দুটো আলাদা ঘটনা। একের সঙ্গে অন্যের যোগ নেই বিন্দুমাত্রও। অথচ অন্তর্লীন মাত্রায় কলকাতার বর্তমান একটা ছবি তৈরি হয়ে যাচ্ছে এই দুই ঘটনায়, এক সূত্রে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমানবন্দরে ধরা পড়ে-যাওয়া এক বঙ্গজ অভিনেত্রী। যে ছবি উঠে আসছে কলকাতার, তা উদ্বেগজনক।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক যে দোল-চিত্র সাংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, তা যথেষ্ট ‘খ্যাতি’ অর্জন করেছে ইতিমধ্যেই। মাদকীয় গড়াগড়ির উদ্দাম ছবিটা নিতান্তই প্রতীকী যে নয়, সেদিন প্রাক-দোল পালনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা তার সাক্ষী। মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অশালীন অনাচারের ছবি সেদিন রবীন্দ্রভারতীর প্রাঙ্গণে ছিল অবাধ। লজ্জাজনক হলেও এই সত্যের মুখোমুখি আমরা।
অন্য ছবিটা সমাজের অপেক্ষাকৃত উচ্চবর্গীয় প্রান্তের। এক বঙ্গতনয়া, যিনি অভিনয় ও মডেলিং করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, ধরা পড়লেন কলকাতা বিমানবন্দরে। খোঁপার আড়ালে মাদক ছিল তাঁর, নিজের ব্যবহারের জন্য নাকি মাদক পাচার চক্রের কোনও যোগ আছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খবরের অন্য একটা অংশও আছে। অভিনেত্রী বলেছেন, আগের রাতে কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলের ডিস্কোথেক-এ গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মাদক নিচ্ছিলেন এবং অভিনেত্রীর দাবি, তিনিও এর অংশীদার হন। আর এই তথ্যেই কলকাতা তথা বঙ্গসমাজের একটা অংশ এক হয়ে যায় কোথাও, উদ্বেগের এক সূত্র ধরে।
এমনটা যদি হত, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি অথবা অভিনেত্রী ও তাঁর ডিস্কোথেক পর্ব নিতান্তই ব্যতিক্রমী, তাহলে এই কলম ধরার প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্যটা হল এই, এই ছবি এখন বঙ্গীয় চরাচরব্যাপী। বিনোদন এখন মদ্যপানের নামান্তর হয়েছে বঙ্গীয় বাবুবৃত্তান্তে, উচ্চবর্গীয়ের নৈশবিনোদনে নেশা বাড়িয়েছে নিষিদ্ধ মাদক। এবং পুলিশি তথ্যে উঠে আসছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রছাত্রীদের কথা, যারা ক্রমাগত এই নিষিদ্ধ মাদকপার্টির নেশায় ডুবে যাচ্ছে। আপাতশান্ত সমাজের নিপাট ছবির তলায় অন্তঃসলিলা হয় যদি নিষিদ্ধ নেশার এই ফল্গু, উদ্বেগের কারণ ঘটে বই কি!
সচেতন হওয়া প্রয়োজন আমাদের। সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কঠোর হওয়া প্রয়োজন পুলিশ-প্রশাসনের। সমাজকে স্বখাত সলিল থেকে উদ্ধারের কোনও সম্ভাবনাই থাকবে না অন্যথায়।