বিবাহ : চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক না অচ্ছেদ‍্য জীবন বন্ধন

সামাজিক যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অবশ‍্যই সেই সমাজের জীবন পদ্ধতির প্রসঙ্গ প্রথমেই এসে পড়ে। কারণ বিশ্বের মনুষ‍্যগোষ্ঠীর বিভিন্নতা অনুসারে চিন্তার পার্থক্য হয়। তার একটা তো প্রধান কারণ বিশ্বের ভূপ্রকৃতি সর্বত্র অভিন্ন নয়। প্রাকৃতিক কারণেই জলবায়ুও স্থান অনুসারে পার্থক্য-বিশিষ্ট। এই সব কারণেই জীবন যাত্রার ধারাতেও তারতম্য এসে যায়। নদীজল ধারা বেষ্টিত কোমল পেলব ভূমি এবং অপেক্ষাকৃত রুক্ষ শুষ্ক ভূপ্রকৃতি-বিশিষ্ট অঞ্চলের জীবন ধারা প্রাকৃতিক ভাবেই ভিন্ন। তার আরও একটা বড় কারণ দুই অঞ্চলের ফল ও ফসল ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের হতেই দেখা যায়। শুধু মানুষের জীবন পদ্ধতিই নয় অঞ্চল ভেদে জীব বৈচিত্র্যও প্রাকৃতিক। যে প্রকৃতি জীবন নির্মাণ করে সেই প্রকৃতিই জীবন যাপনের পদ্ধতি প্রেরিত করে প্রতি প্রাণীর অন্তরে। প্রাণীদের প্রকারভেদে তাদের শক্তিরও তারতম্য থাকে। শক্তি কায়িক আবার বৌদ্ধিক – এই দুপ্রকারের। মানুষ যেহেতু বিশেষ প্রাণী তার বৌদ্ধিক শক্তির ভাণ্ডার অনেকই বড় এবং বহুধা প্রসারিত। তাই সে প্রাকৃতিক সম্পদের রূপান্তর ঘটিয়ে আপন উপযোগিতা পূরণ করতে পারে। তার আছে চিন্তন শক্তি, সেই শক্তি তার আত্মপ্রসার ঘটাতে প্রেরিত করে।
সেই জন্যই মানুষ অন‍্য প্রাণীদের মতো গোষ্ঠীবদ্ধতাতেই আটকে থাকেনি, সে সমাজ নির্মাণও করেছে। সমাজ নির্মাণ সম্ভব হয়েছে পরিবেশগত অবস্থা এবং অবস্থানকে কেন্দ্র করেই। ভারতবর্ষ যেহেতু অবস্থানগত করণে একটু বেশি পরিমাণে প্রকৃতির সহায়তা পেয়েছে তাই তার অধিবাসীদের সহজ খাদ‍্য লাভ, অবসর জীবন এবং তার ফলস্বরূপ আত্মমননে সহায়তা করেছে। সাধারণ ভাবে বিশ্বের সর্বত্রই মানুষ ঈশ্বর নামক এক অলৌকিক সত্তার কথা ভেবেছে, এবং তাদের বিশ্বাস হয়েছে সেই ঈশ্বর এই বিশ্বলোকের স্রষ্টা এবং স্বাভাবিক ভাবেই মালিক। ভারতবর্ষবাসী জ্ঞানীবর্গ নিশ্চিত হচ্ছেন ঈশ্বর কোনও লৌকিক সত্তা নয়, সর্বত্র তাঁর অবস্থান, সবই তাঁর ইচ্ছার প্রকাশ। অথচ তিনি অবাঙমানসগোচর। মানুষের জীবনের যা কিছু ঐশ্বর্য সবই ঈশ্বরদত্ত। তিনি মঙ্গলময় বলেই মানুষের জীবনের যা কিছু সবই ঈশ্বরের অনুদান। মানুষের হাত পা প্রভৃতি যেমন নিজেদের ইচ্ছায় কিছু করে না মানুষও তেমনি সেই অলৌকিক শক্তির নিয়ম মেনেই সব করছে।
এই ভাবনা এবং বোধ ভারতীয় সমাজকে সর্ব বিষয়ে যুক্তিবাদী ঈশ্বরানুগ করেছে। জীবন অদৃশ্য কোনও এক মহাশক্তি-নিয়ন্ত্রিত–এই চিন্তা মানুষের সর্বকর্মে প্রতিস্থাপিত বলেই ভারতের সাধারণ জীবন চর্চাতেও প্রচলিত কথা হল, “জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিনই বিধাতা নিয়ে” অর্থাৎ জীবনের তিনটি মৌলিক ঘটনাই বিধাতার বিধান। কখন হবে, কোথায় হবে, কবে হবে। জন্ম