সাহিবগঞ্জ ঝারখণ্ডে অবরোধ: পাথর ছোঁড়া হল বিসর্জন মিছিলে, শ্লোগান দেওয়া হল “নারা-এ-তাকবীর” আর দু রকমের বর্ণন

১০ই অক্টোবর থেকে নানারকম মন্ত্রনা ও উড়ো খবরের স্রোতে আমার ইনবক্স ভরে গেল। বহু লোক সাহিবগঞ্জ ঝারখণ্ডে হওয়া অস্থিরতা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। খুব কঠিন হচ্ছিল কোনরকম তথ্য সংগ্রহ করা। সাহিবগঞ্জের এসপি বা ডিএম এর সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এখনও সম্পূর্ণ খবর আসা শুরু হয়েনি, যে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন মিছিল নিয়ে কিছু অশান্তি হয়েছে। শেষপর্যন্ত যখন খবর আসল, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পূর্ণ ভিন্ন বর্ণনার সাথে এল পুরো ঘটনাচক্র।

সাহিবগঞ্জের মুসলিম সম্প্রদায়ের বক্তব্য:

মুসলিম সম্প্রদায়ের বক্তব্য অনুযায়ী যখন কৃষ্ণানগর দুর্গা পুজা বিসর্জন মিছিল সাহিবগঞ্জ কলেজের সামনে দিয়ে পার হচ্ছিল, এক হিন্দু যুবক এক মুসলিমের দোকানে ঢুকে তলোয়াড় দিয়ে আক্রমণ করে। সেই যুবকের তলোয়াড়ের আঘাত দোকানের কাউন্টারে পড়ে ও মুসলিম দোকানি খুব জোর প্রানে বেঁচে যায়ে। মুসলিম সম্প্রদায়ের বক্তব্য যেহেতু সেই দোকানি পুজোর চাঁদা দেয়নি, তাই এই হামলা করা হয়। পুজো কমিটি সরাসরি এই অভিযোগ খারিজ করেছে।

মুসলিম সম্পদায় এও অভিযোগ আনে যে যখন বিসর্জন মিছিল মুসলিম অধিষ্ঠিত এলাকা দিয়ে পার হচ্ছিল তখন হিন্দু যুবকেরা উস্কানিমূলক শ্লোগান ও উস্কানিমূলক গান প্রভৃতি চালায়ে।

মুসলিম সম্প্রদায় আরো বলে যে হিন্দুরা বিসর্জন মিছিলে বাজি পোড়াচ্ছিল যার কারনে তাদের সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছিল।

আরো অনেক অভিযোগ আনা হয় যেমন হিন্দুদের মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকানে হামলা চালানো ইত্যাদি। যদিও কোনরকম জানমালের ক্ষতির কোন খবর নেই, মুসলিমরা এও বলে হিন্দুরা তাদের মসজিদের সামনের দিকে তলোয়াড় নিয়ে হামলা চালায়ে, দোকানপাট ভাংচুর করে, জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলা হয় ও সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়।

সাহিবগঞ্জের দুর্গা পুজো উদযাপন করা হিন্দু সম্প্রদায়ের বক্তব্য:

হিন্দু সম্প্রদায়ের বক্তব্য অনুযায়ী মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা বিজয়া দশমীর মিছিলে পাথর ছোঁড়া শুরু করে মিছিলে চলা গান বাজনাকে লক্ষ্য বানিয়ে।

হিন্দু সম্প্রদায় মুসলিম সম্প্রদায়ের থেকে দুর্গা পুজোর বিসর্জন মিছিলের ওপর এই পাথর ছোঁড়ার প্রতিরোধে পাল্টা জবাব দেয়। পাথর ছোঁড়া শুরু হয়ে যখন মিছিল সাহিবগঞ্জের বাটা রোড থেকে এল সি রোডের দিকে অগ্রসর হয়ে।

প্রভাত খবর, একটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম খবর করে যে মিছিল এল সি রোডের পৌছনোর পূর্বে, সাহিবগঞ্জের মুসলিম অধিষ্ঠিত এলাকা শুরু হওয়ার আগেই আর্য সমাজ মন্দিুরের কাছেই পাথর ছোঁড়া শুরু হয়ে যায়ে। যদিও এই খবরের সত্যতার পুষ্টি এখনও হয়ে নি, এই সকল তথ্যের ভিত স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম।

হিন্দু সম্প্রদায়ের বক্তব্য, হিন্দুদের প্রতিরোধ ও পাল্টাহিংসা ওই মুসলিম সম্রদায়ের পাথর ছোঁড়ার ঘটনাক্রমের পরেই শুরু হয় এবং দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়।

শ্লোগান বিতর্ক:

স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায় জয় শ্রীরামের ধ্বনি উচ্চারণ করছিল, তখন মুসলিম সম্প্রদায় “নারা-এ-তাকবীর” ও “আল্লাহ হু আকবর” এর ধ্বনি উচ্চারণ করছিল, যখন দুর্গা পুজোর মিছিল মুসলিম অধিষ্ঠিত এলাকা দিয়ে পার হওয়া শুরু হয়।

পুলিশ সাহিবগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছে, দুর্গা পুজোর এই অশান্তির পরে:

