রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। ডেঙ্গু সংক্রমণের জেরে রবিবার হাওড়া পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের যোগেন মুখার্জি লেনের বাসিন্দা রিয়া চট্টোপাধ্যায় নামে এক ৮ বছরের শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। গত ২১ অক্টোবর থেকে জ্বরে ভুগছিল ওই শিশুকন্যা। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই ওয়ার্ডে প্রায় ২০-২৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
মৃত ওই শিশুকন্যার পরিবার জানিয়েছে, গত ২১ অক্টোবর কম্প দিয়ে জ্বর আসে রিয়ার। জ্বর না কমায় তাকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ওই বালিকার ডেঙ্গু পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তড়িঘড়ি তাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই রবিবার সকালে ওই শিশুকন্যার মৃত্যু ঘটে। জানা গিয়েছে, হাওড়ার ওই ওয়ার্ডে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সকলেই কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচনী আবহে পুরবোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই কাজে ঢিলেমি দেখা গিয়েছে পুরসভার। মাসে একবার করে পরিষ্কার করা হয় গোটা এলাকা। কোনওরকমে বাড়ি বাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করেন সাফাই কর্মীরা। তাও যেন খানিক দায়সারা ভাবে। ফলে, প্রায়ই ময়লা হয়ে থাকে এলাকা। যত্রতত্র জমে জলও।
যদিও হাওড়া পুরসভার তরফে জানা গিয়েছে, এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দ্রুত ওই ওয়ার্ডে পৌঁছে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতার পাশাপাশি কোথাও জমা জল রয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকাজুড়ে মশা মারার তেল স্প্রে করা হয়েছে। হাওড়া পুরসভার প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী মৃত শিশুকন্যার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দাবি করেন এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। গত তিন মাসে ৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রথম ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হল বলেই দাবি করেছেন তিনি।
হু হু করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বাংলায়। গত সাতদিনে এক লাফে ৫০০ ছুঁয়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। এর আগে কলকাতা পুরসভার বিএল সাহা রোডের ১১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দীপালি দত্ত নামে ৩৬ বছর বয়সী এক তরুণীরও মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। ষষ্ঠীর দিন মারা যান তিনি। সম্প্রতি রিজেন্ট পার্কের এক বাসিন্দারও ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গুর উপসর্গ
যে কোনও রোগেরই উপসর্গ সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে রোগ মোকাবিলার প্রথম ধাপটাই আপনি জেনে গেলেন। উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সময় মতো রোগ নির্ণয় করা দরকার। চোখের ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, বমি, হাড়ের ব্যথা, ফুসকুড়ি, পেশী ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত, জয়েন্টে ব্যথা, ক্লান্তি বা অস্থিরতার মতো লক্ষণগুলি দেখা দিলে সতর্ক হোন। এগুলি ডেঙ্গুর উপসর্গ।
এক নজরে সংক্রমণের পরিসংখ্যান
২০-২৭ অক্টোবর কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ১১৪ জন
২০-২৭ অক্টোবর উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৬ জন
২০-২৭ অক্টোবর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪
২০-২৭ অক্টোবর মালদায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫০
২০-২৭ অক্টোবর উত্তর দিনাজপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ২৭
২০-২৭ অক্টোবর হাওড়া আক্রান্তের সংখ্যা ২৬
বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কলকাতার সমস্ত কো-অর্ডিনেটরকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। তাঁদের সচেতনতার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যবিভাগের যা কাজ তা করা হচ্ছে। কিন্তু কো-অর্ডিনেটরদের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের হদিশ মিলেছে। এর মধ্যে বিপদজনক ডেন ২ ও ডেন ৩। এ রাজ্যে এই দুই সেরোটাইপেরই বাড় বাড়ন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেখা গিয়েছে ডেন ২ সব থেকে মারাত্মক। এর পিছনেই রয়েছে ডেন ৩। মাইক্রো বায়োলজিস্টরা বলছেন, ‘ডেন ২ ডেন ৩ মারাত্মক। অথচ এবারও শোনা যাচ্ছে এই দু’টো এ রাজ্যে ভালই পাওয়া যাচ্ছে। ডেন ৩ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’ সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর ছয় থেকে সাতদিনের মধ্যে সেরে যায়। হেমারেজিক ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেশি। ডেন ২ বা ডেন ৩ ঘটাতে পারে ডেঙ্গু হেমারেজ। এর ফলে শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়।