কাশ্মীরের পৃথক পতাকা বিলুপ্ত হল, থেকে গেল রক্তাক্ত ইতিহাস

৬৭ বছরের কথা। ৬৭ বছরের মাথায় পরিবর্তন। আর পৃথক পতাকা নেই। এখন এক দেশ এক জাতীয় পতাকা নির্দিষ্ট জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের জন্য।

নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পারে দুই কাশ্মীর। একটি পাকিস্তান অধিকৃত, অন্যটি জম্মু-কাশ্মীর। সাংবিধানিক আইনের বলে আলাদা পতাকা নিয়ে এতদিন কাটিয়েছেন এলওসি-এর দুই পারের কাশ্মীরিরা। সোমবার সাংবিধানিক আইনটি প্রত্যাহার করায় অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। সেই সঙ্গে আর বিশেষ পতাকা রইল না। যে পতাকা এতদিন ভারতের জাতীয় পতাকার সমান মর্যাদা পেত। তবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পৃথক পতাকা থেকে গেল।

সরকারি পদক্ষেপে আপাতত বিধানসভা বিশিষ্ট কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর। আর বিধানসভা ব্যতিরেকে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এলাকা হল লাদাখ। জনগোষ্ঠী ও ধর্মের ভিত্তিতে জম্মু হল হিন্দু-শিখ প্রধান, কাশ্মীর মুসলিম এবং লাদাখ বৌদ্ধ প্রধান এলাকা।

ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যাচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরই দুই দেশের মধ্যে পড়ে তৎকালীন রাজন্য এলাকা কাশ্মীর। পরে পাক হামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে কাশ্মীর রাজ সরাসরি ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে সায় দেন। প্রতি আক্রমণে হটে গিয়েছিল পাক হামলাকারীরা। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে তৈরি হয় নিয়ন্ত্রণ রেখা।

এ তো গেল জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখের ভারতে আসার কথা। কিন্তু অন্তর্ভুক্তি চুক্তির সঙ্গেই কাশ্মীরের তরফে পৃথক পতাকা রাখার বিষয়টিও স্থান পায়। ১৯৫২ সাল থেকে জম্মু-কাশ্মীর সরকার আলাদা পতাকার অধিকারী হয়েছিল।

অবলুপ্ত সেই পতাকার কথা:

জম্মু-কাশ্মীরে বার বার ক্ষমতায় আসা ন্যাশনাল কনফারেন্সের দলীয় পতাকার সঙ্গে মিল দেখে চমকে উঠতে হয়। আকার ও রঙে মিল যেমন রয়েছে, তেমনই পতাকায় থাকা পাখির অদ্ভুত সমাপতন। কিন্তু মূল পার্থক্য তিনটি রেখায়। এই অবলুপ্ত পৃথক পতাকায় থাকা তিন রেখায় চিহ্নিত জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখ তিনটি অঞ্চল।

লাল-সাদা রেখা দিয়ে তৈরি পতাকার সৃষ্টিতে রয়েছে রক্তাক্ত ইতিহাস। আট দশকের পুরনো সেই কথা।

পরাধীন ভারত। কাশ্মীর তখন দেশীয় রাজ্য। সেই রাজ্যের শাসক ডোগরা। অন্যদিকে ডোগরা শাসকদের বিরোধী অবস্থানও জোরদার হতে শুরু করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাওয়া গরম হচ্ছিল। আর কাশ্মীরের জনগণ চাইছিলেন প্রশাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তি। রাজনৈতিক দল হিসেবে ন্যাশনাল কনফারেন্স দ্রুত উঠে আসতে শুরু করে। বিপুল জন আন্দোলনে উত্তপ্ত কাশ্মীর জুড়ে চলছে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ।

১৯৩১ সালের ১৩ জুলাইয়ের দিন। শ্রীনগরে প্রবল বিক্ষোভ চলাকালীন ডোগরা শাসকদের পুলিশ ও রক্ষী বাহিনি আন্দোলন তছনছ করতে গুলি চালায়। তাতে নিহত হন ২১ জন। সেই থেকে দিনটি কাশ্মীরবাসীর কাছে ‘শহিদ’ দিবস হিসেবে পালিত হয়। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরেও দিনটি পালিত হয়ে থাকে।

ঐতিহাসিক তথ্যে মিলছে, সেই আন্দোলনের ঠিক আগে ১১ জুলাই ন্যাশনাল কনফারেন্স তাদের দলীয় পতাকা গ্রহণ করে। সেই পতাকা নিয়েই ১৩ জুলাই আন্দোলন হয়।

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য বিশেষ পতাকাটি স্বীকার করে নেয় ভারত সরকার। তবে সেই পতাকার সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্স দলীয় পতাকার পার্থক্য রাখতে তিনটি সাদা রেখা বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহরু ও জম্মু-কাশ্মীর সরকারের প্রধান শেখ আবদুল্লার পারস্পরিক সহমতের ভিত্তিতে জাতীয় পতাকার সঙ্গে এই বিশেষ পতাকা সমতুল্য হয়েছিল।

সেই থেকে বিশেষ সাংবিধানিক আইনের বলে ৫ অগস্ট, ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ধারা চলেছে। এবার একই তেরঙ্গা জাতীয় পতাকায় মুড়ে গিয়েছে ডাল হ্রদের দেশ।

প্রসেনজিৎ চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.