পুলিশ খুবই তৎপরতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে যখন সাহিবগঞ্জের এই অশান্তির খবর পেয়ছে। এলাকাতে প্রচুর পরিমানে পুলিশ অফিসার ও র‍্যাফ (আরএএফ) নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় সাংবাদিকদের কথায়ে, পুলিশ লাঠিচার্জ করতে ও কাঁদানে গ্যাসও ছাড়তে বাধ্য হয় পরিস্থিতি সামলানোর জন্যে। এরপরেই, পুলিশ বিসর্জন মিছিল তাৎক্ষনিক থামিয়ে, পরে আবার রাত্রি বেলায়ে সুরক্ষার সাথে মূর্তি বিসর্জন সুসম্পন্ন করায়। পুলিশ যখন এলাকাতে পৌঁছায়ে, তখন মিছিলের গান বন্ধ করিয়ে দেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার পরে, পুলিশ ফোর্স এলাকায় ব্যাপক ভাবে ফ্ল্যাগ মার্চ করে যাতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পুনরায় অশান্তির সৃষ্টি না হয়।

শুক্রবার ১১ই অক্টোবর, দৈনিক জাগরণের এক খবরের সুত্রে, মুসলিম সমুদায় এক বিরোধ সভার আয়োজন করে, তাদের দোকান ব্যাবসা বন্ধ রেখে। মজার ব্যাপার, এই শুক্রবারই এস পি নিজে হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের শান্তিবার্তা বৈঠকের ডাক দেন। খবরের সুত্রে জানা গেছে, মুসলিম সম্প্রদায় এই বৈঠকে অংশগ্রহন করতে অস্বীকার করে ও এস পি কে জানায়ে বৈঠক যেন সাহিবগঞ্জেই করা হয়। এরপরেই পুলিশ এস পি সাহিবগঞ্জের এল সি রোড যান ও দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক সম্পন্ন করতে সাহায্য করেন।

সাহিবগঞ্জের এস পি নতুন নিয়ম কানুন প্রযোজ্য করেন ধর্মীয় মিছিল সংক্রান্ত, দুর্গা পুজোও এর অন্তর্ভুক্ত:

স্থানীয় সংবাদ প্রভাতকরণের সুত্রে, এস পি সাহিবগঞ্জ নতুন নিয়ম প্রযোজ্য করেছেন ধর্মীয় মিছিল সংক্রান্ত। এস পি সাহিবগঞ্জের বাসিন্দাদের স্পষ্ট বার্তা দেন, যে নতুন নিয়মের আওতায়ে যে কোন ধর্মীয় মিছিল একটি নির্বাচিত দিনেই করতে হবে ও দিনের আলো থাকেতেই তা সম্পন্ন করতে হবে।

পরের দিন আবারও পাথর ছোঁড়া:

স্থানীয় সাংবাদিকদের কথায়ে, এস পি-র ডাকা শুক্রবার এই শান্তিবার্তা চলাকালীন পুনরায় পাথর ছোঁড়ার ঘটনা শুরু হয়। খুব শিঘ্রই সেই বার্তা সম্পন্ন করে, এস পি আবার পরিস্থিতি সামাল দিতে চলে যান।

স্থানীয় সাংবাদিকদের কথায়ে, এই পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটে যেখানে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল করা হয়েছিল। এই পাথর ছোঁড়ার ঘটনা শুরু করে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন, এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা এর পাল্টা জবাব দেয়। প্রভাত খবরের অনুসারে, কিছু রাউন্ড গুলিও চালাতে হয় পুলিশকে পরিস্থিতি সামলাতে। একবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার পরে সেখানে প্রচুর পরিমানে পুলিশ ফোর্স নিয়োগ করতে হয়।

গুজবের জন্যে পরিস্থিতি বেসামাল:

সাহিবগঞ্জের লোকজণের মধ্যে ভিতির পরিস্থিতি ছিল একটা গুজব ছড়াবার পরে, যে হাবিবপুরে নাকি কিছু যুবক অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে খোলাখুলি বাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শহরের নানা স্থানে বেশ কিছু দাঙ্গার গুজবও ছড়িয়ে পরেছিল। সেই সব গুজব ঠাণ্ডা করতেই এস পি বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে শহরের সেই সব স্থানে ফ্ল্যাগ মার্চ করেন। এবং এও নির্দেশ দেন যদি কেউ গুজব ছড়িয়ে ভ্রমিত করার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে।

হিন্দুদের এক হিংস্র দশেহরা:

যখন হিন্দুরা নিজেদের এই ঐশ্বর্য পালন করছে, একদল মুসলিম ব্যাস্ত ভক্তদের ওপরে হামলা চালাতে, তাদের বিশ্বাস ও ধর্মে আঘাত হানতে। এই আর্টিকেলে, আমরা হাইলাইট করলাম যে কি ভাবে শুধু দু দিনে, ৮ টি হিংসার ঘটনা ঘটে যায়, বিসর্জন মিছিলে পাথর ছোঁড়া থেকে মা দুর্গার মূর্তি ভাঙ্গা পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, মাংসের টুকরো পর্যন্ত ফেলা হয়েছে বিসর্জনের মিছিলের পথে। বহু বহু উপাসক ও ভক্তেরা এই নবরাত্রির ৯ দিনে উপোষ করে। তারা এই সময় কোনরকম মাংস ও পানিয় নেশা ইত্যাদি গ্রহন করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.