ঐতিহাসিকরা বলেন মানব বিবর্তনের ইতিহাস কয়েক লক্ষ বছর হলেও মানব সভ্যতার

ইতিহাস মাত্র কয়েক হাজার বছরের। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি গত কয়েক হাজার বছরে শম্বুক গতিতে হলেও গত মাত্র একশ বছরে এই অগ্রগতি লাভ করেছে… Quantum Leapএ।

এরোপ্লেন থেকে কম্পিউটার, জীবনদায়ি ওষুধ, চাঁদে পদার্পণ বা মঙ্গলে রোবট সবই গত এক শতাব্দীর। সাথে উন্নত হয়েছে সাহিত্য ,চলচ্চিত্র আর সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা।
বিজ্ঞান ,সাহিত্য ,সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদিতে উৎকর্ষের এক বিশ্ব স্বীকৃত মানদন্ড নোবেল পুরস্কার

১৯০১ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ৮৭৫ জন বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, সমাজবিজ্ঞানী এবং পিস এক্টিভিস্ট নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এঁদের ছাড়া মানুষ পড়ে থাকতো কয়েক শতাব্দী পিছনে।

মানব সভ্যতার এই উৎকর্ষ সাধনে ইহুদী জাতির অবদান…

১) ফিজিক্সএ ৫১ টি নোবেল পুরস্কার ( ২৬%)
২) কেমিস্ট্রি তে ৩৬ টি নোবেল পুরস্কার ( ২০%)
৩) মেডিসিন বা ফিজিওলজি তে ৫৫ টি নোবেল পুরস্কার (২৬%)
৪) অর্থনীতি তে ২৯ টি নোবেল পুরস্কার ( ৩৮%)
৫) শান্তিতে (পিস) ৯ টি নোবেল পুরস্কার( পিস্ ৯%)
৬) সাহিত্যে ১৪ টি নোবেল পুরস্কার ( সাহিত্য নোবেলের ১৩%)

সারা পৃথিবীতে ইহুদি জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটির কিছু বেশী

(প্রায় ৭০ লক্ষ ইজরায়েলে , বাদবাকী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে) ।

শুধুমাত্র ইরান যদি বয়কট করে “anything and everything of Jewish people “
তাহলে ইরানের শিশুদের পোলিও টিকা নেওয়া বন্ধ করতে হবে কারণ এটা এক ইহুদী বিজ্ঞানীর আবিস্কার। ইরানি নেতার হৃদযন্ত্র এবং ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসা হয় ইহুদী বিজ্ঞানীদের আবিস্কার করা ওষুধে।ডিপথেরিয়া থেকে কানের ব্যাথা , ব্রেন ড্যামেজ থেকে মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসা ,ইনসুলিন থেকে স্ট্রেপ্টোমাইসিন সবকিছুই ইহুদীদের।

মেডিসিনে ৫৫ টি নোবেল পুরস্কার ইহুদিদের।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া ছাড়া আর যে দেশটি ভারত কে সাহায্য করেছিল সেটি ছিল ইজরায়েল এবং অনেক দেশের আগে ৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে ইজরায়েল বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেয় এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়।

কিন্তু বাংলাদেশের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমেদ চিঠি দিয়ে ইজরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেন!

২০০৩ সালে বাংলাদেশী সাংবাদিক সালাহ চৌধুরী কে ইজরায়েল ভ্রমণের অপরাধে সাত বছরের জন্য জেলে পাঠানো হয়।

যে পাকিস্তান ১৯৭১ এ ৩০ লক্ষ জেনোসাইড করেছিল তার সাথে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে কিন্তু ইজরায়েলের সাথে নয় যারা মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একদম প্রথম দিকে ছিল।

ভারতের সাথে ইজরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালে। ভারত স্বাধীন হওয়ার দু-তিন বছর পর বিশ্ববিখ্যাত ইহুদী বিজ্ঞানী আইনস্টাইন নেহেরুকে অনুরোধ করেছিলেন ইজরায়েল এর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার,

কিন্তু নেহেরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী সবারই দ্বিধা ছিল। ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপকার পি ভি নরসীমা রাও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই সব ভন্ডামি তুচ্ছ করে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।

সেই থেকে ইসরায়েল ভারতের বন্ধু দেশ। ভারত লাভবান হয়েছে।বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি ,কৃষিক্ষেত্র , মহাকাশ গবেষণা ,ডিফেন্স টেকনোলজি এবং ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এ ইজরায়েলি সহায়তা ভারতকে সমৃদ্ধ করেছে এবং করছে।