মৃত্যু না হয় হ’ল মানুষের ইচ্ছার অধীন নয়, জেনে যাওয়া ব্যাপার, মেনে নেওয়া গেল, কিন্তু বিবাহটা কেন হবে? এ তো মানুষের ইচ্ছাধীন ব্যাপার–করুক না করুক অন‍্য কোথাও এর নিয়ন্ত্রণ নেই! ভারত-মানস অবশ্য এমনটা ভাবেনি। বিবাহ হল জীবনের আরও একটি পূর্ণতা, জীবন যাপনের পদ্ধতি এবং শুধু তাই নয় সৃষ্টি রক্ষার প্রকৃতি নির্দেশিত প্রক্রিয়া। অবিসংবাদী মিলন প্রক্রিয়া। এ কথা বিশ্বের সব অঞ্চলেই অন্যরূপে হলেও স্বীকার্য, যেখানে বলা হয় চুক্তি–একজন নর ও নারীর মধ্যে মাত্র। সেখানেও প্রশ্ন আসে কীসের চুক্তি? উত্তর সেই একটা–জীবন যাপনের; দুজন দুজনের জীবন যাপনের সহযোগী। এই সহযোগিতার চুক্তি ভারতীয় বিবাহ সিদ্ধান্তেও। ভারতের জীবনদর্শন অগ্নিকে পরম শক্তি হিসেবে গণ‍্য ও মান‍্য করে বলে স্বামী-স্ত্রীর জীবন যাপনের চুক্তি হয় অগ্নি সাক্ষী করে। কারণ সে চুক্তি অলঙ্ঘনীয়। চুক্তির সঙ্গে শপথ থাকে। বিবাহকে যে মন্ত্র-পরিপূর্ণ করা হয় তাতেই শপথ থাকে, তার সামান্যই উল্লেখ করেছি–যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম।
এ সকলেরই একটা তাৎপর্য আছে। ভারতীয় জীবনে বিবাহ কেবল একজন পুরুষের সঙ্গে একজন নারীর মিলন মাত্র নয়, সমগ্ৰ জীবন পরস্পরকে সহযোগিতা ও সংরক্ষণের চুক্তি মাত্র নয়, দুটি পরিবারের অচ্ছেদ‍্য বন্ধনও বটে। আত্মীয়তা অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর স্বজনবর্গের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যারা যেখানেই থাকুক আত্মজন সম্পর্কে একাত্মবোধ করে সকলেই। পৃথিবীর অন‍্যদিকে কোথাও এমনটা হয় কিনা জানা নেই। ভারতীয় জীবনপদ্ধতির বিবাহ ভাবনায় এটাই সবচেয়ে বড় মাধুর্য। সম্পর্ক প্রসারিত হয়, গোষ্ঠী পরিব‍্যাপ্ত হয়, আত্মজনের পরিধি যায় বেড়ে। এটাই হল ভারতীয় সমাজ জীবনে বিবাহের মর্ম কথা।
স্থূল ভাবে দেখতে গেলে ভারতীয় বিবাহ সূত্রের মূল কথা হল জীবন নির্মাণ। এই পৃথিবীতে যতদিন প্রাণ সংযোগে দেহে ততদিনই জীবন। এটা প্রাণীমাত্রের জন‍্যই সত্য। কিন্তু মানুষের জীবনের জন্য নানা ব‍্যবস্থা প্রয়োজন, তার জন্য আয়োজনও বিভিন্ন রকমের। কারণ মানুষ জীব জগতের গরিষ্ঠতম প্রাণী বলে তার দিনযাপন মাত্র জীবনযাপন নয়। সেখানে নানা বিধি নানা মাধুর্য। সে সবই মানুষকে নির্মাণ করে নিতে হয়। সে নির্মাণের সূচনা পর্ব হচ্ছে আহার্য নির্মাণ, অতঃপর বাস্তু নির্মাণ–এইভাবে নানা পথ বেয়ে জীবন নির্মাণ চলতেই থাকে। এসব এককের কর্ম নয়। সঙ্গী প্রয়োজন, যে সঙ্গী হবে মূলেরই অংশ, অবিভাজ্য অংশ।
