আগের দিন রাত্রে অখিল ভরতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি)-র ‘ভারতমাতা পূজন’-এর মন্ডপ ভেঙে ফেলে নির্মীয়মাণ ভারতমাতার মূর্তিতে জল ঢেলে দিয়ে, মূর্তিশিল্পী সাতজনকে তুলে নিয়ে গিয়েও বিজেপির ভারতমাতা পুজো আটকাতে পারল না হাওড়ার শিবপুর থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে পুজো মণ্ডপে হাজির হয়ে সদলবলে কিছুক্ষণ থেকে পুজো হচ্ছে না ধরে নিয়ে পুলিশ ফিরে যাওয়ার পর নতুন মূর্তি এনে যথারীতি পুজো করছেন বিজেপি কর্মীরা।
এবিভিপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পায়েল ধর জানিয়েছেন, হাওড়া জেলার ডোমজুড় নগর শাখা দ্বারা কোনা হাইরোডে আজ ১৫ই আগষ্ট ভারতমাতা পূজন হওয়ার কথা ছিল। গতকাল পর্যন্ত তার সমস্ত প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু গত রাতে তৃণমূল আশ্রিত দূষ্কৃতিরা পূজো মণ্ডপ ভেঙে তছনছ করে দেয়। পরম আরাধ্য ভারত মাতার মূর্তি ভেঙে নোংরা আবর্জনায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। আজ স্বাধীনতা দিবসে গণতান্ত্রিক দেশে এরকম ঘটনায় আমরা লজ্জিত ও হতবাক। এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পুজোর আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাওড়া শিবপুরের ক্ষেত্র ব্যানার্জি লেনের কিছু যুবক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৩৭০ ও ৩৫A ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবসে ভারতমাতার পুজো করবে বলে ঠিক করেন। তাঁরা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার স্থানীয় ৪ নম্বর মণ্ডলের সভাপতি অভিজিৎ মুখার্জির সাহায্য নিয়ে পুজোর প্রয়োজনীয় অনুমতির জন্য গত শনিবার শিবপুর থানায় চিঠি জমা দেন। চার দিন পেরিয়ে গেলেও থানা থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয় না।
১৪ ই আগস্ট কাছেই মন্দিরতলা ব্রিজের ওপর মধ্যরাত্রে স্বাধীনতা দিবস পালন করতে টিএমসি নেতারা আসার পরে পরেই পুলিশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। শিবপুর থানার মেজ বাবু এবং তিন গাড়ি ভর্তি পুলিশ সেই এলাকায় এসে দেখেন ভারতমাতা পুজোর প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গেছে। অভিজিৎ মুখার্জি এবং অন্যান্য স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বকে প্রথমে বলা হয়, ভারত মায়ের পুজো করা চলবেনা। “ওপর থেকে তাদের উপর খুব চাপ আছে।স্বাধীনতা দিবস পালন করুন, পতাকা উত্তোলন করুন, রাখি বন্ধন করুন, কিন্তু ভারত মায়ের মূর্তি আনা চলবে না এবং পুজো করা চলবে না।”
রাত্রি সাড়ে দশটার সময় তারা চলে যায়, কিন্তু যাওয়ার সময় ভারত মাতার মূর্তি তৈরি করছিলেন যে শিল্পীরা তাদের সাত জনকে তুলে নিয়ে যায় এবং একটি মূর্তিকে জল দিয়ে ধুয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই শুনে বিজেপি নেতৃত্ব শিবপুর থানায় পৌঁছে যায়। তারপর দীর্ঘ বাকবিতণ্ডার পর ভোর সাড়ে তিনটের সময় সেই সাত জনকে ত়াঁরা মুক্ত করতে সক্ষম হন। তার পরেও ১৫ই আগস্ট সকাল থেকে মণ্ডপে পুলিশ পোস্টিং রেখে, সেখানে পতাকা উত্তোলন, রাখি বন্ধন উৎসব করতে দিলেও কোনও মতেই ভারত মায়ের মূর্তি আনতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়।
দুপুরবেলা ছেলেরা এলাকা ছেড়ে চলে গেলে পুলিশ ভাবে এদের কার্যক্রম শেষ হয়ে গেছে, তাই তারাও ব্যারাকে ফিরে যায়। সেই ফাঁকে ছেলেরা মায়ের মূর্তি বসিয়ে পূজা শুরু করে দেয়। সন্ধ্যার সময় সেখানে বিজেপি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু হাজির হয়ে মায়ের পুজো করেন। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ভারতমাতা পুজো আটকাতে এই পুলিশী তৎপরতার তীব্র নিন্দা করেন।
আজ দলের তরফে বিভিন্ন অঞ্চলে ভারতমাতা পুজো হওয়ার কথা। দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলায় থাকবেন বিজেপি-র রাজ্য নেতা প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এফ ১ করুণাময়ী সল্ট লেক, দলের অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহার থাকার কথা বেহালা, দমদম ক্যান্টনমেন্টে ভারতমাতার পুজোয়। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের থাকার কথা বঙ্গবাসী সিনেমা হলের পাশের এবং জগৎবল্লভপুরের পুজোয়।