রসগোল্লা খেয়ে ফেলার পর রস মাখা প্লেট ঘণ্টাখানেক ফেলে রাখলেই থিকথিক করে ছেয়ে ফেলে পিঁপড়েরা। সেই পিঁপড়েই গুনতে গেলে হিমসিম খেতে হবে। এ বার কিন্তু গোটা পৃথিবীর ‘পিপীলিকা-সুমারি’ করে ফেলার ‘অসাধ্য’ সাধন করে ফেলেছেন এক দল গবেষক। পৃথিবীতে যত পিঁপড়ে রয়েছে, বিশেষ পদ্ধতিতে তার সংখ্যা গুনে ফেলেছেন ওই জীববিজ্ঞানীরা। সংখ্যাটি হল ২০০০০০০০০০০০০০০০০। গুনে ফেলা সহজ কথা নয়।
পরিবেশবিদদের মতে, পৃথিবীতে পিঁপড়ে রয়েছে ডাইনোসরেরও আগের আমল থেকে। এখনও পর্যন্ত ১৫ হাজারের কিছু বেশি প্রজাতি এবং উপপ্রজাতির পিঁপড়ের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সারা পৃথিবীতে। কিন্তু সব মিলিয়ে তাদের সংখ্যাটা কত? এ বার পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বাসিন্দাদের সংখ্যা বার করলেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের মতে, প্রায় ২০ কোয়াড্রিলন (১ কোয়াড্রিলন=১ হাজার লক্ষ কোটি) পিঁপড়ে রয়েছে পৃথিবী জুড়ে। সংখ্যায় প্রকাশ করলে দাঁড়ায় ২০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০। গুনতে গিয়ে গুলিয়ে গেলে বা চোখ ধাঁধিয়ে গেলে জেনে নিন, ২-র পর ১৬টি শূন্য। অর্থাৎ, ২০ হাজার লক্ষ কোটি পিঁপড়ে রয়েছে পৃথিবীতে।
কী ভাবে পিঁপড়ের সংখ্যা গুনে ফেললেন গবেষকরা? গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘গোটা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে পিঁপড়ের বিভিন্ন প্রজাতি। বিভিন্ন সময়েই এই প্রাণীটির সংখ্যা কত তা ভাবিয়ে তুলেছে প্রকৃতিবিদদের। কিন্তু উপযুক্ত পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতার অভাব ছিল।’ গবেষকরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় পিঁপড়ে-ঘনত্ব কত, তা নিয়ে প্রকাশিত হওয়া ৪৮৯টি গবেষণাপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ওই সংখ্যা পেয়েছেন তাঁরা। তবে ঘুরপথে এই ধরনের গণনার মধ্যে ছোট বা বড় বিচ্যুতি থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় বলেও মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় পিঁপড়ের সংখ্যা বিভিন্ন রকম। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ক্রান্তীয় অঞ্চল অর্থাৎ গরম এলাকায় পিঁপড়ের সংখ্যা অন্যান্য এলাকার তুলনায় প্রায় ছ’গুণ বেশি। গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে যত পিঁপড়ে রয়েছে তার মোট ওজন এক হাজার ২০০ কোটি কিলোগ্রাম (৩০ লক্ষ ভারতীয় হাতির ওজনের সমান)। গবেষকরা লিখেছেন, ‘পিঁপড়ের এই বিশ্ব মানচিত্র আমাদের ভূগোল এবং পিঁপড়ের বৈচিত্র চেনাতে আরও সাহায্য করবে। এ ছাড়াও পরিবেশগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পিঁপড়েদের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাও বোঝা যাবে।’