প্রকৃতির সৃষ্টি এই রকম যে, অবিচ্ছেদ্য যে হবে সে সঙ্গিনী। সঙ্গী বটেই, তবে কাজটা পরিপূর্ণ পুরুষের নয়, প্রাকৃতিক ভাবেই নয়। ধারক নয়, জীবনে চাই ধারিকা। ধারিকা শক্তি হিসাবে স্ত্রী, প্রকৃতির সৃষ্টি। সেই সত্য পরিচয়ের জন‍্যই রক্ষক শিবের সঙ্গে সংযুক্তি অন্নপূর্ণার। তিনি সংরক্ষণমূর্তি, তাই শিব প্রয়োজন মতোই ভিক্ষাপাত্র ধারণ করে ত়াঁর কাছে প্রার্থী। এই হ’ল ভারতীয় বিবাহের যৌথ জীবন। জীব সৃষ্টির প্রয়োজনে প্রাণীর চেতনায় দেহমিলনের লিপ্সা প্রাকৃতিক, তাই ভারতীয় বিবাহে তা স্বাভাবিক বলে গুরুত্বহীন। বিবাহ তো জীবনে জীবনেং সংযোজন। যে সংযোগ প্রেম, প্রীতি, সহমর্মিতা–পরস্পরের সংযোগ ঘটিয়ে দেয় আমৃত্যু অবিচ্ছিন্ন সত্যে জীবন নির্মাণ করার জন্য, সেই সংযোগই বিশ্ব নির্মাণ করায়, রূপান্তর ঘটাতে সাহায্য করে বিশ্বলোকের।
পুরুষ বহুমুখী, বহির্মুখীও সে কার্যকারণ যোগে। তাকে জীবন গঠনের জন্য রসদ সংগ্রহ করতে হয়; এ করতে গিয়ে বহু যোগাযোগ, বহু কর্মের সঙ্গে লিপ্ত থাকতে হয়। বহু জনসংযোগ করতে হয়, তার জন্য বেগ ও উদ্বেগ দুটোই হয় তার সারাদিনের সঙ্গী। সব সে অকুণ্ঠ চিত্তে করে, কারণ ঘরে আছে তার লক্ষ। সেখানে তার প্রতীক্ষায় আছে ঘরণী ও স্বজনেরা। তাদের কাছে আছে শান্তি, তৃপ্তি, নিশ্চিন্ততা। ঘরে ফিরেই ঘরণী থাক বা কন্যা থাক বা থাকুন জননী, তার কাছে–এক গ্লাস জল দেবে? সবই তো নির্মিত জীবনের অংশ। সেই জল যখন আসে, তাতে থাকে অমৃতের আস্বাদ। দিনের ক্লেশ মুছে যায় সেই অমৃতের স্পর্শে। এই হল জীবন।
নতুন মানুষ আসে সংসারে বিবাহ যোগে। যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন কিন্তু কোনও নারী আর সাধারণ একজন মহিলা থাকেন না। তিনি মা হয়ে যান, জননী। অকস্মাৎ তার জীবনে পর্বান্তর ঘটে। শুধু ঘরণী মাত্র নয়, জননী হচ্ছে সেই শক্তি সমগ্ৰ সভ‍্য জগত যাঁকে জীবনের শীর্ষে স্থান দেয়,
“যে হাত শিশুর দোলনা দোলায়
সেই হাত বিশ্ব চালায়”
-একথা কেন? মা জীবন নির্মাণ করেন, সে প্রেরণা এবং শক্তি সকল নারীর জীবসত্তার মধ্যেই জন্মসূত্রে নিহিত থাকে। সে নারী যে কোনও প্রাণীই হোক না কেন সন্তান হওয়া মাত্র মনুষ‍্যেতর প্রাণীদের মা-কেও প্রেরিত করে সদ‍্যোজাত সন্তানের জীবনের দিশা নিয়ন্ত্রণের। একটি শিশু গোবৎস মায়ের কাছ থেকে সরে গেলেই গাভী তার কাছে দৌড়ে যায় তাকে আগলাতে। হস্তী মাতা তার শাবককে শুঁড় দিয়ে কাছে টেনে নেয়, যখন পথ চলে শাবককে রাখে আপন পেটের তলায়। কুকুরও তার সন্তানকে আগলায়। সাধ‍্যমত পরিচর্যা করে জিহ্বা লেহন করে। প্রতি প্রাণী শাবকই খাদ‍্য চেনে মাকে অনুসরণ করে। পাখি মায়েরা তো শাবকদের মুখে খাবার এনে দেয় মুখে করে। এই তো প্রকৃতি, সৃষ্টির নিয়ম তন্ত্র। মানুষের তরুণী মা আপন সন্তানের সঙ্গে কথা বলে আপন প্রেরণাতেই, অবুঝ শিশু সেই শব্দ শোনে অপলক দৃষ্টিতে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। তাই তো বিশ্বের সকল প্রাণীর মুখের ভাষা-ই মাতৃভাষা। যে প্রাণীর যেমন, সে প্রাণীর তেমন; মানুষের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক, আপন গোষ্ঠীর মতো।