১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিল যুদ্ধে ইজরায়েল একমাত্র দেশ যারা ভারতকে অত্যাধুনিক রাডার এবং স্যাটেলাইট দিয়ে সাহায্য করেছিল।

ইজরায়েল ছোট্ট একটি দেশ ,জনসংখ্যা মাত্র ৭০/৭৫ লাখ।

১৯৪৮ সালে ইজরায়েল তৈরি হওয়ার সাথে সাথে তাকে একযোগে আক্রমণ করে পাঁচ-পাঁচটি আরবদেশ -ইজিপ্ট ,লেবানন ,সিরিয়া জর্ডন এবং ইরাক।

জন্মের বছরেই তার মৃত্যু হওয়ার কথা। কিন্তু শিশু কৃষ্ণের কালিয়া বধের মত ইজরায়েল পর্যুদস্ত করে তার থেকে অনেক বড় আক্রমণকারী দেশগুলোকে।

১৯৬৯ সাল এবং Three NO ‘s -War of Attrition
“NO peace , NO recognition , NO negotiation -destroy the State of Israel ” ৬৩০ গুণ আয়তনে বড় আরব দেশগুলি রেজোলিউশন পাশ করলো…

ইজরায়েলের ধ্বংসই একমাত্র কাম্য। ১৯৬৭ সালে ইজিপ্টের প্রেসিডেণ্ট Gamel Abdel Nasser রণহুংকার দিয়ে, সাথে আরব দেশগুলিকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইজরায়েলের ওপরে।

যুদ্ধ স্থায়ী হল মাত্র ছ-দিন, আবার শোচনীয় পরাজয়। ইজিপ্টের বিমানগুলিকে সম্পূর্ণ ভাবে ধংস করে দিল ইজরায়েল।

৬ই অক্টোবর ১৯৭৩। আবার আক্রান্ত ইজরায়েল।
দিনটা ছিল “ইয়ম কিপ্পুর ” -ইহুদী ক্যালেন্ডারে এক পুন্য দিন। উৎসবের আমেজে মত্ত ইজরায়েলি সেনাবাহিনী প্রস্তুত ছিল না একযোগে ১২ টি আরবদেশের হটাৎ আক্রমনের।

ঘুরে দাঁড়াতে তাদের সময় লাগলো দু-তিনদিন। ইতিহাসে এটি “ইয়ম কিপ্পুর” যুদ্ধ নামে বিখ্যাত। যুদ্ধের ফলাফল সবার জানা।

এর আগের বছর ১৯৭২ সালের মিউনিখ অলিম্পিক চলাকালীন অংশগ্রহণকারী ১১ জন ইজরায়েলি এথলিটদের হত্যা করে ফিলিস্তানি সন্ত্রাসবাদীরা।এদের অস্ত্র , অর্থ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করেছিল কয়েকটি আরবদেশ।

        পরের ১৫ বছর ইজরায়েল পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে থাকা এই সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে এক এক করে হত্যা করে। *ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা!*

গাজার জেনোসাইড

একাধিক আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সাইড এফেক্ট এই গাজার অশান্তি। যে কোন সম্পর্কই খারাপ হয় একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস থেকে। আগেকার PLO এবং এখনকার HAMAS এবং ইজরায়েল কেউ কাউকে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। ইজরায়েল নিজের বাহুবলে বলীয়ান আর HAMAS কে সাহায্য করে আরব দেশগুলি। HAMAS প্যালেস্টাইনের জনবহুল জায়গা থেকে মিসাইল ছোঁড়ে ইজরায়েল লক্ষ্য করে। টেকনোলোজি তে বলীয়ান ইজরায়েলের আছে মিসাইল শিল্ড Iron Dome। তারা প্রতিহত করতে পারে সেই আক্রমণ।

যুদ্ধবিমান দিয়ে বম্বিং করে আসে হামাস অধ্যুষিত জায়গায়। হাজার হাজার প্যালেস্টাইনবাসীর মৃত্যুর বদলে ইজরায়েল রক্ষা করে তার নিজের দেশের নাগরিকদের।

আরবদের মানসিকতা এখনো সেই “তিন না”… “নো পিস, নো রিকগনিশন, নো নেগোশিয়েশন… ডেসট্রয় দ্য স্টেট অফ ইজরায়েল”।

