নৌঘাঁটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল এক দশক আগেই। আফ্রিকা উপকূলের দেশ জিবুতির সেই ঘাঁটিতে চিনা ফৌজ এ বার যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েনের কাজ শুরু করেছে বলে দাবি করল আমেরিকার প্রতিরক্ষা দফতর। এর ফলে অদূরের ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনা প্রভাব বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে।
চলতি সপ্তাহে আমেরিকার কংগ্রেসে জিবুতির চিনা নৌঘাঁটিতে সামরিক তৎপরতা সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তার সঙ্গে দেওয়া উপগ্রহচিত্র বলছে, ইতিমধ্যেই সোমালিয়ার পড়শি ওই দেশে কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে ফেলেছে চিন। ওই নৌঘাঁটির পরিকাঠামো বলছে, সেখানে পিপলস লিবারেশন আর্মি বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবোজাহাজ মোতায়েনেও সক্ষম। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর গতিবিধি বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।
পূর্ব আফ্রিকার ছোট্ট দেশ জিবুতি। জনসংখ্যা মেরেকেটে ১০ লাখ। কিন্তু এর ভূকৌশলগত অবস্থান সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। ‘হর্ন অব আফ্রিকা’-র এই দেশটিকে। জিবুতির গা ঘেঁষে গিয়েছে বাব এল-মানদেব প্রণালী। প্রতিদিন ওই সরু প্রণালী দিয়ে লক্ষ লক্ষ ডলারের তেল ও তেলজাত দ্রব্যের জাহাজ যায়। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এই এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সোমলিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই এলাকার অদূরে টহলদারি চালায় ভারতীয় নৌবাহিনীও। চিনের আধিপত্যবৃদ্ধির ফলে তা ব্যাহত হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে জিবুতির উপকূলে বেজিং আধিপত্য বিস্তার করতে চাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির। দক্ষিণ চিন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালীতে নৌ আধিপত্য নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে মাঝে মধ্যেই গোলমাল বাধে চিনের। তার মধ্যে জিবুতির ঘাঁটি বাইডেন প্রশাসনের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে মনে করছেন সামরিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
যদিও আফ্রিকায় সামরিক আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্য গোড়া থেকেই আড়াল করা চেষ্টা করেছে শি জিনপিং সরকার। ২০১১ সালে জিবুতিতে সামরিক ঘাঁটি গড়ার কাজ শুরু করেছিল চিন। সে সময় চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, আফ্রিকার ওই দেশটির আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, গোটা আফ্রিকায় শান্তিরক্ষাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছিল, জিবুতির পড়শি দেশ সোমালিয়ার জলদস্যু উপদ্রুত এলাকাতেও অভিযান চালাবে চিনা নৌসেনা।