প্রাণী জীবনের শিক্ষার সূত্রপাত মায়ের অনুকরণে, মায়ের দেখানো দিশাতে। চঞ্চল শিশুকে রক্ষার মাধ্যমে তাকে বিপদ সম্পর্কে অবহিত করানোয়, তাকে খাদ্যাখাদ্য চেনানোতে – যা বেঁচে থাকার মৌলিক সূত্র। আর সেই জন্যই ভারতবর্ষের জীবন দর্শনে প্রজ্ঞা বলছে, “নাস্তি মাতৃসম গুরু”। পরিণত জীবনে মানুষ যত কথাই শিখুক আদি গুরু হলেন মা। নির্মিত কোনও মূর্তি নয়। প্রাণধাত্রী জননী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে ভূমিতে সকল প্রাণীর আশ্রয় লাভ, প্রাণ ধারণ, খাদ্য সংস্থান, সেই ভূমিও সেইজন্যে ভারতীয় প্রজ্ঞার কাছে মাতা। তাই উচ্চারণ, “জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী।”
মানুষের পিতা থাকে, অন্য প্রাণীর পিতা থাকে না। তার কারণ, যিনি পালন করেন তিনিই পিতা। বিবাহ সূত্রে জীবন নির্মাণের মধ্যেই স্বামী-স্ত্রী মধ্যে সন্তানও এসে যায় সৃষ্টির নিয়মে, যৌথ জীবনের প্রার্থনায়। সেই প্রার্থিত সন্তানকে মা যেমন পালন করেন তার সহযোগী হতেই হয় স্বামীকেও। সন্তান প্রতিপালনের সমান দায়িত্ব তাঁরও, সে দায়িত্ব মায়ের মতো প্রত‍্যক্ষ না হলেও অবশ্যই অনেক বেশি। কারণ তিনিই বৃক্ষ যা সংসার ধরে রেখে সমস্ত নির্মাণ শৈলীর সংস্থাপক, স্থপতি। তিনি নির্মাতা, সংরক্ষণের দায়ও সম্পূর্ণই তাঁর। কারণ তিনি পিতা, পালন করেন বলেই পিতা। নির্মাণের পরিকাঠামো যেমন তাঁর, তার সুষ্ঠু সুরক্ষাও তাঁরই দায়। তাঁকে দেখেই তো সন্তান গড়ে উঠবে, বেড়ে উঠবে। সন্তান যখন সমাজে ছড়িয়ে যাবে সকলে যেন সপ্রশংস স্বরে বলে, ওর বাবা অমুক ব‍্যক্তি। গুণী ব‍্যক্তির যশোভাগী হয় সন্তান, এটা লক্ষ রাখা প্রত‍্যেক পিতার কর্তব্য, আবশ্যিক। যশ সকলে অর্জন করতে পারে না কিন্তু গুণ মানুষের প্রয়াস লভ্য, সকলেই গুণান্বিত হতে পারে। আত্মসমালোচনা প্রত‍্যেক মানুষের মানসিক উৎকর্ষতা, সেটা আপন ত্রুটি সংশোধন করতে সাহায্য করে। আত্মশোধন বুদ্ধিমান মানুষের স্বাভাবিক গুণ; অবোধ এবং নির্বোধরা আত্মসমীক্ষা করতে পারে না, তারা নিজের সম্পর্কে কেবল তৃপ্তি লাভের কথা ভাবে। যাতে যার তৃপ্তি, সুখানুভূতি, তাতেই তাদের আকর্ষণ সীমাবদ্ধ। অবোধেরা অপকৃষ্ট প্রাণী–মানুষ নয়, লোক। লোকজন। যাদের দিন যাপনের সঙ্গে অন্য প্রাণীদের পার্থক্য সামান্যই। খেচর ভূচর উভচরে যা পার্থক্য। প্রভেদ সেই প্রকারই। তাই সেখানেও পিতা থাকে না বললেই চলে।
এই শ্রেণীর দ্বিপদ প্রাণীদের ‌জীবন দর্শন হচ্ছে, জীবন দিয়েছেন যিনি আহার যোগাবেন তিনি-গোছের অর্থাৎ‌ “ধরে খা”, “চরে খা”। সেখানেস্ত্রী লিঙ্গের প্রাণীরা মা হয় না, গর্ভধারিণী হয় মাত্র। পুরুষরা তো প্রবৃত্তি তাড়িত প্রাণী ব‍্যতীত কিছু নয়। এই অপকৃষ্ট প্রাণীরা সামাজিক সম্পর্কের হিসাবে গণ‍্য হয় না। সমাজ জীবনে এরা প্রকৃতই বর্জ্য,আপনি অচ্ছুৎ হয়ে পড়ে। এদের নারী-পুরুষ সম্পর্কে কোনও প্রথা নির্দেশ নেই, জীবন বোধ নেই বলে এরা সমাজ জীবনের অন্তর্গত নয়। ওদের দেহ মিলন মনুষ‍্যেতর প্রাণীর স্বাভাবিক প্রেরণা। বন্ধন শুধু শরীর ভিত্তিক প্রয়োজনে বাঁধা।
