আজ বাসন্তী দুর্গা পূজার বিজয়া দশমী। তাই আজ আমার সকল ভারতীয় পরিবার ও সমাজকে জানাই শুভ বিজয়া দশমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
দশমী’ কথাটির প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য সহজবোধ্য। শারদীয় এবং বাসন্তিকা দশমী তিথিতে দেবী কৈলাস পাড়ি দেন। সেই কারণেই ‘বিজয়া দশমী’ নাম। কিন্তু এই দশমীকে ‘বিজয়া’ বলা হয় কেন? পুরাণে মহিষাসুর-বধ সংক্রান্ত কাহিনিতে বলা হয়েছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পরে দশম দিনে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করেন দেবী। শ্রীশ্রীচণ্ডীর কাহিনি অনুসারে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে দেবী আবির্ভূতা হন, এবং শুক্লা দশমীতে মহিষাসুর-বধ করেন। বিজয়া দশমী সেই বিজয়কেই চিহ্নিত করে।
বাক সূক্ত বা দেবী সূক্তে বলা হয়েছে
অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাম চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্।
অর্থাৎ , আমি জগতের ঈশ্বরী, ধনপ্রদায়িনী। ব্রহ্মকে জ্ঞাতা আমার আমিই যাঁদের জন্য যজ্ঞ করা হয় তাদের মধ্যে প্রথমা। বহুরূপে সর্বভূতে প্রবিষ্টা সেই আমাকে বহুস্থানে বা সর্বদেশে আরাধনা করা হয়।
হ্যাঁ , এই ভারত (India) ভূমিতে বসবাসকারী এবং প্রতিটি ভারতীয় মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ হলেন ভারতীয় । এবং প্রতিটি ভারতীয় নিজে স্বয়ং একেকজন ভারত রাষ্ট্র।
যেহেতু নিজেরাই প্রত্যেকে ভারতবর্ষ তাই এই সুবিশাল দেশের মঙ্গল সাধন ও তাঁদের হাতে। তাঁরাই সেই ব্যক্তি যাঁরা সারা বিশ্বকে নতুন আলোকের পথ দেখাবেন।
উপনিষদে বলা আছে,
‘অসতো মা সৎ গময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়, মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়, ওঁ শান্তিঃ।। ওঁ শান্তিঃ।। ওঁ শান্তিঃ।।’
অর্থাৎ অসৎ হইতে সত্যে লইয়া যাও, অন্ধকার হইতে আলোয় লইয়া যাও, মৃত্যু হইতে অমরত্বে লইয়া যাও, সর্বত্র শান্তি বিরাজ করুক।
আজ বিশ্বের এই ভয়াল দিনে এই যেন হোক প্রতি ভারতীয়ের পাথেয়।
কানে শুনে কোনো ফল নেই এবং মুখে উচ্চারণ করিয়া যাওয়া আরও বৃথা। আমরা যখন সত্যকে আলোককে অমৃতকে যথার্থ চাইব, সমস্ত জীবনে তার পরিচয় দেব, তখনই এ-প্রার্থনা সার্থক হবে। যে প্রার্থনা আমি নিজে মনের মধ্যে পাই নি, তা পূর্ণ হবার কোনো পথ আমার সম্মুখে নেই। অতএব, সবই শুনলাম বটে, মন্ত্রও কর্ণগোচর হল–কিন্তু তবু এখনও প্রার্থনা করবার পূর্বে প্রার্থনাটিকে সমস্ত জীবন দিয়ে খুঁজে পেতে হবে।
বনস্পতি হয়ে উঠবার একমাত্র প্রার্থনা বীজের শস্যাংশের মধ্যে সংহতভাবে নিগূঢ়ভাবে নিহিত হয়ে আছে–কিন্তু যতক্ষণ তা অঙ্কুরিত হয়ে আকাশে আলোকে মাথা না তুলছে, ততক্ষণ তা না থাকারই তুল্য হয়ে আছে। সত্যের আকাঙক্ষা, অমৃতের আকাঙক্ষা আমাদের সকল আকাঙক্ষার অন্তর্নিহিত, কিন্তু ততক্ষণ আমরা তাকে জানিই না, যতক্ষণ না সে আমাদের সমস্ত ধূলিস্তর বিদীর্ণ করে মুক্ত আকাশে পাতা মেলতে পারে।
আমাদের এই যথার্থ প্রার্থনাটি কী, তা অনেক সময় অন্যের ভিতর দিয়ে আমাদের জানতে হয়। জগতের মহাপুরুষেরা আমাদেরকে নিজের অন্তর্গূঢ় ইচ্ছাটিকে জানবার সহায়তা করেন। আমরা চিরকাল মনে করে আসি, আমরা বুঝি পেট ভরাতেই চাই, আরাম করতেই চাই–কিন্তু যখন দেখি, কেহ ধন-মান-আরামকে উপেক্ষা করিয়া সত্য, আলোক ও অমৃতের জন্য জীবন উৎসর্গ করছেন, তখন হঠাৎ একরকম করিয়া বুঝিতে পারি যে, আমার অন্তরাত্মার মধ্যে যে ইচ্ছা আমার অগোচরে কাজ করছে, তাকেই তিনি তাঁর জীবনের মধ্যে উপলব্ধি করছেন। আমার ইচ্ছাকে যখন তাঁর মধ্যে প্রত্যক্ষ দেখতে পাই, তখন অন্তত ক্ষণকালের জন্যও জানতে পারি–কিসের প্রতি আমার যথার্থ ভক্তি, কী আমার অন্তরের আকাঙক্ষা।
একতাই শক্তি। লকডাউনে প্রমাণিত, একজোট হয়ে লড়াইয়ে প্রস্তুত দেশবাসী। লকডাউনে কেউ একা নন। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতবে দেশ। বার্তা প্রধানমন্ত্রীর।
