সীমান্ত সুরক্ষায় দ্রুততার সঙ্গে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে। শুক্রবার কলকাতায় রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, ভূমি সংস্কার দফতরের সচিবের সঙ্গে বৈঠকে এমনই জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা।
এদিনের বৈঠকে তিনটি বিষয়ে কথা হয় বলে সূত্রের খবর। সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া, চেকপোস্ট এবং আউটপোস্ট নিয়ে। সীমান্ত এলাকায় জমির সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয় এদিন। রাজ্যে আরও সাতটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট হবে। বাংলাদেশ নেপাল ভুটান সীমান্তে এই ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে তার জন্য প্রয়োজনীয় জমি দ্রুত চিহ্নিতকরণের নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। এই সাতটি জায়গায় ইতিমধ্যেই চেকপোস্ট থাকলেও এক ছাতার তলায় শুল্ক-সহ বিভিন্ন দফতর নেই।
ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরি হলে এই সাতটি জায়গাতে আরও আধুনিকভাবে একই ছাতার তলায় সমস্ত বিভাগকে এনে কাজ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা এদিন বলেন, সীমান্তের যে সমস্ত জায়গায় এখনও কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়নি। দ্রুত সেই কাজ শেষ করতে হবে।
এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি-সহ অর্থ বরাদ্দ করার নির্দেশও দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব। বিএসএফের পরিকাঠামোর জন্য যে জমি দরকার, সেই জমি অবিলম্বে রাজ্যকে দিতে বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। এদিনের বৈঠকে ছিলেন পুলিশের ডিজি-সহ সীমান্ত লাগোয়া দশ জেলার জেলাশাসকও। যদিও জেলা শাসকরা বৈঠকে ছিলেন ভার্চুয়ালি। প্রায় দু’ ঘণ্টা ধরে এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলে।
তবে এদিনে বৈঠকের কোনও উচ্চবাচ্যই হয়নি বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়ানোর বিষয়ে। অর্থাৎ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ (BSF) কে কেন্দ্র যে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়েছে তা নিয়ে এদিন আলোচনা হয়নি বলেই সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার তিনটি রাজ্যে সীমানার ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গ্রেফতার, তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা পাবে বিএসএফ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সম্প্রতি এই নয়া নির্দেশিকা জারি করে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, পঞ্জাব, অসম এবং পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফ গ্রেফতার, তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার কাজ করতে পারবে।
যা নিয়ে ইতিমধ্যেই তুমুল তরজা শুরু হয়েছে এ রাজ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই নির্দেশিকার সমালোচনা করে বলেছেন, “বিএসএফকে আমি সম্মান করি। কিন্তু, কিছু পলিটিক্যাল মানুষ ইচ্ছে করে সীমানায় ঝামেলা লাগানোর চেষ্টা করছেন। সবটাই পলিটিক্যাল ষড়যন্ত্র। আগে সীমানা বরাবর বিএসএফ ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরতে পারত। এখন তা বাড়িয়ে ৫০ করে দেওয়া হয়েছে। কেন? আমাদের সীমান্তে সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। ভুটানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক, বাংলাদেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক। কেন আমরা অকারণে ঝগড়া করতে যাব! একসঙ্গে সকলে মিলে মিশে থাকব। ইচ্ছে করে ভাগাভাগি করে ঝামেলা লাগানোর চেষ্টা করবেন না।”
এরই মধ্যে কোচবিহারের সিতাইয়ে বিএসএফের গুলি চালনা এবং তিনজনের মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। বিধানসভার চলতি অধিবেশনে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে ১৮৫ নম্বর ধারায় আগামী মঙ্গলবার বিধানসভায় সরকারি প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিএসএফের ক্ষমতা বাড়ালে কী হতে পারে একটা ঘটনা তো দেখাই ঘটল। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের হাতে, রাজ্য পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে তা সামলাচ্ছে। সীমানা সামলানোর দায়িত্ব বিএসএফের। আমাদের ভয়টা হচ্ছে এখন এরকম কিছু হলে নিশ্চয়ই সমন্বয়ের অভাব ঘটবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিএসএফ অ্যাক্টে অনুমোদন নেই। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যে বিজ্ঞপ্তি, যে চিঠি তা প্রত্যাহারের বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করব।”
এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিধানসভায় আমরা বিএসএফের নজরদারির যে সীমানা যা ১৫ কিলোমিটার ছিল, যাকে বাড়িতে ৫০ কিলোমিটার করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে ১৮৫ বিধানসভার যে রুল তাতে একটা আলোচনার জন্য এনেছি। সেটা গৃহীত হয়েছে। ১৬ তারিখ তা নিয়ে আলোচনা হবে। দেড় ঘণ্টার আলোচনাপর্ব।“