অস্ত্র হাতে ধরা মাওবাদীদের মোকাবিলা থেকে তাত্ত্বিক নেতৃত্বের রাজনৈতিক জবাব— দেশের অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা রক্ষায় হারাতে হবে সব ধরনের মাওবাদকেই। হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে (পরিভাষায় চিন্তন শিবির) দেওয়া ভার্চুয়াল ভাষণে এমনই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুক্রবার, রাজধানী দিল্লিতে বসেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে তিনি বক্তৃতা করেন চিন্তন শিবিরে। সেখানে মোদী বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে, প্রতিটি সরকারই দায়িত্বপূর্ণ ভাবে সন্ত্রাসের জাল ছিন্ন করেছে। একে ধরে রাখতে আমাদের শক্তির সমন্বয় প্রয়োজন। অস্ত্র উঁচিয়ে ধরা মাওবাদীদের পাশাপাশি পেন বাগানো মাওবাদী— আমাদের সমস্ত ধরনের মাওবাদকেই হারাতে হবে।’’
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ঘুরেফিরে আসে ভুয়ো খবরের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘একটি ভুয়ো খবর গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিতে পারে। কোনও কিছু অন্যকে পাঠানোর আগে কী করা উচিত, তা আমাদের মানুষকে শেখাতে হবে। কোনও কিছুকে বিশ্বাস করার আগে তার সত্যতা যাচাইও শেখাতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখন ৫-জি চলে এসেছে। অপরাধও অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অপরাধ রুখতে গেলে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে অপরাধীদের মস্তিষ্কের তুলনায় ১০ পা আগে থাকতে হবে। একমাত্র তা হলেই অপরাধ দূর করা সম্ভব হবে।’’
ইউপিএ আমলে মাওবাদীদের দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিপদ বলে অভিহিত করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এ বার কার্যত একই কথার প্রতিধ্বনি মোদীর মুখেও। এই সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজ্যের সমন্বয়ের উপর অতিরিক্ত জোর দেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দেন, বদলে যাওয়া দুনিয়ায় আইনশৃঙ্খলাকে আর কেবল মাত্র রাজ্যের এক্তিয়ারে বেঁধে রাখা যাবে না। সবাই মিলে একসঙ্গে অপরাধের মোকাবিলা করতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, এত দিন নকশালবাদ বা মাওবাদকে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে মোকাবিলার কথাই কেবল শোনা গিয়েছে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মুখে। এ বার প্রধানমন্ত্রী নিজে বললেন, তাত্ত্বিক নেতৃত্বের মোকাবিলার কথা।
প্রসঙ্গত, সরকার বিরোধী অবস্থান থেকে কোনও সমালোচনামূলক কথা বললেই তাঁকে শহুরে নকশাল (আরবান নকশাল) বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিজেপির প্রবণতা নতুন নয়। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারি সভায় এ বার কি সেই কথাই উঠে এল প্রধানমন্ত্রীর মুখেও?