বর্তমান সময়ে ‘ব‍্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ’ শব্দটি যেন একটা টঙের উপর বসে আছে। তাতার-মোঙ্গলদের পরাধীনতা ভারতীয় সমাজ ও জীবনে একটা প্রচণ্ড আঘাত। কারণ খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর প্রায় একহাজার তিনশো বছর আগে পর্যন্ত ভারতবর্ষ সাংস্কৃতিক দিক থেকে অভিন্ন এক জাতি সত্তার বহু গোষ্ঠীর দেশ ছিল, যারা শান্তিতেই আপন জীবন যাপন করত নিজ নিজ আঞ্চলিক পদ্ধতি অনুসারে। কিন্তু সাংস্কৃতিক ভাবগত ঐক্য সমন্বিত সূত্রে বাঁধা বলে একই সঙ্গে তিথি ধরে উৎসব পালন করত, নিজ নিজ খাদ্য রুচি পরিচ্ছদ পরিধান, স্বভাষার সম্পর্কিত নৃত্যের মাধ্যমে।একই ঈশ্বর বিশ্বাস তাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে রেখেছিল শান্তিপূর্ণ নীতি বোধের মাধ্যমে। সনাতন জীবন প্রথার যে বিবর্তন হবার তা সর্বত্রই একইভাবে ঘটত। কিন্তু তাদের মৌলিক চিন্তায় কোনও প্রভেদ ছিল না। উত্তর দক্ষিণ থেকে পূর্বপশ্চিম পর্যন্ত একই বিধান কার্যকরী ছিল। ঈশ্বর সর্বময়, তাই তারা সর্বত্র ঈশ্বর এবং সর্ব কর্মে ঈশ্বরকে স্মরণ করত। কিন্তু তাতার-মোঙ্গল প্রভৃতি অঞ্চলের দস‍্যুবৃত্তি প্রবণ স্বল্পবোধ লোকেরা লুণ্ঠন করতে এসে যখন এদেশ দখল করে তাদের ভোগলালসার নিবৃত্তি করতে লাগল তখন তাদের মধ্যে ছিল ধংসাত্মক প্রবৃত্তি। তারা বিজিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাজের ওপর তাদের প্রবৃত্তি অনুসারে প্রবল নিপীড়ন চালাতে লাগল। তাতে এদেশের জ্ঞান চর্চা যা ছিল ঈশ্বর চর্চার সঙ্গে সংযুক্ত তার ওপরই চলল অভাবিত, অদৃষ্টপূর্ব, নির্মম নির্যাতন। ফলে বিধ্বস্ত মানুষ নিজেদের সমাজ ব্যবস্থাকে গুটিয়ে নিয়ে আত্মরক্ষা করতে চাইল শামুক, গুগলি বা কচ্ছপের মতো করে। বর্বর বাদশাদের না ছিল প্রাকৃতিক জ্ঞান, না শিক্ষা লাভের মানসিকতা। তারা এদেশেও জ্ঞানমার্গ এবং চিন্তাকে হতমান করে নারী লোলুপতার উদ্‌ভ্রান্ত বিলাসের বশে বিজিত জাতিকে বাধ্য করল মহিলাদের গৃহবন্দি করতে। মৈত্রেয়ী, গার্গী, অপালা, বিশ্ববারার উত্তরসূরী আর জন্মাতে পারল না, বরং মানুষ মনে করল, আমাদের জীবনে যেমন “মাতৃবৎ পরদারেষু” বলে অপরের স্ত্রীকে মায়ের মতো মনে করা হয় ওই লোকগুলোও বুঝি তেমনই–তাই বিবাহিতা নারীর সম্ভ্রম রক্ষা হবে। এর মূলেও আছে ভারতীয় জীবন দর্শনের উপলব্ধি “আত্মবৎ মন্যতে জগৎ”–”মানুষ সকলকে নিজের মতো ভাবে”। কিন্তু চেঙ্গিস-তৈমুর প্রভৃতি বর্বরের উত্তরাধিকার নিয়ে যারা
ংভারতবর্ষের বুকের ওপর বিজয়ী বাদশাহ হয়ে বসেছিল, তাদের ছিল অতি নীচ ‘জীবন’ দর্শনের উত্তরাধিকার, সেখানে বিজিত মানুষের মহিলারা ‘মাল-এ-গনিমত’ অর্থাৎ ডান হাতে লুঠ করা ধন। কাজেই আমাদের দেশের সম্ভ্রমবোধসম্পন্ন বীরাঙ্গনাবৃন্দ অগ্নিতে আত্মাহুতি দিয়ে সম্ভ্রম ও দেশের মর্যাদা রক্ষা করতেন। জীবনবোধ, ধর্মবোধ, মর্যাদা হারানোর চেয়ে জীবন দান মহত্ত্বের–এই বিশ্বাসে তাঁরা দৃঢ় ছিলেন বলে এখনও ‘সতী’ শব্দটি সম্মানীয় ও পূজ‍্য হয়ে আছে।
