এমনটা তিনিই পারেন। তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক টানাটানি চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। তাঁকে সরাসরি বিজেপিতে চলে যেতে বলেছেন তৃণমূলনেত্রী। দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় বিধাননগরের মেয়র পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে হাজির হয়ে গেলেন রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। শুধু হাজির হওয়াই নয়, প্রশ্ন তুলে সভার মাঝে অস্বস্তি বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রীর। প্রশ্ন শুনে চোখেমুখে রীতিমত টেনশন ফুটে উঠল মমতার।
শুক্রবার মধ্যমগ্রামে ছিল রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক বৈঠক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় যার নাম– মিনি মহাকরণ। সব্যসাচী-তৃণমূল সম্পর্ক এখন যেই পর্যায়ে তাতে এই বৈঠকে বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়রের উপস্থিত হওয়াটাই ছিল বড় চমক। সব্যসাচী অবশ্য এটুকু চমক দিয়েই হাল ছাড়েননি।
প্রশাসনিক বৈঠক তখন মাঝ পথে। আচমকাই মাইক হাতে তুলে নেন সব্যসাচী। আক্ষরিক অর্থেই তখন মমতার চোখে মুখে টেনশনের ছায়া। দমবার পাত্র নন সব্যসাচী। মেয়র পদ ছাড়ার দিনে রাজারহাট এলাকায় জলাভূমি ভর্তির যে অনিয়মের কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন এদিন সেই প্রশ্নটিই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ছুঁড়ে দেন। এর পরে দু’জনের সংলাপ ছিল এই রকম–
সব্যসাচী: দিদি, দু’টো জিনিস বলার আছে। জেলায় বিভিন্ন দফতরের মধ্যে বোঝাপড়া নেই। আর এখানে পুকুর ভরাটের একটা সমস্যা আছে। আমরা এই বিষয়ে জেলাশাসককে জানিয়েছিলাম। বারাসতে যশোর রোডের উপরে সরকারি জমিতে বাড়ি হচ্ছে। এটা নিয়ে একটু দেখতে হবে।
মমতা: তুই নিজে কর্পোরেশনে ছিলি। তুই নিজে জানিস। তোদেরও এই বিষয়ে নজর রাখতে হবে। নিজের বিধানসভা এলাকায় কোন সমস্যা থাকলে জানা।
এর পরেও মাইক হাত থেকে নামাননি সব্যসাচী। মমতার চোখে মুখে তখনও টেনশন।
সব্যসাচী: সরি টু ডিস্টার্ব ইউ। রাজারহাট নিউটাউন মৎস্য দফতর মাছ চাষ করে। সেখানে ২৩টা ভেড়ি আর ৪৬টা ঝিল আছে। কিন্তু সেগুলো কাদের তা জানা নেই। এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই। আগের জেলাশাসকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, কোনও রেকর্ড নেই। আমাদের খুব অসুবিধা হয়। এটা দেখতে হবে।
মমতা: থ্যাঙ্ক ইউ, ঠিক আছে।
সভায় উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, এদিন সত্যি সত্যি দিদিকে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলেন সব্যসাচী। আরও কিছু প্রশ্ন করার আগে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে তাঁকে থামান। আসলে উনি কী প্রশ্ন করে বসবেন তা নিয়েই ছিল টেনশন। জলাজমি ভরাট নিয়ে মেয়র থাকাকালীনই তাঁর সঙ্গে দলেরই একটি গোষ্ঠীর সংঘাত হয়। সেটা তিনি বারবার প্রকাশ্যে বলেছেন। এদিনও সেই বিষয়টাই সবার সামনে তুলে ধরেন। এটাই রক্ষা যে, মারাত্মক কোনও অভিযোগ করে তিনি দল ও নেত্রীর অস্বস্তি বাড়াননি।
মধ্যমগ্রামে এদিনের প্রশাসনিক বৈঠকে প্রথম থেকেই সবার নজর কেড়ে নেয় সব্যসাচীর উপস্থিতি। একই সঙ্গে কারও নজর এড়ায়নি সব্যসাচীকে ঘিরে নেত্রী-সহ সকলের চাপা উদ্বেগ।
সত্যিই কি টেনশন তৈরি করতেই বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সব্যসাচী অবশ্য সভা শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এটা সরকারি মিটিং। আমি একজন বিধায়ক। যিনিই মুখ্যমন্ত্রী থাকুন আমার উপস্থিত হওয়াটা নৈতিক কর্তব্য।”