রোমিলার বায়োডেটা চাওয়া দেশদ্রোহী চিহ্নিতকরণের পদক্ষেপ মাত্র

দেশের শিক্ষামহলে এখন গেল গেল রব উঠেছে। কারণ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের মহা-অপরাধ, তারা এমেরিটাস অধ্যাপক রোমিলা থাপারের বায়োডেটা জমা দিতে বলেছেন। অবশ্য শুধু রোমিলা নয়, সঙ্গে আরও এগারোজন অধ্যাপকেরও বায়োডেটা চাওয়া হয়েছে। এর কারণ আর কিছুই নয়, রোমিলা থাপারের মতো এমেরিটাস অধ্যাপক, যারা অবসরকালীন সময়েও অধ্যাপকবৃত্তির যাবতীয় সুযোগ পান আর গত পাঁচ বছরে ঠিক কী কাজ করেছেন, সেই তথ্য হাতে রাখতেই যাবে পরিভাষায় ‘ডেটাবেস’ বলা হয় জে এন ইউ কর্তৃপক্ষ এমন পদক্ষেপ করছেন, এতে নতুনত্ব কিছু নেই। কিন্তু সুকৌশলে ‘বিশ্ববন্দিত’ রোমিলা থাপারের যোগ্যতা যাচাই করতে চাইছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক— এই বার্তা রটানো হচ্ছে। এদিকে আবার রোমিলা জানিয়েছেন জে এন ইউ কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের ক্যারিকুলাম ভিটা বা সিভি জমা দিতে তিনি নারাজ।
সামান্য বিষয়ে এত গোল কেন? এতে কি রোমিলাদেবীর সম্মানে আঘাত লাগছে? এই প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় যদি তার সম্মানে আঘাত লাগে তবে প্রশ্ন ওঠে তা কি এতই ঠুনকো। আসলে আঘাতটা সম্মানে নয়, আঁতে ঘা লেগেছে। রোমিলা থাপার, ইরফান হাবিব, বিপান চন্দ্রদের ইতিহাসবিদ’ কিংবা অমর্ত্য সেনের ‘অর্থনতিবিদ’ পরিচয়ের আড়ালে আরও একটা সত্য থেকে থাকে, সেটা হলো এরা অতি বাম রাজনীতির ফসলমাত্র, যে রাজনীতি ভারতবর্ষের অগ্রগতির জন্য মূল প্রতিবন্ধকতার কাজ করছে। আর সেই কাজে রোমিলা থাপারের মতো ভারত-বিদ্বেষীরা তাদের ভূমিকা পালন করে। ফলে রোমিলার ‘এমেরিটাস অধ্যাপক’-এর মতো সম্মাননীয় পদ বাতিল হতে পারে এমন হাওয়ায় বাজার গরমের চেষ্টা হচেছ। কারণ এদের ‘ইতিহাসবিদ মুখোশটা খুলে গেলে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদে মদতদাতা মুখটি বাদে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।
যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতো বিখ্যাত ঐতিহাসিকেরা বামপন্থীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের চূড়ান্ত হেনস্থা করা হয়েছিল, কারণ তারা বামপন্থী ছিলেন না। ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো দুর্ভাগ্য স্বাধীনতা আন্দোলনে যারা বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকা নিয়েছিল, যারা দেশটাকে ব্রিটিশদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে টুকরো টুকরো করতে চেয়েছিল স্বাধীনতার পর তারাই হঠাৎসাধুবনে গেল এবং এই সাধুতার প্রকাশ ঘটানোর জন্য ইতিহাসটা বদলানো খুব জরুরি ছিল। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসই নয়, ভারতের প্রাচীন গৌরব ভুলিয়ে দিয়ে তাকে ক্ষীণ করে দেখাতে ষড়যন্ত্রের নতুন জাল বোনা শুরু হলো। এই চক্রান্তের মূল পাণ্ডা জওহরলাল নেহরু। ‘নেহরুর ভারত’ বলে বর্তমানে যে কথাটির খুব চল তা আদতে বামপন্থী ‘ঐতিহাসিকদের সৃষ্ট একটা জঘন্য ভারতবর্ষের ছবি।
এর কারণটা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। প্রাচীন গান্ধার রাজা বা আজকের আফগানিস্তান, কিংবা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ইত্যাদি ভারতের অখণ্ড অংশগুলি আস্তে আস্তে ইসলামের গ্রামে গিয়েছি। বাকি অবশিষ্ট ভারতকে ইসলামের গ্রামে নিয়ে যেতে পারলেই ষোলোকলা পূর্ণ হয়। জিন্নার সঙ্গে নেহরু রাজ্যপাট ভাগাভাগি করে নিয়ে বুঝেছিলেন ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হলে তার জমিদারি বেশিদিন টিকবে না। তাই প্রথমেই দরকার ইতিহাস ভুলিয়ে দাও। সেই পথে প্রতিবন্ধক জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকদের সরিয়ে দাও আর ষড়যন্ত্রী ‘ঐতিহাসিক’তৈরি করে ফেল। নেহরুর মৃত্যুর পর তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় সেই দায়িত্ব পালন করে চলছে। নেহরু কন্যা ইন্দিরা তার বাবার মান রাখতে সংবিধানে প্রবেশ করিয়েছিলেন ‘সেকুলার’ শব্দটি।
সাতষট্টি বছর ধরে এই খেলা চলেছে। যখন যে সরকার আসুক, এমনকি বাজপেয়ী সরকারের আমলেও দেশদ্রোহিতার সুতিকাগার জেএনইউ তার কর্তব্য পালন করেছে। গোল বাঁধল মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর। নেহরুর ভারত মুক্তির সন্ধান পেল মোদীর ভারতে। নেহরু-মোদী রূপক শব্দ মাত্র। আসলে জঘন্য, হীন ভারত থেকে গৌরবময় ভারতবর্ষ বা হিন্দুস্থান এই উত্তরণের আঁচ তো এতকাল মৌরসিপাট্টা চালানো জেএনইউ-তে পড়বেই। আর তার তাপেই এমন রোমিলারা পুড়ছেন, সুতরাং দেশদ্রোহীদের একটু জ্বলুনি তো হবেই।
হিন্দুরা অসভ্য, গোরুখেকো, আরও যা যা থিয়োরি আছে রোমিলা থাপারদের অত্যুৎসাহে তা প্রমাণের চেষ্টায় আপনি সহজেই বুঝবেন সত্যসন্ধী ঐতিহাসিকের ধর্ম এটা হতে পারে না, ইসলামিক ভারত গঠনের মনোবাসনাই এই ধরনের বিকৃত ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। যাঁর একমাত্র কাজ দেশের বিরোধিতা করা, আর হিন্দুদের গালাগালি দেওয়া এবং ইসলামিক মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক জিগির তোলা, তিনি ভারতীয়দের করের টাকায় এমরিটাস অধ্যাপকের স্বীকৃতি নিয়ে ভারতের খেয়ে-পরে তাদেরই দাড়ি ওপড়ানোর আর কী কী ব্যবস্থা করেছেন, দেশের মানুষের তা জানবে অবশ্যই অধিকার আছে। রোমিলার বায়োডেটা তলব দেশদ্রোহী চিহ্নিতকরণের অবশ্যই প্রথম ধাপ।
বিশ্বামিত্র-র কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.