ওড়িশা এফসি – ২ (কৃষ্ণ, মুরতাদা)
ইস্টবেঙ্গল – ১ (দিয়ামানতাকোস)
১৯৭৫ সালের আইএফএ শিল্ডে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ৫-০ ব্যবধানে জয় নিয়ে এখনও গর্ব বোধ করেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। সবুজ-মেরুন ব্রিগেডের কাছে হেরেই ০-৫ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা লাল-হলুদ ওড়িশায় গিয়েছিল আইএসএলের ষষ্ঠ ম্যাচ খেলতে। পরিবর্তন বলতে কোচ হিসাবে পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়েছেন অস্কার ব্রুজো। তাতেই পরিবর্তন স্পষ্ট। যদিও সেই পরিবর্তন পয়েন্ট আনতে পারল না। ওড়িশার কাছে ১-২ ব্যবধানে হেরে গেল ইস্টবেঙ্গল।
নতুন কোনও ফুটবলার যোগ দেননি। গত দু’দিনে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের ফুটবলের বিরাট কোনও উন্নতিও হয়নি। তবে ব্রুজোর দল হারানো আত্মবিশ্বাস কিছুটা ফিরে পেয়েছে। ফুটবলারদের শরীরী ভাষায় পরিচিত মেজাজ কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে। স্প্যানিশ কোচ যে ম্যাজিক জানেন না, তার প্রমাণ ম্যাচের ২২ মিনিটে রয় কৃষ্ণের গোল। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুলে দলকে এগিয়ে দেন মোহনবাগানের প্রাক্তনী।
পিছিয়ে পড়া ইস্টবেঙ্গল আগের পাঁচ ম্যাচের মতো নেতিয়ে পড়েনি। বরং পাল্টা লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে। মাঝমাঠ এবং আক্রমণ ভাগকে অনেক সক্রিয় দেখিয়েছে। নন্দকুমার, মাধি তালালেরা আর একটু সক্রিয় এবং আত্মবিশ্বাসী হতে পারলে ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটের মধ্যেই ৪ গোলে এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। ২ মিনিটের মাথায় হেড থেকে গোল করেছিলেন সাউল ক্রেসপো। কিন্তু অফসাইডের জন্য তা বাতিল হয়ে যায়। লাইন্স ম্যানের সিদ্ধান্তে অখুশি দেখিয়েছে লাল-হলুদ ফুটবলারদের। ম্যাচের বাকি সময়টা অবশ্য সমর্থকদের খুশি করার মতো কিছু করতে পারেননি ব্রুজ়োর ফুটবলারেরা। ৭৫ মিনিটে প্রভাত লাকরা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে দলকে বিপদে ফেলে দেন। এ রকম ফাউল অপরাধই।
প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময় পেনাল্টি থেকে গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে সমতায় ফেরান দিয়ামানতাকোস। তালালের শট বক্সের মধ্যে ওড়িশার থৈবার হাতে লাগায় পেনাল্টি পায় লাল-হলুদ। গোল করতে ভুল করেননি গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। সমতায় ফেরার পর এগিয়ে যাওয়ার মতো ফুটবল খেলতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বরং রক্ষণ নিয়ে চিন্তা থাকবেই ইস্টবেঙ্গল কোচের। আনোয়ার, হিজাজিদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব কলিঙ্গ স্টেডিয়ামেও দৃষ্টিকটু দেখিয়েছে।
প্রভাত লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার আগেই অবশ্য পিছিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ৬৯ মিনিটে আহমেদ জাহুর নেওয়া ফ্রি কিকে মাথা ছুঁইয়ে ওড়িশাকে এগিয়ে দেন মুরতাদা ফল। ১০ জন হয়ে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সমতা ফেরানো কঠিন হয়ে যায়। সমতা ফেরাতেও পারেননি ব্রুজোর ফুটবলারেরা। দ্বিতীয় গোল খাওয়ার পর কিছুটা এলোমেলো ফুটবল খেলতে শুরু করেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। প্রভসুখন গিল একাধিক বার দলের নিশ্চিত পতন রোধ করেন। না হলে আরও বড় ব্যবধানে হারতে হত ইস্টবেঙ্গলকে।
হারতে হারতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দলের হাল ফেরাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে ব্রুজোকে। হয়তো ফুটবলারদের থেকেও বেশি। লাল-হলুদ রক্ষণের অবস্থা উদ্বেগজনক। মাঝমাঠ এবং আক্রমণ ভাগ মন্দের ভাল। তবে প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে সুযোগ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে না পারলে বিপদ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের নিজেদের উপর বিশ্বাস ফিরে পেতে হবে। যতটা সম্ভব ভাল খেলার চেষ্টা করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে হবে। শুরুর ১০-১২ মিনিটের আগ্রাসী ফুটবলে যে লাভের লাভ হয় না, তার প্রমাণ ওড়িশা ম্যাচ।