নাঃ! নেহরুপন্থী ভারতের পঞ্চত্ব প্রাপ্তি আর ঠেকানো গেল না। ৩৭০ ধারার প্রথমাংশটুকু বাদে বাকিটা এবং সংবিধানের ৩৫এ ধারা বাতিলের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী ক্লেদাক্ত ভারতবর্ষের ছবিটা অনেকটাই পাল্টে গেল। স্বাধীনতার পরে বহিঃশত্রুর আক্রমণে ভারতবর্ষ যত না জর্জরিত হয়েছে, তার থেকে ঢের বেশি ঘরশত্রুর আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। স্বাধীন ভারতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো পার্লামেন্টেরিয়ান খুব কমই এসেছেন। ব্রিটিশ আমলেও এ জিনিস কোনওদিন কেউ কল্পনা করতে পারেনি পরিকল্পনামাফিক বিনা চিকিৎসায়, সম্ভবত বিষপ্রয়োগে কোনো রাজনৈতিক নেতাকে এমন ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা যেতে পারে, শেখ আবদুল্লা-জওহরলাল নেহরু তা করে দেখিয়েছেন। কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ বুঝতে পারেননি তার মুসলমান প্রজারা, আর রাজানুগত্যে পরিপূর্ণ নেই, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে জিন্নার সাহচর্যই তখন তাদের কাম্য। তাই প্রিন্সলি স্টেটের রাজবাহাদূর হরি সিংহের স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য গঠনের প্রাথমিক ইচ্ছাটুকু থাকলেও তিনি ভারতেরই হাত ধরতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের হাত থেকে বাঁচতে। বিস্তারিত ইতিহাসে যাব না, মিডিয়া আর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সকলেই তা জেনে ফেলেছেন; শুধু অভাগা ভারতের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি করি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরুর অমার্জনীয় ভুলে ভূস্বর্গ আর স্বর্গ রইল না, নারকীয় জঙ্গি তাণ্ডবের সাক্ষী হয়ে রইল বিগত ৭২ বছর ধরে। এই পরিস্থিতি এবার পাল্টাবে আশা রাখা যায়। এক দেশ দুই বিধান, দুই প্রধান, দুই নিশান— এতদিন এই ছিল ভারতের অঙ্গরাজ্য কাশ্মীরের প্রকৃত রূপ। কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এই ব্যবস্থা কি চালু আছে। যে সেই দেশের অঙ্গরাজ্য দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করবে, আবার স্বায়ত্তশাসনের যাবতীয় স্বত্বও তারা পেয়ে যাবে। যে স্বত্বেরবলে কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদ’ নামক একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টিকরা হলো, যে ‘জাতীয়তাবাদের বলি হলেন আমাদের দেশের অসংখ্য সেনা-জওয়ান, নিরাপত্তারক্ষী। শুধু তাই নয়, কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’ গোষ্ঠীর উদ্ভব হলো, এদের চিহ্নিত করা হতো বিচ্ছিন্নতাবাদী’ নামে, এখন বলা হয় ‘টুকরে গ্যাং’, দেশকে টুকরো টুকরো করাই যাদের লক্ষ্য, এই বিচ্ছিন্নতাবাদের এপিসেন্টার হলো কাশ্মীর, তারপর উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে এখন পশ্চিমবঙ্গে এরা সেফ হেভেন’ গড়ে তুলেছে।
ফলে দীর্ঘ ৭২ বছর ধরে কাশ্মীর ভারতের গলায় কাটা হয়ে আটকেছিল। আমেরিকার নাক গলানোর চেষ্টা, গণভোটের দাবি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরাজ্য কাশ্মীরকে ‘বিতর্কিত’করে তুলেছিল। কখনও রাষ্ট্রপুঞ্জ, কখনও চীন হামেশাই কাশ্মীরকে বাদ দিয়ে ভারতের মানচিত্র বাজারে ছেড়ে দিয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। আর এইসবের মূলে ছিল সংবিধানের দুই ধারা, ৩৭০ ধারার বি এবং সি অনুচ্ছেদ ও ৩৫ এ ধারা। ভারতে থেকে ভারতেরই খেয়ে পরে ভারতেরই সর্বনাশ করার এই ধারা অবলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে খসে পড়ল আরও একটি মিথ যার নাম ‘নেহরুপন্থী ভারত। যে ভারত বিশ্বের দরবারে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না করতে পারলেও ‘সেকুলারিজম’ নামক এমন এক বস্তু ভারতবর্ষে আমদানি করতে পেরেছিল যা ভারতকে দুর্বল করতে বহিঃশত্রুদের আর দরকার হয়নি, ঘরের শত্রুরাই যা করার করে দিয়েছিল।
এবার দিন বদলেছে। নেহরুপন্থী ভারত ক্রমশ তার খোলস ছেড়ে, ‘সেকুলারিজম’ নামক বিষবৃক্ষের মোহ ছেড়ে বিশ্বের দরবারে আত্মপ্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের নেতৃত্বে। এই ক্রমশ মহীরুহ হয়ে ওঠার যাত্রাপথ খুব সহজ নয়। মজার ব্যাপার ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদি’ বলে যে গোষ্ঠী বহুকাল লাফালাফি করেছিল, হঠাৎ করে তারাই অমিত শাহের ঘোষণার পর ভীষণভাবে গণতন্ত্রের ভাবনায় ভাবিত হয়েছে। ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হলে কাশ্মীর নাকি ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হবে, এমন রটনা চলছে। এতদিনে দেশের মানুষ ‘আরবান নকশাল’ রূপী জঙ্গিদের ওই দালালগুলোকে চিনে নিয়েছেন নিশ্চয়ই। অশান্ত কাশ্মীর শান্ত হবে কিনা, সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু ৩৭০ আর ৩৫এ ধারার বিলুপ্তি ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়েও বিশেষ সুবিধার মাপকাঠিতে বিতর্কিত বিষয় হিসেবে কাশ্মীরকে পরিচিত করার অপপ্রয়াস থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে বঞ্চিত করল।
মোদী-অমিত শাহের উদ্যোগে কালক্রমে ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদের অবসান ঘটবে, এ আশা করাই যায়। এক দেশে এক বিধান (সংবিধান বা আইন), এক নিশান (পতাকা) এবং একজনই প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) থাকবেন- শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্ন নিশ্চয়ই সার্থক হবে। ফলে নেহরুপন্থী ভারতের অবসান ঘটবেই, মহীরুহের মতো বিশ্বাসী ভারতের ছায়ায় একটু জিরোতে পারবেন; উন্নততর, সমৃদ্ধতর ভারতবর্ষের আবির্ভাব ঘটবে, কমিউনিস্ট মুক্ত বিশ্ব আর কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ দেশবাসী আপাতত তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করুন। আর গর্বভরে বলুন, কাশ্মীর আমাদেরই।
বিশ্বামিত্র-র কলম
2019-08-09