প্যারিস অলিম্পিক্সে নিজেই নিজের চ্যালেঞ্জার কিশোর, নীরজের সতীর্থ খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন!

কয়েক দিন বাদেই শুরু হবে প্যারিস অলিম্পিক্স। পুরুষদের জ্যাভলিন থ্রোয়ে এ বার নীরজ চোপড়ার পাশাপাশি ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের নজর থাকবে কিশোর জেনার দিকেও। ২০২২ সালের এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী কিশোরও পদক জয়ের অন্যতম দাবিদার। যদিও তিনি কিছু দিন ধরে সেরা ফর্মে নেই। কিশোর অবশ্য আত্মবিশ্বাসী।

জ্যাভলিনের বিশ্ব ক্রমতালিকায় সাত নম্বরে রয়েছেন কিশোর। ৮৫ মিটারের বেশি দূরত্বে জ্যাভলিন ছুড়তে পারলেও শেষ ছ’টা ইভেন্টে এক বার ৮০ মিটারের বেশি ছুড়েছেন। বছরের সেরা ফল ৮০.৮৪ মিটার। গত আন্তঃরাজ্য মিটে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে কিশোরের দাবি, ‘‘অলিম্পিক্সের প্রস্তুতি প্রতিযোগিতাগুলোয় সকলে চেষ্টা করে টেকনিক্যাল ভাবে ঠিক জায়গায় থাকতে। ফিটনেস বজায় রাখতে। ভুল-ত্রুটি শুধরে নিতে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরে নিতে। চোট-আঘাত যাতে না লাগে, সেই ভাবে খেলার চেষ্টা করে। আগে সেরা ফর্মে পৌঁছে গেলে অলিম্পিক্সে সমস্যা হতে পারে। ঠিক সময়ে সেরা ফর্মে থাকা প্রয়োজন। প্যারিসেই নিজের সেরাটা দেব। আমি আত্মবিশ্বাসী। নিজের সেরা পারফরম্যান্স আরও উন্নত করাই থাকবে লক্ষ্য। সেটা করতে পারলে পদক জিততেই পারি।’’

কিশোর জানিয়েছেন, টোকিয়ো অলিম্পিক্সে নীরজের সোনা জয়ই তাঁকে উৎসাহিত করেছিল। তিনি বলেছেন, ‘‘নীরজ সোনা জেতায় আমরা সবাই খুব আনন্দ করেছিলাম। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, ‘দু’জনে একই খেলা খেলি। নীরজ কত এগিয়ে গেল। আমি পারছি না।’ তখনই ঠিক করেছিলাম, আমাকেও নীরজের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। তার সুফল পেয়েছি গত এশিয়ান গেমসে। এ বার আমি তৈরি।’’

তারও আগে অবশ্য খেলাই ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন কিশোর। ২০২১ সালের জুলাইয়ে লেবাননের একটি প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে। সেখানে সোনা জিতলেও টোকিয়োর টিকিট পাননি। জ্যাভলিন ছুড়েছিলেন ৭৮.৯৬ মিটার দূরত্বে। কিশোর বলেছেন, ‘‘লেবাননে নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। ৭৯ মিটারও ছুড়তে পারিনি। নিজের যোগ্যতা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। কঠোর পরিশ্রম করেও ফল পাচ্ছিলাম না। সে সময় বাবা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। উৎসাহ দিয়েছিলেন। না হলে হয়তো খেলাই ছেড়ে দিতাম। অন্য কিছু করার কথা ভাবতাম।’’

২০২২ সাল পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও ৮০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারেননি। ২০২৩ সালের মার্চে প্রথম বার ৮০ মিটার অতিক্রম করেন তিনি। ইন্ডিয়ান গ্রাঁ পিতে জ্যাভলিন ছুড়েছিলেন ৮১.০৫ মিটার। আর থেমে থাকেননি কিশোর। দেশের অন্যতম সেরা জ্যাভলিন থ্রোয়ার বলেছেন, ‘‘ওই থ্রো আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। তার পর জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কায় একটা প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলাম। শেষ চেষ্টায় ৮৪.৩৮ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়েছিলাম। তাও বুদাপেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি। তার জন্য ৮৫.২০ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়তে হত।’’

সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলেও কিশোর বুদাপেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে নেমেছিলেন। সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রমতালিকার নিরিখে। তা নিয়ে কিশোর বলেছেন, ‘‘বুদাপেস্টে সোনা জিতেছিল নীরজ। ৮৭.৫৪ মিটার দূরত্বে জ্যাভলিন ছুড়েছিল। আমি ৮৪.৭৭ মিটার ছুড়েছিলাম। পদক না জিতলেও খুশি হয়েছিলাম। তার পর এশিয়ান গেমসে ৮৭.৫৪ মিটার ছুড়ে রুপো জিতলাম। ওই সাফল্যই আমাকে প্যারিসের টিকিট এনে দেয়। তার পর পরিশ্রমের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন নিয়মিত ভাবে ৮৫ মিটারের উপরে জ্যাভলিন ছুড়তে পারছি। আমি আত্মবিশ্বাসী। প্যারিসে নিজের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করব। আমাদের লক্ষ্য থাকবে এশিয়ান গেমসের মতো দুটো পদক নিয়ে আসার।’’

আগে থেকে পদকের কথা ভেবে নিজেকে চাপে ফেলতে চান না কিশোর। প্রস্তুতিতে খামতি রাখছেন না। চিন্তিত নন অন্য প্রতিযোগীদের নিয়েও। প্যারিসে নিজেকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পদক নিয়ে আসতে চান কিশোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.