১৭৮০ খ্রীষ্টাব্দের পর কাশী শহর সবথেকে বড় গঠনমূলক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছে ! কারণ ঐ সময়েই মারাঠা মহারাণী অহল্যাবাই হোলকর মন্দির ও তার সমীপবর্তী ক্ষেত্রের জীর্ণোদ্ধারমূলক সংস্কার করেছিলেন। এর পর ১৮৫৩ খ্রীষ্টাব্দে শিখ মহারাজ রণজিৎ সিংহ – কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের শিখরটিকে স্বর্ণমণ্ডিত করে দিয়েছিলেন।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডোর-
সনাতন ধর্মের ও পৌরাণিক মহত্বপূর্ণ নগরী কাশী খুব তাড়াতাড়িই নতুন সৌন্দর্যে সজ্জিত হয়ে দৃষ্টিগোচর হবে। একদিকে যেখানে সম্পূর্ণ শহরে নির্মাণের কাজ চলছে। একই সাথে সমধিক দ্রুততার সঙ্গে বিশ্বনাথ করিডোরের নির্মাণ কাজ চলছে। PM ন.মো.র স্বপ্নের প্রকল্প প্রায় পঞ্চাশ ফুট চওড়া এক রাস্তার দ্বারা দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের সাথে কাশীর প্রসিদ্ধ ঘাটগুলিকে জুড়ে দেওয়া হবে।
প্রধানতঃ পুণ্যতোয়া নদী গঙ্গার তীরে অবস্থিত কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির জাগ্রত মহাদেবের অধিষ্ঠান। আগে যা অলিগলি সংকীর্ণ পথের জটে জঞ্জালপূর্ণ থাকত। এমন নয় যে কাশীর এই দশা হাজার হাজার বছর ধরেই ছিল। সমীক্ষা এবং পুরাতন কিছু দলীল দস্তাবেজ থেকে গবেষণা করে জানা যায় এর ভব্যতা ও বিশালতার কথা। পুনশ্চ বারাণসীর সাংসদ তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে – এই প্রকল্পে কাজ আরম্ভ করা হয়। কাশীর মন্দির পরিসরের বাইরের অংশের জরাজীর্ণ অংশের অপসারণ শুরু হলে তার ভিতর থেকে পুরাতন মন্দিরের স্বরূপ প্রকাশিত হতে থাকে।
বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- ইতস্ততঃ মন্দিরের পর মন্দিরের শৃঙ্খলা, সাধু-সন্যাসী, ফড়ে-ফক্কর, ধান্দাবাজ, মতলববাজ – দের নগরী বলে পরিচিত কাশীকে তার পুরাতন সম্মানে ফিরিয়ে দেওয়া। যা এক প্রশংসনীয় প্রকল্প। একাজ শুরু হওয়ার পরে কাশীতে তাদের জনপ্রতিনিধি তথা সাংসদ নরেন্দ্র মোদীর আগমন ঘটেছিল। তখন জনগণের উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রকাশিত হয়ে ছিল, যা একাজের প্রতি তাদের সমর্থন, সন্তুষ্টি ও ভালোবাসার প্রকাশ। এই ঘটনার উপরে ট্যুইট করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের বিস্তারিত দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত করেছেন। কাশীর পরম্পরা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনরকম আপোষ না করে, তার মূল চরিত্রের পরিবর্তন না করে, মন্দির পরিসরের সমস্ত প্রকার অত্যাধুনিক নাগরিক সুবিধার খেয়াল রেখে দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ চলছে।
বিশ্বনাথ করিডোরের বিশেষতা-
প্রায় পঞ্চাশ ফুট করিডর গঙ্গার তীরে স্থিত মণিকর্ণিকা ও ললিতা ঘাটকে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সাথে সরাসরি যুক্ত করে দিয়েছে। সঙ্গে গঙ্গাতীরবর্তী ঘাট গুলিরও উন্নতি হয়েছে।
করিডরে তীর্থ যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য প্রতীক্ষালয়ের ব্যবস্থা থাকছে।
রাস্তায় তীর্থযাত্রী ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য নবনির্মিত সংগ্রহালয় এবং বারাণসীর প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য চিত্রবীথী (প্রদর্শনীর)-র ব্যবস্থা থাকছে।
হবন বা যজ্ঞের জন্য নতুন যজ্ঞশালার নির্মাণ হচ্ছে।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পূজারী, সেচ্ছাসেবক ও তীর্থযাত্রীদের জন্য আবাস ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পর্যটক ও তীর্থযাত্রীদের আবশ্যক তথ্যাদির জন্য থাকবে অত্যাধুনিক অনুসন্ধানকেন্দ্র।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ঠিক সামনে একটি বড় মোড়ের নির্মাণ করা হচ্ছে, যেখানে এই করিডরের সমাপ্তি হবে।
ফুডস্ট্রিট –
যা পর্যটক যাত্রীদেরকে বারাণসী ও অবধী ভোজনের আস্বাদ প্রদান করবে। প্রসাদের জন্য একটি বিরাট ভোগশালার নির্মাণ করা হচ্ছে।
সভা, বৈঠক ও মন্দিরের কাজের জন্য একটি সভাগারের নির্মাণ করা হচ্ছে, যা এই সব আয়োজনের জন্য সুবিধা করে দেবে।
একটি বড়সড় মঞ্চের নির্মাণ হচ্ছে যেখানে কাশীর সাংস্কৃতিক পরম্পরার সঙ্গে সংযুক্ত মনোজ্ঞ তথা ভব্য অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
১৭৮০ ও ১৮৩৫-এর পর এত বড় গঠনমূলক পরিবর্তন কাশীতে এই প্রথম। অহল্যা বাঈ ও গুরু গোবিন্দ সিংহের পর শ্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর নেতৃত্বেই এই প্রাচীন শহরে এত বড় আধুনিক পরিবর্তনের প্রয়াস।
মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই যোজনায় আনুমানিক মোট ব্যয় ৬০০ কোটি টাকার মতো। ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় ভারতীয় জনতা পার্টি এই প্রাচীন শহরের খোলনলচে পালটে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তখন থেকে মোদীজী তাঁর সাংসদীয় কার্যক্ষেত্রের পরিদর্শন ও মন্দির কার্যের অগ্রগতির দেখাশোনা করতে ১৯বার কাশী পরিভ্রমণ করেছেন।