দীর্ঘ আটশো বছরের বর্বর নিষ্পেষণের পর ইউরোপের সভ‍্যতা আমাদের মুক্তির পথ হয়ে মূর্খদের শাসনের নিষ্পেষণ থেকে আমাদের রক্ষার কারণ হয়ে দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ শাসন ও পাশ্চাত্য সংযোগের একশো বছর পর সাংস্কৃতিক সত্তায় অভিন্ন ভারত জাতীয় রাষ্ট্ররূপে স্বদেশীয়দের হাতে আসে। পৃথিবীতে নিরবচ্ছিন্ন ভাল বা সম্পূর্ণরূপেই মন্দ বলে কিছু নেই। মন্দে ভালয় মেশানো থাকে সর্বত্র সব বস্তু বা ব‍্যবহারিক জীবন। তাই প্রাচ‍্য বিশ্বের পক্ষে যা স্বাভাবিক ও অভ‍্যাস সিদ্ধ, প্রতীচ‍্যে তার ব‍্যাত‍্যয় প্রাকৃতিক অভ‍্যাস। যেখানে নারীসমাজ মুক্ত, স্বচ্ছন্দ বিচরণে অভ্যস্ত। সেই ভাবনাও আমাদের মধ্যে এসে প্রতীচ‍্যের জীবন ভাবনা আমাদের অনেকাংশ প্রভাবিত করল। তাদের বিজ্ঞান যেমন আমাদের সমৃদ্ধ করল তেমনই হাজার বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্ত হলেন আমাদের মহিলারা। সেখানেও এল বিপ্লব–নারী শুধু মুক্তির স্বাদেই তুষ্ট রইলেন না, এলেন প্রতিস্পর্ধী শক্তিতে সমুন্নত হয়ে। তবে আমাদের যে জীবন চেতনা, সমাজ ভাবনা এত বছর ধরে চাপা পড়ে থাকা তৃণের মতো বিবর্ণ ও শীর্ণ হয়ে গিয়েছিল তার পুনর্জাগরণ আর সম্পূর্ণরূপে ঘটল না। তারই মধ্যে প্রতীচ‍্যের বস্তু বিজ্ঞানের ক্রমোন্নতির কল‍্যাণে জনসংখ্যা পীড়িত ভারতখণ্ডেও পাশ্চাত্যের বস্তুতান্ত্রিক জীবনধারার বিকাশ এসে প্রতিষ্ঠা দিল ভোগবাদের। ভারতীয় জীবনদর্শনে ছিল, ভোগের দ্বারা ভোগস্পৃহার উপসম হয় না, ত‍্যাগের দ্বারা সংযমের মাধ্যমে তাকে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়, তাই ত‍্যাগ করে ভোগ করবার নির্দেশ রইল না স্বাধীন আমাদের মনে, মানসিকতায়। ভোগোপকরণের ব‍্যাপক উৎপাদন ভোগস্পৃহাকে ক্রমাগত বিস্তৃত করতে লাগল মানুষের মনে। ফলে মানুষ প্রলুব্ধ হয়ে পড়তে থাকল। লোভ ও লালসাকে অত‍্যধিক প্রশ্রয় দিলে সে তখন মনুষ‍্যত্বকেই গ্ৰাস করে।
সেটাই ক্রমশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সমাজে তথাকথিত শিক্ষাপ্রাপ্ত লোকেদের মধ্যে। যথার্থ শিক্ষা, ভারতীয় সমাজ জীবনের যা সম্পদ ছিল, হাজার বছরের পরাধীন শোষিত, নিপীড়িত, বিধ্বস্ত সমাজ জীবনে তা আর অবশিষ্ট নেই। নতুন ভারতীয় সমাজ গড়ে উঠেছে ইউরোপের অনুসরণ করে, পাশ্চাত্য জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। সেখানে প্রাথমিক শিশু শিক্ষাতে একথা নেই ‘মাতৃ দেবো ভব’ ‘পিতৃ দেবো ভব’ ‘অতিথি দেবো ভব’ ‘বিদ‍্যা বিনয়ং দদাতি, বিনয়ং দদাতি পণ্ডিতম্’, সে শিক্ষাতে নেই ‘মাতৃ ঋণ পিতৃ ঋণ অপরিশোধ‍্য’– প্রত‍্যেক মানুষ সমাজের কাছে ঋণী কারণ সমাজ তাকে শিক্ষা দেয়, লালন পালন করে। পাশ্চাত্য জীবনে কৈশোর কেটে গেলেই স্বতন্ত্র