মহম্মদ সেলিম, বিশিষ্ট সিপিএম নেতা, এক গুরুতর অভিযােগে সাইবার সেলের দারস্থ হয়েছেন। অভিযােগটা এমনই কয়েকবছর আগে তিনি যখন আমেরিকায় ছিলেন তখন সেখানকার একটি কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন পরিবারে গিয়ে ওঠেন। পরিবারটি যেহেতু ‘কমিউনিস্ট’ তাই সেলিম সাহেবের পাতে নাকি প্রতিদিনই গাে-মাংসের টুকরাে পড়ছিল। কিন্তু গােল বাঁধে সেলিমের মার্কিন প্রবাসের শেষ দিনে। অভিযােগ অনুযায়ী ওইদিন সেলিমের পাশাপাশি আরও জনাকয়েক অতিথি আমন্ত্রিত ছিল এবং মেনুতে গােমাংসের সঙ্গে শুয়ােরের মাংসও ছিল। এতেই নাকি বিস্তর চটে যান সিপিএমের পলিটব্যুরাে সদস্যটি ও টেবিল উল্টে ফেলে দেন। শেষে নাকি জনৈক ‘মুসলমান’-এর বাড়িতে গিয়ে নৈশাহার সারেন।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এহেন খবর সােশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়ে যায় এবং একটি ই-ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী এমন খবরে বেজায় চটে মহম্মদ সেলিম কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের দারস্থ হয়েছেন। ওই ওয়েব ম্যাগাজিনের খবর এও বলছে এই রটনাটি আমেরিকা থেকে হলেও হতে পারে। কারণ সেলিমের এই আচরণে কমিউনিস্ট পরিবারটি বেশ ক্ষুব্ধ হন, এরপর কমিউনিস্ট ভাবাদর্শ সম্পর্কে তাদের মােহভঙ্গ হয়, তারা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অনুরাগী হয়ে উঠে তাদের দান-ধ্যান করেন ইত্যাদি। সত্যি কথা বলতে কী, সােশ্যাল মিডিয়াতে এমন অনেক কিছুই শােনা যায়, যার বাস্তবিক ভিত্তি থাকে না।
মহম্মদ সেলিমের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছে কিনা আমাদের জানা নেই। প্রমাণের অভাবে এক্ষেত্রে সেলিম যে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন, তেমনটাও যেমন বলা যায় না, আবার সত্যিই এমন ঘটেছে কিনা তাও বলা মুশকিল। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রবণতা কিছু প্রশ্নের জন্ম দিতে বাধ্য করেছে। সােশ্যাল মিডিয়ায় কিছু খাওয়া-দাওয়া সংক্রান্ত গ্রুপ আছে। যাদের একটি সবে গজিয়ে ওঠা এবং আরেকটি একই গােত্রের জনপ্রিয় গ্রুপের নাম চুরি করে তৈরি হয়েছে। এই ধরনের গ্রুপে অবাধে গাে-মাংস রন্ধনের ছবি প্রকাশিত হয়, বলা বাহুল্য খাদ্যরসিকতা বা উৎকৃষ্টতার দিকে কোনাে লক্ষ্য তাতে থাকে না, এসব ‘পােস্ট’ মূলত উস্কানিমূলক। এক দলবদলু তথাকথিত কবি আর ভােটে হেরাে আইনজীবী দুই বিরােধী রাজনৈতিক গােষ্ঠীতে অবস্থান করেও মুসলমান প্রধান অঞ্চলে গাে-মাংস খেয়ে বীরত্ব দেখিয়েছিল। উল্টো দিকে হিন্দুরা গােরুর দুধ বিলি করেছিলন ধর্মতলার মােড়ে। একইভাবে সােশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দু-নামধারী ও মুসলমানদের গাে-মাংস প্রদর্শনের ছবি দেখেও শুয়ােরের মাংস পাল্টা প্রদর্শিত হয় না। সুতরাং কোন জনগােষ্ঠী শান্তিপ্রিয় সেটা বােঝা যায়। গাে-মাংসভােজী এই ‘হিন্দু নামধারী’দের সঙ্গে প্রকৃত ‘হিন্দুদের কোনও সম্পর্ক নেই। এরা একটি বিশেষ জাত, যাদের কমিউনিস্ট বা দেশদ্রোহী, যাই বলুন না কেন। এদের মূল লক্ষ্য সাম্প্রদায়িক উস্কানি, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও পাক-লবির দালালি।
একদা প্রকাশ কারাটের ব্লু আইড বয় নিজের ব্যক্তিগত ধান্দায় দেউলিয়া কমিউনিস্ট পার্টি থেকে আর কিছু পাবার আশা নেই বুঝে সরে গিয়েছিল, যাবার আগে বলে গিয়েছিল। মুসলমান কোটায় মহম্মদ সেলিম পলিটব্যুরাে সদস্য হয়েছে। নন্দীগ্রাম পর্বে রাজাবাজারে দাঁড়িয়ে সেলিমের উস্কানিমূলক মন্তব্য যার নিন্দে-মন্দ হয় তৎকালীন তারা টিভিতে, আর ব্যক্তিগতভাবে যারা এই ব্যক্তিটিকে চেনেন তারা সকলেই বলেন এনার কমিউনিজমের মধ্যে মুসলমানত্ব এমনই নাকি প্রবল যে নিজের কমপ্লেক্সের দুর্গাপুজোয় মুখও দেখান না। আসলে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।১৯২০ সালে তাসখন্দে মানবেন্দ্রনাথ রায় যে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন, তাতে ভারতীয়ত্বের ছােপ বিশেষ লাগেনি কারণ মানবেন্দ্রনাথ সহায়তা পেয়েছিলেন জেহাদের জন্য সেখানে যাওয়া একদল মুসলমানের যারা আসলে তাসখন্দে আটকে পড়েছিল এবং ওখান থেকে বেরােনাের জন্য কমিউনিস্ট পরিচয় তাদের খুবই দরকার ছিল।
এরাই মানবেন্দ্রনাথ রায়কে সুকৌশলে ব্যবহার করে। এবং যে কমিউনিস্ট পার্টিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতে ‘ভারতীয়’শব্দটি ছিল না, কিন্তু লােক গুলাে ভারতের বােঝাতে ‘কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া’র জন্ম হয়। এ জি নুরানি সাহেবের আর এস এস-ফ্যাসিস্ট সংযােগের মিথ্যাচার আর গাল গল্প তাে অনেক চলল। এবার কমিউনিস্ট-জেহাদি সংযােগের প্রকৃত তথ্য সামনে এলে পাকিস্তান দাবির সমর্থনে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরােধিতায় কমিউনিস্ট পার্টি আর মুসলিম। লিগের সৌহার্দ্যের ঐতিহাসিক পরিচয় পাওয়া যাবে। তাই একটা স্পষ্ট কথা আজ সকলের বােঝা উচিত, সেলিমের বিষয়টি সত্য হােক বা না হােক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে মুসলমান হয়ে থাকা চলে, কিন্তু হিন্দু হওয়া এই দলে গর্হিত অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয়। এদের ‘দেশদ্রোহিতার কারণটাও এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-08-22