ঘরে থাকুন, প্রাণে বাঁচুন। সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করুন। করোনা (Corona) সতর্কতায় লকডাউনের (Lockdown) দেশে এখন এটাই মন্ত্র। মারণ ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে আবারও সচেতন হওয়ার ডাক প্রধানমন্ত্রীর। আমজনতাকে গৃহবন্দি করে আগেই লকডাউন ঘোষণা করেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। শুক্রবার সেই লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানান মোদি। ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনতা কারফিউ সফল হয়েছে। দেশ এক হয়ে লড়াই করতে পারছে। লকডাউন তা অনেকটাই প্রমাণ করেছে।
জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবার বাড়ির আলো নিভিয়ে প্রদীপ জ্বালানোর আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবারের এই কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারও বুঝিয়ে দিয়েছেন, করোনা মোকাবিলায় লকডাউন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মত, করোনা সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলেছে গরিবদের মধ্যে। সংঘবদ্ধ দেশ সেই অন্ধকার একসঙ্গে দূর করতে পারবে বলেই মনে করেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। শুক্রবার ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারত হারতে জানে না। দেশ এক হয়ে লড়াই করতে পারে।
এটা মনে রাখতে হবে, আমাদের যা কিছু দেবার তা আমাদের প্রার্থনার বহুপূর্বেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমাদের যথার্থ ঈপ্সিতধনের দ্বারা আমরা পরিবেষ্টিত। বাকি আছে কেবল গ্রহণের চেষ্টা–তাই যথার্থ প্রার্থনা।
ঈশ্বর এইখানেই আমাদের গৌরব রক্ষা করছেন। তিনিই সব দিয়েছেন, অথচ এটুকু আমাদের বলবার মুখ রেখেছেন যে, আমরাই নিয়েছি। এই গ্রহণের সফলতা, এটাই লাভ,–পাওয়াটা সকল সময়ে লাভ নয়–তাই অধিকাংশস্থলেই পেয়ে না-পাওয়া, এবং অবশিষ্টস্থলে বিষম একটা বোঝা। আর্থিক-পারমার্থিক সকল বিষয়েই এ-কথা খাটে।
ঋষি বলেছেন
আবিরাবীর্ম এধি।
হে স্বপ্রকাশ, আমার নিকট প্রকাশিত হও।
তুমি তো স্বপ্রকাশ, আপনা-আপনি প্রকাশিত আছই, এখন, আমার কাছে প্রকাশিত হও, এই আমার প্রার্থনা। তোমার পক্ষে প্রকাশের অভাব নাই, আমার পক্ষে সেই প্রকাশ উপলব্ধির সুযোগ বাকি আছে। যতক্ষণ আমি তোমাকে না দেখব, ততক্ষণ তুমি পরিপূর্ণ প্রকাশ হলেও আমার কাছে দেখা দেবে না। সূর্য তো আপন আলোকে আপনি প্রকাশিত আছেন, এখন আমারই কেবল চোখ খুলবার, জাগ্রত হবার অপেক্ষা। যখন আমাদের চোখ খুলবার ইচ্ছা হয়, আমরা চোখ খুলি, তখন সূর্য আমাদের নূতন করিয়া কিছু দেন না, তিনি যে আপনাকে আপনি দান করে রেখেছেন, এইটাই আমরা মূহূর্তের মধ্যে বুঝিতে পারি।
ভারতবর্ষ এই কথা সুস্পষ্ট করে বলেছেন–
অধর্মেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি।
ততঃ সপত্নান্ জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি।
“এস আমরা ফললাভ করি‘ বলে হঠাৎ উৎসাহে তখনই পথে বাহির হয়ে পড়াই যে ফললাভের উপায়, তাহা কেউই বলবেন না। কারণ কেবলমাত্র সদিচ্ছা এবং সদুৎসাহের বলে ফল সৃষ্টি করা যায় না বীজ হইতে বৃক্ষ এবং বৃক্ষ হতে ফল জন্মে। বীজ ও বৃক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে আমরা যদি অন্য উপায়ে ফললাভের আকাঙক্ষা করি, তবে সেই ঘরগড়া কৃত্রিম ফল খেলার পক্ষে গৃহসজ্জার পক্ষে অতি উত্তম হতে পারে–কিন্তু তাহা আমাদের যথার্থ ক্ষুধানিবৃত্তির পক্ষে অত্যন্ত অনুপযোগী হয়।
তাই সবাই ধীরে ধীরে করোনা ভাইরাসের (Corona virus) সঙ্গে দলবদ্ধ ভাবে লড়াই করি। পাশে থাকি ডাক্তার, নার্স , পুলিশ, সাফাই কর্মীদের … যাঁরা নিরন্তর আমাদের করোনার গ্রাস থেকে রক্ষা করে ফল লাভের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সম্মান জানিয়ে আসুন একতার রাম বাণ চালিয়ে অকাল দীপাবলী পালন করি ৫ এপ্রিল রাত ৯ টায়।
একটা কথা মনে রাখবেন আমরা অমৃতের পুত্র কন্যা। আমরা হারব না :
শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাআ যে ধামানি দিব্যানি তস্থূ ।।
বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তম্আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ ।
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতিনান্যঃ পনথা বিদ্যতে অয়নায় ।।
শোনো বিশ্বজন ,শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণদিব্যধামবাসী ,
আমি জেনেছি তাঁহারে
মহান্ত পুরুষ যিনি আঁধারের পারেজ্যোতির্ময় ।
তাঁরে জেনে তাঁর পানে চাহি
মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো , অন্য পথ নাহি ।