উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আরও এক নার্সের করোনা সংক্রমণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তরে। পাশাপাশি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক মহলের একাংশ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নার্স আইসোলেশন এবং রেসপিরেটরি ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় কর্মরত ছিলেন। হাসপাতালের পাশে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে ওই নার্সের জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাকে তৎক্ষনাৎ আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে হাসপাতালের ভাইরাস রিসার্চ এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে সোয়াব টেস্ট হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপরই তাঁকে করোনা হাসপাতালের জন্য অধিগৃহীত মাটিগাড়ার হিমাচল বিহারের নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়।
প্রসঙ্গত, একইভাবে ওই হাসপাতালের আরও এক নার্স সংক্রমিত হয়েছিলেন এবং তিনিও মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যদিও ওই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, নার্সিংহোম অধিগ্রহণ করে করোনা হাসপাতাল তৈরিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে নার্সিংহোমের দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ঘটনায় আরও এক নার্সিংহোম কর্মীর উদ্দেশ্যে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বিক্ষোভকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের উসকানো এবং নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকারের দাদা অশ্বিনীকুমার সরকারকে গ্রেপ্তার করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ (Siliguri Police) কমিশনারেটের মাটিগাড়া থানার পুলিশ। ওই একই অভিযোগে দীনবন্ধু অধিকারি নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শিলিগুড়ি সংলগ্ন কাওয়াখালির নার্সিংহোমের অনুপম দে এবং বিজন তালুকদার নামে দুই কর্মীকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রবিবার মাঝরাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দার্জিলিং (Darjeeling) জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি প্রধাননগরের একটি নার্সিংহোম অধিগ্রহণ করে করোনা হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। ও কিন্তু ওই এলাকাটি ঘন জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা করোনা ছড়ানোর আশঙ্কায় বিক্ষোভ করে। ফলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয় স্বাস্থ্যদপ্তরকে। পরবর্তীতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন কাওয়াখালির আরেকটি নার্সিংহোম অধিগ্রহণ করে করোনা হাসপাতাল তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বিষয়টি চাউর হতেই রবিবার রাতে এলাকাবাসীরা একই আশঙ্কায় ওই নার্সিংহোমের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে।
এছাড়া জানা গিয়েছে, নার্সিংহোমটি অধিগ্রহণের জন্য দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) জেলাশাসক এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক একাধিকবার লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোন উত্তর দেয়নি এবং অনিহা প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের একাংশ বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনে উসকানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। যদিও ওই নার্সিংহোমকেই করোনা হাসপাতাল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, “নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রোগীদের স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষ হলেই যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
শিলিগুড়ি পুলিশ (Siliguri Police) কমিশনারেটের ডিসিপি (জোন,২-পশ্চিম) কুনওয়ার ভুষন সিং (Kunwar Bhushan Singh) বলেন, “নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ একাধিকবার জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের বাধা দিয়েছে। এরপর জেলাশাসকের অভিযোগের ভিত্তিতেই চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিপর্যয়ের সময় সরকারকে সহযোগিতা না করা অপরাধ।” শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার বলেন, “মাঝরাতে দাদাকে মাটিগাড়ার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়। পুলিশ যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।” শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “আতঙ্কে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ করছেন। তাদের গ্রেপ্তার করা উচিত নয়। বিক্ষোভকারীদের সচেতন এবং সতর্ক করা উচিত ছিল পুলিশের।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (Medical College and Hospital) আইসোলেশন ওয়ার্ডে তিনজন করোনা সন্দেহে ভর্তি রয়েছে। মঙ্গলবার তাদের সোয়াব টেস্ট হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে ছয় জন করোনা সংক্রমিত রোগী ভর্তি রয়েছেন। অন্যদিকে, রবিবার কালিম্পংয়ের গরুবাথান ব্লক থেকে বিহারের পাচ শ্রমিক বাড়ি ফিরতে গেলে পরিবার সমেত তাদের আটক করে কালিম্পং জেলা পুলিশ। ওই ১৪ জনের শারীরিক পরীক্ষার পর গরুবাথান ব্লকের আপার ফাগুতে অবস্থিত আইটিআই কলেজের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।