ইজরায়েলের জবাব “….if we were to lay down our arms, there will be no Israel again” সুতরাং যুদ্ধ চলছে ,চলবে।

ইজরায়েল কার দেশ

প্রায় ৩৩০০ বছর আগে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন শহর জেরুজালেমে বাস করত আজকের ইহুদীদের পূর্বপুরুষেরা। হিব্রু ভাষী, একেশ্বর বাদী ইহুদীদের ধর্ম ছিল জুদাইসম (judaism ), বিশ্বে এটাই প্রথম আব্রাহামিক রিলিজিয়ন

প্রতিবেশী ছিল প্যাগান পূজারী আরবরা। ইসলামের আরবে আসতে তখন অনেক দেরি। প্রায় ২০০০ বছর আগে জেরুজালেম দখল করে রোমানরা। ইহুদীরা বিতাড়িত হয় স্বভূমি থেকে এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন সময়ে “ল্যান্ড অফ ইসরায়েল” কে শাসন করে রোমান, খ্রীষ্টান আর মুসলমান শাসকরা। জেরুজালেম একই সাথে জুদাইসম, ক্রিশ্চিয়ানিটি, ইসলাম, সামারিটানিজম, দ্রুজ আর বাহাই ধর্মের পবিত্র স্থান। পরে এটি দখলে আসে অটোম্যান সাম্রাজ্য আর ব্রিটিশদের। গত শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এবং চলাকালীন… জার্মানীতে হিটলারের হাতে নিহত হয় প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী ইতিহাসে যা “হলোকাস্ট” নামে পরিচিত।
অসংখ্য ইহুদী, জার্মানী থেকে চলে আসে আমেরিকা এবং ব্রিটেনে। যুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়ের পর আমেরিকা, ব্রিটেন আর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ইহুদীরা তৈরি করে আজকের স্টেট অফ ইসরায়েল, ১৯৪৮ সালে। “ফ্রম ল্যান্ড অফ ইসরায়েল” টু “স্টেট অফ ইসরায়েল”- মাঝে সময় কেটে গেছে ৩০০০ বছর বা তারও বেশী সময় ।
কিন্তু এই স্টেট অফ ইসরায়েল তৈরি করল আর এক সমস্যা।

ইসলামিক আরব দেশগুলির মাঝে এক আন-ইসলামিক jewish স্টেট মেনে নিতে পারেনি কোন আরব দেশই।

১৯৬৭ সালেই তারা আক্রমণ করে এই নব গঠিত দেশকে। সেই যুদ্ধের কথা আগেই লিখেছি। সেই যুদ্ধের ট্রাডিশন সমানে চলছে… জোর যার মুলুক তার মাঝখানে মারা পরে নিরীহরা।

বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ১৫০-১৬০ কোটি মুসলমান এবং প্রায় ১০০-১১০ কোটি হিন্দু বাস করে।
গত ১০০ বছরে জনসংখ্যা বাড়ানো ছাড়া এই বিশাল জন গোষ্ঠীদুটির ( হিন্দু + মুসলিম) অবদান কী ?

শিল্পে, পদার্থবিজ্ঞানে, রসায়নে, মেডিক্যাল সাইন্সে আর অর্থনীতিতে এদের অবদান প্রায় শূন্যের কাছাকাছি!

হিন্দুরা ব্যস্ত থেকেছে জাতপাত নিয়ে আর মুসলমানরা চিন্তিত কবরে শায়িত মৃত ব্যাক্তির ভবিষ্যত নিয়ে।

সঠিক পথে চলে ইহুদীরা আবিস্কারের নেশায় ডুব দিল।

অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তার ডাকতে যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করো, তার আবিস্কারক ইহুদী ইঞ্জিনিয়ার। তার নামটা জানতে নেটে সার্চ কর। ও হ্যাঁ , সার্চ ইঞ্জিনটাও এক ইহুদী বিজ্ঞানীর আবিস্কার।

যে ফেসবুকে ইহুদীদের গাল পাড়ে সেই ফেসবুকেরও আবিস্কর্তা
৩০ বছরের এক নাস্তিক ইহুদী যুবক …মার্ক জুকেরবার্গ।

… এদের কথা আরও একবার খোলা জানলায় মনশ্চক্ষু রেখে ভাবা যাক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.