অন্তত সাতটি যুদ্ধ থামিয়েও এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দৌড়ে থাকলেও ট্রাম্পকে টপকে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন ভেনেজ়ুয়েলার বিরোধী দলনেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। প্রথম প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি সেই ট্রাম্পকেই নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন। কেন করলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মারিয়া। পাশাপাশি এ-ও বলেন, ‘‘আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে এই স্বীকৃতি ভেনেজ়ুয়েলার মানুষের সংগ্রামে এক নতুন অনুপ্রেরণা।’’
চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে ৯৪টি সংগঠনের সম্মাননার জন্য। মনোনয়নের তালিকায় ছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম। শেষ পর্যন্ত ভেনেজ়ুয়েলার বিরোধী দলনেত্রী মারিয়াকেই এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার দিচ্ছে নোবেল কমিটি। কেন তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান জর্জেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস জানান, ভেনেজ়ুয়েলার বিরোধীদল এক কালে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। তাদের একত্রিত করার কৃতিত্ব মারিয়ার। বিরোধীদলগুলিকে একত্রিত করে অবাধ নির্বাচন এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের দাবি তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর এই কৃতিত্বকে সম্মান জানাতেই তাঁকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় নোবেল কমিটি।
কেন ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হল না, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সেই আবহে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার উৎসর্গ করলেন মারিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র অর্জনের জন্য আমাদের প্রধান মিত্র হিসেবে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প, আমেরিকার জনগণ, দক্ষিণ আমেরিকার (ল্যাটিন আমেরিকা) জনগণ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলির উপর নির্ভর করি।’’ তার পরেই ভেনেজ়ুয়েলার বিরোধী দলনেত্রী জানান, তিনি এই পুরস্কার তাঁর দেশের দুর্দশাগ্রস্ত জনগণকেও উৎসর্গ করছেন। শুধু তা-ই নয়, মারিয়া আরও বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্যের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের জন্য রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পকেও উৎসর্গ করছি।’’
গত বছর ভেনেজুয়েলায় ভোটের সময় কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় দেশের প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন নিকোলাস মাদুরো। ২০১৩ সাল থেকে ভেনেজ়ুয়েলার প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন তিনি। যদিও তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে মানতে নারাজ ওয়াশিংটন। আমেরিকার অভিযোগ, অন্যায় ভাবে কারাকাসের কুর্সি দখল করে রেখেছেন নিকোলাস। তাঁর আমলে সাম্প্রতিক সময়ে বার বার ভেনেজ়ুয়েলায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনা। আর তা সবটাই যে হয়েছে ট্রাম্পের ইশারায়, তা বলা বাহুল্য। শুধু তা-ই নয়, ভেনেজ়ুয়েলার ভিতরেও নিকোলাস সরকার কোণঠাসা। তাঁর দলের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপি করার অভিযোগ উঠেছিল। আর সেই অভিযোগ যাঁরা তুলেছিলেন, তাঁদের সামনের সারিতে ছিলেন মারিয়া।
২০২৪ সালের ভোটে মারিয়াকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে শামিল হতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সেই নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট পদ ধরে রাখান নিকোলাস। তবে দেশবাসী মনে করেন, সেই নির্বাচনে আসল বিজয়ী মারিয়াই। সে কারণে কমিটি তাঁর নাম ঘোষণা করতে গিয়ে বলে, মারিয়া হলেন ‘সাহসী এবং শান্তির প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চ্যাম্পিয়ন’। কমিটি আরও বলে, ভেনেজুয়েলায় যখন ‘অন্ধকার’ তখনও গণতন্ত্রের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছিলেন মারিয়া। সেই মারিয়া এ বার তাঁদের লড়াইয়ে ট্রাম্পের সমর্থনের কথা তুলে ধরলেন।