হও, একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী সংগ্ৰহ করে আপন মনের মতো করে চুক্তি করে ঘর বাঁধ। অর্থাৎ পাশব জীবন। পশুরা যেমন যে-ই মাত্র খুঁটে খেতে শিখল নিজের মতো ক’রে খাদ্য সংগ্ৰহ করে যেখানে পারে বেঁচে থাকে। তারপর যেহেতু তুমি পাখি বা ভূচর পশু নও, বছরে একদিন ‘ফাদার্স ডে’ ‘মাদার্স ডে’ করে দেখা করতে যেও বাবা বা মায়ের সঙ্গে। ভারতীয় জীবনে নরনারীর প্রেম-উত্তর বিবাহ এক মাধুর্য তা জীবনের অন্তিম পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্কে বাঁধা তো বটেই বরং সুমধুর কল্পনায় জন্মজন্মান্তরের বন্ধন বলে তার গভীরতা আরও বর্ধিত। পাশ্চাত্য জীবনের রূঢ় বাস্তবতায় যা হচ্ছে দুজনের মধ্যে চুক্তি–তোমাকে দেখে আমার ভাল লাগল, আমাকেও তোমার প্রয়োজন মনে হচ্ছে – চল যাই দুজনে ঘর বাঁধি বিয়ে করে নিই, যদিও না করলেও চলে, তবে সন্তানাদি হবে তো কাজেই বিয়েটা করে নেওয়াটা ভাল, তাদের একটা পরিচয় থাকবে।
বিয়েটা যেখানে দুজনের ভাল লাগার উপর নির্ভরশীল একটা চুক্তি মাত্র, সে ভাল লাগা দীর্ঘস্থায়ী নাও তো হতে পারে! হঠাৎ দেখা বা দূর থেকে দেখে ভাল লেগে মন মজে গেল, কাছাকাছি কিছুদিন থাকলে দেখাটা তেমন হতে না-ও পারে যেমন মনে হয়েছিল! তখন? চুক্তি শেষ। যে যার পথ দেখে নাও, খুঁজে নাও নতুন কোনও মনের মতো-কে! সহজ ব‍্যাপার! যদি প্রণয়ের কোনও ফসল ফলে থাকে! তবে সেই মানবককে ভর্তি করে দাও শিশুদের জন্য যে সব আবাস আছে যেখানে ভাড়া করা লোকে দেখাশোনা করে শিশুকে মানুষ করে দেয় – তার কোনও একটাতে। প্রাকৃতিক প্রেরণাতেই যখন জন্মেছে সে বড়ও হবে প্রকৃতির ধারাতেই। স্নেহ, প্রীতি, যতটুকু যা পাইকারি ভাবে অন্য সকলের সঙ্গে সামাজিক-সরকারি নিয়মে পায়, পাবে। তাতে যদি মমতাশূন্য মানুষ হয়, বা হিংস্র হয়ে হত‍্যাকারী হয় বা যুদ্ধবাজ হয়, তাতে কার কী? সময় মেনে নেবে, সমাজ বুঝে মেনে নেবে। মা বলে যদি কিছু না থাকে, বাবা বলে কেউ যদি সুরক্ষা বলয়ে ঘিরে না থাকে তবে সে সব সে জানবেই না মা কী বা পিতা শব্দটির কী অর্থ।
ক্ষণস্থায়ী বিবাহিত জীবনে বা প্রেমহীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাই স্থায়ী বিবাহ একটা বিরাট ব‍্যাপার। সেই জন্যেই পাশ্চাত্য দেশে বিবাহ বার্ষিকী এক আনন্দানুষ্ঠান, ভ্যালেন্টাইন ডে এক উৎসব – আমরা মূর্খতা বশে সেগুলো অনুকরণ করে চলেছি। বিশ্বের পশ্চিম অঞ্চলে ইউরোপে নাকি মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানীদের জন্ম ব‍্যাপক। কিন্তু ব‍্যক্তি জীবনের গুণাবলির বিকাশ কোথায় সেখানে? সন্তানের প্রতি কর্তব্য বোধ থাকলে কোনও পিতা মাতা অসংযমী ব‍্যবহার করতে পারে না। সুশিক্ষিত এবং সুসভ‍্য সংসারে বাবা মা কখনও নিজেদের মধ্যে কলহ করেন না, কারণ বাবা-মা’র মধ্যে অশান্তি শিশুদের মনে যন্ত্রণার উদ্রেক করে। তারা ব‍্যথিত হয় এবং বাবা-মা’কে ঝগড়া করতে দেখলে অনেক