মহারাষ্ট্রে জারি হল রাষ্ট্রপতি শাসন। দুপুর থেকেই গুঞ্জন চলছিল রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসনের পথেই হাঁটতে পারেন। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতে তা পেশও করেন রাজ্যপাল।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারির সুপারিশে সিলমোহর দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। রাষ্ট্রপতি এই সুপারিশে সই করতেই ৩৫৬ ধারা জারি হল গোটা মহারাষ্ট্রে। আপাতত ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলেও পরবর্তীকালে তা আরও ছয় মাস বাড়াতেও পারেন রাজ্যপাল।
১৯ দিন ধরে সরকার কে গড়বে এই দড়ি টানাটানির মাঝেই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ায় বিস্মিত রাজনৈতিক মহল। বিজেপি, শিবসেনা দুই দলই সরকার গড়তে ব্যর্থ হওয়ায় মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে সুযোগ পেয়েছিল শরদ পাওয়ারের এনসিপি। সরকার গড়তে ২৪ ঘণ্টার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধেও দেন রাজ্যপাল। এই সময়সীমা শেষ হত আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায়। কিন্তু, তার তিন ঘণ্টা আগে কার্যত নাটকীয় ভাবে মহারাষ্ট্রে জারি হল রাষ্ট্রপতি শাসন।
সরকার গড়ার ক্ষেত্রে আসন সংখ্যা কম আছে এমন যুক্তি দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে রবিবারেই নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে বিজেপি। বিজেপির পরে সেই দিনই শিবসেনাকে ডেকে পাঠান রাজ্যপাল। এরপরেই একের পর এক মোড় আসতে শুরু করে মারাঠা রাজনীতিতে। শিবসেনাকে সরকার গড়ার জন্য মাত্র ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দেওয়া হয়। এনসিপির প্রধান শরদ পাওয়ার এবং শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠকও হয়। সরকার গড়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সমর্থন চায় দুই দলই। প্রথমে সমর্থনের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত সরকারী ভাবে সমর্থন থেকে পিছিয়ে এসে আলোচনার কথা বলে কংগ্রেস।
অপরদিকে শিবসেনা রাজ্যপালের কাছ থেকে অতিরিক্ত সময় চাইলেও তা প্রত্যাখান করে দেন ভগত সিং কোশিয়ারি। এনসিপিকেও সরকার গড়ার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তা শেষ হবে আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায়। কিন্তু, এত কম সময়ে প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন এনসিপি নেতারা। ফলে রাষ্ট্রপতি শাসনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনীতিবিদরা। মঙ্গলবার সকালেই অসুস্থ শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতকে দেখতে হাসপাতালে যান এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। আর এতেই নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। শিবসেনার সঙ্গে এনসিপি এখনও কি রফাসূত্র বের করতে চাইছে এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল।
মহারাষ্ট্রের সরকার গড়তে বিজেপিকে রাজ্যপাল তিন দিন সময় দিলেও শিবসেনাকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র এক দিনের চরম সময়সীমা। আর এই বৈষম্যের প্রতিবাদে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে উদ্ভব ঠাকরের দল। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলছেন তারা।
কংগ্রেস-এনসিপির মধ্যে সরকার গড়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার সকাল থেকেই। ২৪ঘণ্টার চূড়ান্ত সময়সীমার মাঝেই সরকার গড়তে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এনসিপি। শিবসেনা,কংগ্রেস দুই পক্ষের সঙ্গেই সকাল থেকেই বৈঠকে বসছিলেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। কংগ্রেস-এনসিপিকে সমর্থন করবে শিবসেনা?
মারাঠাভূমিতে তৈরি হবে নতুন সমীকরণ? এই ধরনের নানা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজনীতিক মহলে। সরকার গড়ার ক্ষেত্রে বিজেপির ‘অস্বস্তিকর নৈঃশব্দ’ নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। আর এর মাঝেই মহারাষ্ট্রের সিংহাসনে কে বসবেন এই নাটকের যবনিকা কিন্তু লিখলেন রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি।