ইতালিয়দের সেই হাসিমুখগুলো সমানে ভেসে উঠছে : সুনন্দা সান্যাল

 “খুব মনে পড়ছে ইতালির ওঁদের কথা। একঝাঁক শিল্পী এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে। ওঁদের ‘টাই এন্ড ডাই’ অর্থাৎ বাঁধনীর কাজ শিখিয়েছিলাম। রং তৈরী করেছিলাম ডালিমের খোসা থেকে। ওঁরা এত খুশি হয়েছিলেন! আমার খুব ভাল লেগেছিল। হাসিমুখগুলো চোখের সামনে সমানে ভেসে উঠছে। ওঁদের কী অবস্থা কে জানে! ঈশ্বর ওঁদের মঙ্গল করুন।” করোনার ভয়াল থাবার স্মৃতিচারণ করছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর শান্তিনিকেতনের সুনন্দা সান্যাল(Sunanda Sanal)। কেজি সুব্র্যাহ্ম্যণিয়ম, সনৎ কর, সোমনাথ হোড়, শর্বরী রায় চৌধুরী, যোগেন চৌধুরীর মত স্বনামধন্য প্রতিভাবানদের প্রত্যক্ষ ছাত্রী। মিউরাল নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি, ন্যাশনাল স্কলারশিপ, শ ওয়ালেস স্কলারশিপ নিয়ে ইউ,কে ও নানা জায়গায় যাওয়ার ও পড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন শর্বরী। বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করলেও সেরামিক্সের মাধ্যমে ভাক্সর্য, অনেক বছর ধরে টেক্সটাইল ক্ষেত্রে বিচরণ— এক অর্থে অনন্যা।শান্তিনিকেতনের জীবনবোধ ও ব্যস্ততা প্রসঙ্গে সুনন্দা বলেন, “শৈশবের শুরু দূর্গাপুর শিল্পনগরীতে।কলাভবনে শিল্পের পাঠ শুরুর পাশাপাশি জীবনবোধ গড়ে ওঠা, জীবনের ভালো মন্দ বুঝতে শেখা। মনে হয় শিল্পী স্বত্ত্বাকে কোনও বিশেষ মাধ্যমে আবদ্ধ রাখা যায় না। এই শিক্ষা কলাভবন থেকেই পেয়েছি। বহু বছর মেয়েদের স্বনির্ভর করার কাজে যুক্ত থাকায় এই মাধ্যমটি সহজ বলে মনে হয়েছে। নিজের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে পেন্টিং তো রয়েছেই।বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করি। রবীন্দ্রনাথই আমার অনুপ্রেরণা, তাই বোধহয় এ সব সম্ভব। কলাভবন প্রাক্তনীদের একটি সংস্থা নানা ধরনের কাজকর্ম করে। তার সঙ্গে বিশেষভাবে সক্রিয়। এছাড়া ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত। এখন তো এ সব বন্ধ।”লকডাউনের পর কীভাবে বদলিয়েছে দিনলিপি? ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-কে জানালেন, “গোড়া থেকেই আমাদের কড়া নিরাপত্তা, গৃহবন্দী অবস্থা। প্রথম সপ্তাহ খুবই বিচলিত ছিলাম। রেডিও, টিভি, সোশাল নেটওয়ার্কিং— যেখানে যা পাচ্ছি মন দিয়ে শুনছিলাম। খবরের কাগজ পাচ্ছিলাম না। তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন অনেকটাই ধাতস্থ হয়েছি।বাইরে বের হওয়া বন্ধ। এই অবসরে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা থাকা সত্বেও ঠিক মতন সব কিছু করা হয়ে উঠছে না।” কার জন্য বেশি চিন্তা হয়? সুনন্দার কথায়, “আমি শান্তিনিকেতনে একা থাকি, বাড়ির সকলের জন্য চিন্তা হচ্ছে বিশেষ করে বাবার অবস্থা খুবই খারাপ তাঁর জন্য সবসময় উদগ্রীব থাকি।”চিন্তা ভুলে থাকার উপায়? শিল্পীর জবাব— “সাঁওতাল উপজাতির শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে বহু বছর গবেষণামূলক কাজ ও অন্য কিছু বিষয়ের উপর লেখালেখি করছি। লকডাউনে অবকাশ বেড়েছে। কাজগুলি তরান্বিত করতে চাই। এরই মাঝে কিছু পেনসিল স্কেচ, ফাঁকে ফাঁকে বাগানেরও যত্ন করতে হচ্ছে ।রোদের তাপ বড়ই প্রখর। সোশ্যাল মিডিয়ার ঝোঁকটা কি লকডাউনে বেড়েছে? “না। বরং অনেকটা কমে গেছে। নিজেকে আপডেট রাখার চেষ্টা করি। নতুন কিছু জানতে পারলে বন্ধুদের জানাই। বন্ধুরাও বিভিন্ন ধরনের ভাল ভাল পোস্ট করেন। তা থেকে অনেক কিছু জানতে পারছি ভালোও লাগছে। সবসময় সোস্যাল মিডিয়ায় না থেকে প্রিয় শিল্পীদের গান, কবিতা ও বাদ্যযন্ত্র শুনি। রেডিও আমার নিত্য সঙ্গী। আর রবীন্দ্রনাথ যাঁকে প্রতিদিন একটুও চর্চা না করলে চলে না।” দেশের অবস্থা নিয়ে কী ভাবছেন? “গতির নিয়মে সবকিছু চললেও দেশের অবস্থা যে কি হবে! রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে খুবই বিচলিত। করুণাময় ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখি, উনি উদ্ধার করবেন, এই আশা নিয়ে আছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.