সময়েই কেঁদে ফেলে। সেই সব কারণে ভারতবর্ষে পাত্রপক্ষ বা পাত্রীপক্ষ পুত্রকন‍্যার বিবাহে সভ্রান্ত পরিবারের সন্ধান করতেন। সভ্রান্ত পরিবার কেবল অর্থনৈতিক ব‍্যাপারে ধনী মাত্রই নয় তাঁদের আচার-আচরণেও শালীনতা ও সম্ভ্রমবোধ উন্নত মানের হয়ে থাকে। মূর্খের বিত্ত অহমিকার ক্ষেত্র নির্মাণ করে, অপরপক্ষে প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে নমনীয় এবং সংযমী করে।
মানুষের জীবন সম্পূর্ণ ভাবেই একটা সমন্বয়। জীবনের ক্ষেত্রে সব কাজেই সমন্বয় করে অর্থাৎ অনেক অপছন্দকর ব‍্যাপারও মানিয়ে চলতে হয়, তবেই জীবন সুষ্ঠু ভাবে চলে। অনেক দুঃসহ অবস্থাও সহ‍্য করতেই হয়। অথচ কোনও সময়ে ভ্রষ্টবুদ্ধি বশে মিথ্যে স্বাতন্ত্র্য বোধ ও অধিকার বোধ নিয়ে স্বজনের সঙ্গে বিসংবাদে জড়িয়ে পড়ি যেটা বিবেচনা বোধ দিয়ে দেখলে বা বিচার করলে স্বচ্ছন্দে মিটে যেতে পারত। এমনটাই আজকাল ভুয়ো স্বাধীন চিন্তা মত্ত স্বামী-স্ত্রীর মধ‍্যেও হচ্ছে। পরীক্ষা পাশ করা শিক্ষিত লোকেদের মধ্যে এখন ওই ধরনের স্বাতন্ত্র‍্যবোধ প্রবল। যাকে একান্ত ভাবেই বুদ্ধিহীন স্বার্থপরতা বলে আখ‍্যাত করা উচিত এমন বহু ব‍্যাপারেই অতি পবিত্র জীবন সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তখন মিথ্যা অহঙ্কার গোঁয়ার্তুমীর পর্যায়ে পৌঁছে সন্তানদের স্বার্থ চিন্তাকেও মনে আনছে না। কারণ মা-বাবার বিচ্ছেদে সবচেয়ে সঙ্কটে পড়ে সন্তানরা। তারা প্রকাশ করতে না, পারলেও অসম্মানিত বোধ করে। অনেক স্বামীত‍্যাগ করা মহিলাকে দেখা যায় তারা ছেলে বা মেয়েকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করবার নামে বাপের সম্পর্কে নানা সত্য মিথ্যা কুৎসা করে বাবাকে ঘৃণা করতে শেখায়। কোনও সময় হয়ত স্বামীর কোনও দোষ থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় নির্দোষ স্বামীর সম্পর্ক আপন স্বার্থে ত‍্যাগ করা মহিলারা পিতার প্রতি কোনও দুর্বলতা যাতে সন্তানের না থাকে এবং নিজের দোষ ঢাকা যায়, সেই জন্যও নীচবৃত্তি অবলম্বন করে মিথ্যা কলঙ্ক আরোপ করেন স্বামীর তথা সন্তানের জনকের নামে।
কোনও মানুষই দোষশূন্য হতে পারে না। প্রত‍্যেক মানুষেরই উচিত আত্মসমীক্ষা করা। নিজের যদি কোনও ত্রুটি থাকে তা শুধরে নেওয়াই কর্তব্য। স্বামী-স্ত্রীর ব‍্যাপারটা সম্পূর্ণ বিশ্বাস-নির্ভর পবিত্র সম্পর্ক। সমস্ত পৃথিবীর মনুষ‍্য সমাজ এই সম্পর্কের ওপর নির্ভরশীল। অনেক ব‍্যাভিচারী পুরুষ বিনা কারণে স্ত্রীকে সন্তান সহ ত‍্যাগ করে তালাক দেবার নামে। কিছু নারীও আবার স্বামীকে শিশু সন্তানসহ ত‍্যাগ করে চলে যায় শারীরিক ভোগবাদী আকর্ষণে। যে কোনও কারণেই হোক বিচ্ছেদ ঘটা অতি নিন্দনীয় এবং ঘৃণ্য কাজ। কোনও আইন বা ধর্মীয় বিধানই এই ঘৃণ্য কাজের পাপাচারকে যুক্তি গ্ৰাহ‍্য করতে পারে না।

গুরুপ্রসাদ বিশ্বাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.