দিল্লির রাজেন্দ্রনগরের কোচিং সেন্টারে বেসমেন্টের জমা জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন পড়ুয়ার। তাঁরা আইএএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন ওই পড়ুয়ারা। সেখানেই আচমকা ঢুকতে শুরু করে বৃষ্টির জল। অনেকে বেরিয়ে গেলেও তিন জন বেরোতে পারেননি। তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বেসমেন্টেই। মৃত পড়ুয়ারা হলেন, তানিয়া সোনি (২৫), শ্রেয়া যাদব (২৫) এবং নেভিন দালউইন (২৮)।
ঠিক কী ঘটেছিল দিল্লির ওই কোচিং সেন্টারে?
পুলিশ জানিয়েছে, কোচিং সেন্টারটির বেসমেন্টে একটি লাইব্রেরি ছিল। সেখানে শনিবার সন্ধ্যায় পড়তে গিয়েছিলেন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন পড়ুয়া। আচমকা সেখানে বৃষ্টির জল ঢুকতে শুরু করে। বেরিয়ে আসার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি অনেকেই। কেউ কেউ সাধারণ ভাবে বেসমেন্ট থেকে উঠে আসতে পেরেছিলেন। বাকিদের উপর থেকে দড়ির সাহায্যে তুলতে হয়েছে।
কোচিং সেন্টারের বেসমেন্ট অন্তত নয় ফুট গভীর ছিল বলে খবর। তার প্রায় পুরোটাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল শনিবার। প্রবল বৃষ্টির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। খবর দেওয়া হয় দমকল এবং পুলিশকে। পুলিশ বেশ কিছু ক্ষণ উদ্ধারকাজ চালানোর পরে প্রথমে দুই তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। তারও কিছু ক্ষণ পর জল থেকে তোলা হয় এক ছাত্রের দেহ। তখনও ওই বেসমেন্ট প্রায় সাত ফুট জলমগ্ন ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। বেসমেন্টটি পুরোপুরি জলে ভরে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে বাধা পায় দমকল এবং পুলিশ। পাম্পের মাধ্যমে সেখান থেকে জল তোলা হচ্ছিল।
শনিবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট কিছু ধারায় মামলা রুজু করেছি। এখানে ফরেন্সিক দল এসেছে। ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। গোটা ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হবে। এখনও পর্যন্ত আমরা দু’জনকে আটক করেছি।’’
দিল্লির দমকলবাহিনী সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিট নাগাদ তাদের কাছে রাজেন্দ্রনগর থেকে ফোন যায়। বলা হয়, কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জমা জলে কয়েক জন পড়ুয়া আটকে পড়েছেন। দমকল যে সময়ে পৌঁছেছিল, তত ক্ষণে বেসমেন্ট সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল।
কী ভাবে বেসমেন্টে এত জল ঢুকল, কেন পড়ুয়ারা বেরিয়ে আসার সময়টুকুও পেলেন না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ডিসিপি হর্ষবর্ধন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পুরো বেসমেন্টে এ ভাবে এত জল কী করে ঢুকল, তা তদন্তসাপেক্ষ। প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে, খুব দ্রুত জল ঢুকেছে। সেই কারণেই পড়ুয়ারা লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসার সময় পাননি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে দিল্লিতে। বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বেশি বৃষ্টিতেও যাতে বেসমেন্টে জল না ঢোকে, সাধারণত তার বন্দোবস্ত থাকে কোচিং সেন্টারগুলিতে। কোনও দরজা আচমকা খুলে গিয়ে রাজেন্দ্রনগরের সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকেছিল কি না, কোথাও কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিন জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে কোচিং সেন্টারের সামনে শনিবার রাত থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অন্যান্য পড়ুয়ারা। রবিবার সকালেও প্ল্যাকার্ড হাতে সেন্টারের সামনে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁদের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে দিল্লিতে আপ বনাম বিজেপি তরজা শুরু হয়েছে। এই ঘটনার জন্য আপ সরকারের অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছে বিজেপি। আপ মন্ত্রী অতিশী ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।