তেলেঙ্গানাতে (Telangana) করোনা (Corona) আক্রান্ত-এর সংখ্যা ১২৭ ছাড়িয়েছে। ভারতের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্য হলেও, তেলেঙ্গানার রাজ্য স্তরের মন্ত্রীদেরকে ২রা এপ্রিল হৈ হৈ করে শ্রী সীতা রামচন্দ্র স্বামী মন্দিরে রাম নবমী পালন করতে দেখা গেছে।
শোলাপুরে পুলিশ যখন রথযাত্রা বন্ধ করার চেষ্টা করছিল, ভক্তরা মিছিলে বাধা দেবার জন্য পুলিশের উপর পাথর বৃষ্টি করেন।
এই সমস্ত সভা এবং অনুষ্ঠানের সমালোচনা হবেই, কারণ এগুলোর জন্যই কোটি কোটি লোকের জীবনের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে। এসব সভার সমালোচনা করা আর মহামারীর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা খোঁজা, মোটেই এক জিনিস নয়। কিন্তু যদি হিন্দুরা এসব ন্যায্য সমালোচনাকে “হিন্দু ধর্মের উপর আক্রমণ” বলে ধরে নেয় এবং এগুলোর সমর্থন করা শুরু করে; তাহলে সেটা অবশ্যই মহামারীতে সাম্প্রদায়িক রং লাগানো।
এখানে সমস্যাটা তাবলীগি জামাত বা ওদের সন্ত্রাসবাদী কাজের সাথে সম্পর্ক নিয়ে নয়। ওই মার্কাজের সভা থেকে যে প্রায় ৪০০ টা করোনা আক্রান্ত রুগী পাওয়া গেছে, এটাও সমস্যা নয়। করোনা আক্রান্ত তাবলীগি-দের ধরতে গেলে, ডাক্তারদের উপর পাথর ছোঁড়ার ঘটনা বা রাজ্য সরকারি কর্মীদের উপর থুথু ছোঁড়াটাও সমস্যা নয়। মার্কাজের প্রধান যে তার শিষ্যদের নির্দেশ দিচ্ছিলেন ডাক্তারদের কথা না শুনতে, সমস্যা কিন্তু এটাও নয়। একটা সন্ত্রাসী সংগঠনের থেকে যারা এর থেকে ভাল কিছুর আশা করে, তারা হয় উন্মাদ নয়তো স্বপ্নের জগতে বাস করে।
সমস্যাটা হচ্ছে যখন তথাকথিত শিক্ষিত, উদার, বুদ্ধিমান মানুষজন, এরকম একটা সংগঠনের প্রতি সমর্থন, সহানুভূতি এবং একাত্মতা দেখায়। এসব মানুষেরা হয়তো তাবলীগের কেউ নয়, এমন কি মুসলমানও নয়।
যখন কয়েক কোটি মানুষের জীবন ঝুলে আছে পাতলা একটা সুতোর উপর; তখন যারা ঘরবন্দি (লকডাউন) থাকার আদেশ অমান্য করে, তাদের প্রতি কোন ক্ষোভ বা ঘৃণাই যথেষ্ট নয়। করোনার জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাবলীগি জামাত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। আর এই অবস্থান দেখে তারাই আশ্চর্য হবে, যারা দেশ ও বিশ্বের কোন খবরই রাখে না। কারণ, করোনা ছাড়াও আরো জীবাণু আছে, যেটা তাবলীগ ছড়িয়ে থাকে।
এই মহামারীতে সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে পেয়েছে কেবল বামপন্থীরা। এই বামপন্থীরাই জামাতের বিরুদ্ধে সমালোচনাকে “মুসলিম বিরোধী আক্রমণ” বলে প্রচার চালাচ্ছে। ইন্দোরে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় যে মহিলা ডাক্তারটি আহত হন, তিনিও যে মুসলিম; এই তথ্যটা যোগ করতে বামেরা ভুলে গেছে। উদারপন্থী বামদের কাছে এটা ছিল একটা সুযোগ, মুসলমানদের উদ্ধারকর্তা হয়ে ওঠার। আর মুসলমানদের (যাদের বুদ্ধি নিয়ে যত কম বলা হয়, ততই ভাল) যখন দরকার ছিল ওই সংগঠনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার, তখন তারা করল কি? তারা তখন অজস্র বারের মত এইবারেও বাম-দের এই ভাষ্য গিলে বসে রইল।
অথচ অনেক মুসলিম প্রধান দেশেই তাবলীগি জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমন কি সৌদি আরবও এদের নিষিদ্ধ করেছে। তাছাড়া দারুল উলুম দেওবন্দও এদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বরেলভী তাত্ত্বিকরাও বহুদিন থেকেই এই সংগঠনটির উপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে আসছেন। এটা ভারতবর্ষের দুর্ভাগ্য যে এরকম একটা সংগঠন এদেশে খোলাখুলি নিজেদের কর্মকান্ড চালাচ্ছে। শুধু তাইই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান উপদেষ্টাকে পর্যন্ত এদের সহযোগিতা চাইতে ছুটে আসতে হয়েছে। এই এতজন বিদেশি কিভাবে ভিসা আইন অমান্য করে দেশের রাজধানীতে লুকিয়ে তাবলীগের অনুষ্ঠানে অংশ নিল; এর পুরো ব্যাপারটাই একটা বিরাট জাতীয় ব্যর্থতা। ভারতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংগঠন গুলোর দক্ষতার উপরেও একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল এই ঘটনা।
(ওমর গাজীর মূল রচনাকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন স্মৃতিলেখা চক্রবর্তী)
মূল রচনা: ওমর গাজী (Omar Ghazi)
অনুবাদ: স্মৃতিলেখা চক্রবর্তী (Smritilekha Chakraborty)