লালকেল্লাতেই ২৬ জানুয়ারি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল মুজ়াম্মিলদের! ধৃত চিকিৎসকের ফোন থেকে উদ্ধার নতুন তথ্য

১০ নভেম্বর নয়। দিল্লির লালকেল্লায় হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল গত ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনই? হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে ধৃত চিকিৎসক মুজ়াম্মিল আহমেদের ফোন ঘেঁটে তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। কারণ, ওই ফোনে গত জানুয়ারি মাসে লালকেল্লার সামনে একাধিক সন্দেহজনক কার্যকলাপের তথ্য মিলেছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, প্রজাতন্ত্র দিবসের লালকেল্লাই ছিল হামলাকারীদের প্রধান লক্ষ্য। সেই ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের ছোটখাটো অংশ হতে পারে গত সোমবারের ঘটনা। যদিও এখনই তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

লালকেল্লার কাছে একটি সাদা রঙের হুন্ডাই আই২০ গাড়িতে বিস্ফোরণ হয় সোমবার। তাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। ওই দিনই সকালে ফরিদাবাদে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার করেছিল জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশের যৌথ দল। গ্রেফতার করা হয়েছিল মুজ়াম্মিল-সহ একাধিক ব্যক্তিকে। মুজ়াম্মিল হরিয়ানার একটি হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ, একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানে তাঁরা বিস্ফোরক মজুত করে রেখেছিলেন। হরিয়ানা থেকে মিলেছিল ৩৬০ কেজি দাহ্য পদার্থ। তা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের ধারণা। এই রাসায়নিক আরডিএক্স তৈরির অন্যতম উপাদান।

মুজ়াম্মিলের ফোন ঘেঁটে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে একাধিক বার তিনি লালকেল্লার সামনে গিয়েছিলেন। অনুমান, প্রজাতন্ত্র দিবসে হামলার রেকি করা হয়েছিল। এক সিনিয়র আধিকারিক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘‘মুজ়াম্মিলের ফোন থেকে যে তথ্য উদ্ধার করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, লালকেল্লার কাছাকাছি একাধিক বার তিনি গিয়েছিলেন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তাঁর এই কার্যকলাপ ২৬ জানুয়ারির হামলার পরিকল্পনারই অংশ।’’

শুধু মুজ়াম্মিল নন। আর এক চিকিৎসক উমর নবিও তাঁর সঙ্গে লালকেল্লার সামনে গিয়েছিলেন, জানতে পেরেছে পুলিশ। সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভিড়ের পরিমাণ খতিয়ে দেখা ছিল উদ্দেশ্য। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং টাওয়ার লোকেশন দেখে এ বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, উমর ঘাতক গাড়ির ভিতরে ছিলেন বলে তদন্তকারীদের অনুমান। অর্থাৎ, তিনিই হামলা চালিয়ে থাকতে পারেন।

প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লার সামনে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত থাকেন রাষ্ট্রপতি স্বয়ং। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে লালকেল্লা পর্যন্ত প্যারেড হয়। সেই সময়ে হামলার পরিকল্পনা যদি থাকে, তবে তা ভেস্তে গেল কী করে? তদন্তকারীদের অনুমান, নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায়নি।

ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কিছু দিন আগে শ্রীনগরের এক চিকিৎসক পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন। তাঁকে জেরা করেই ফরিদাবাদে মজুত বিস্ফোরকের হদিস পায় পুলিশ। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ বিবৃতি দিয়ে জানায়, তারা কাশ্মীরের একাধিক জায়গা, উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুর এবং হরিয়ানার ফরিদাবাদে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল। মোট ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক এবং কিছু অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই বিস্ফোরক আইইডি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হত। সেই সন্ধ্যাতেই দিল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.