্যই প্রয়োজনীয় তথ্য থাকবে। এখন আমরা যদি একই উপমা আমাদের ব্যবসার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যবহার করি তবে সেখানে কোন প্যারামিটারগুলি পরীক্ষা করা প্রাসঙ্গিক হবে? কোন বিষয় গুলি আমাদের
বিবেচনায় রাখতে হবে? কোন দিকগুলি নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন? আসুন ব্যবসার প্রধান বিষয় গুলো দেখা যাক।

বিষয়বস্তুগত অবস্থা

আমি তাৎক্ষণিক ভাবে নগদ অর্থে রূপান্তরিত করতে পারবো এমন এফজি ( সমাপ্ত পণ্য ) স্টকের মূল্য বর্তমানে কত ?

এই কাঁচামাল স্টক কত দিন / মাস / ঘন্টা থাকবে ?

আমরা কখন কাঁচামাল স্টকের থেকে মুক্তি পাব?

আমাদের সরবরাহকারীর খবর কি? তার পরিস্থিতি এখন কেমন?

অর্থনৈতিক অবস্থা

কতটা আউটফ্লো আমি আশা করতে পারি? কাদের থেকে আমি ঋণ চাইতে বা ঋন পেতে পারি।

আমার প্রত্যাশিত ইনফ্লো কি? আমরা কিভাবে সেটা বাড়াতে পারি? রিকভারি গুলো তাড়াতাড়ি পেতে পারি?

যদি আমরা সুদ এবং ইএমআই দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় পাই তবে তা আমার জন্য কতটা সহায়ক হবে?

আমাদের কি অতিরিক্ত কাজের মূলধন দরকার? যদি তাই হয়, আসলে তা কত?

কোন ব্যাংক আমাদের ঋণ দিতে প্রস্তুত আছে? তাদের শর্তাবলী কি আমার ব্যবসায়ের পক্ষে অনুকূল?

জনবল অবস্থা

আমার সমস্ত কর্মচারীরা কি নাগালের মধ্যে আছে বা তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে? তারা কি একই শহরে আছে নাকি তারা তাদের নিজেদের শহর / গ্রামে চলে গেছে?

এই মূহুর্তে যে কাজটি চলছে তাতে আমার দলের সদস্যরা কী এখনও একসাথে হয়ে কাজ করছে নাকি ভবিষ্যতের জন্যে কোনো পরিকল্পনার করছে?

আমায় কি নতুন বিকল্প ও নতুন জনবলের কথা ভাবতে হবে? তাদের প্রশিক্ষণের কি ব্যবস্থা হতে পারে?

আমার কর্মীদের আরাম, মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাদের আশেপাশের পরিস্থিতি কেমন?

স্পষ্টতই আমাদের হাতে ১৫ দিন আছে ও এই সময়টিকে আমাদের সংস্থান ও সম্পদ নিয়ে চিন্তাভাবনা‚ একত্রীকরণ ও সমন্বয়সাধনের জন্য কাজে লাগাতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের তৈরী থাকতে হবে। এই জন্য আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা‚ কল্পনা আর জ্ঞান দিয়ে একাধিক এক্সেল শীট তৈরী করবো ও জটিল সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে পারমুটেশন ও কম্বিনেশনর সাহায্যে বহুবিধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবো। এইভাবে আমরা বিপদে পড়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবো। আর সেই অথৈ জলে ডুববো না যার মধ্যে আমরা বিগত ৪ সপ্তাহ ধরে সাঁতরে চলেছি। যখন খুব দ্রুত সবকিছু শাট ডাউন শুরু হবে‚ তখন আমাদের অন্তত একটা গাইডলাইন থাকবে। যে কিভাবে এই বিপদের ভেতর থেকে মুক্তির দরজা খুঁজে পাবো। এখন আমাদের এই ধরনের আরো অনেক নিবন্ধে এই জাতীয় বিষয় গুলি নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত।

বিখ্যাত মৌলিক ব্যবস্থাপনার সূত্রে যা বলা আছে তা আমরা আপনাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে পারি… আপনি যদি “নিয়ন্ত্রণ” করতে চান তবে প্রথমে এটিকে মেপে নিন। ……………

অজিঙ্ক্য কুলকার্ণী (Ajinkya Kulkarn)


https://blog.newsbharati.com/Encyc/2020/4/16/If-you-want-to-control-it-measure-it-first-.html

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.