আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২৫ জুলাই: য্যবতীর পেটের ভিতর থেকে মিলল গয়না ও পয়সার ভাণ্ডার। কী নেই সেই গয়নার ভিতর। যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ চিকিৎসকদের। পেটের ভিতর থেকে একে একে বের করেন গলার চেন, নাকের নথ, কানের দুল, হাতের বালা, পায়ের নুপুর আরও কত কী।
যুবতীর নাম রুমি খাতুন। বাড়ি বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার অনন্তপুর গ্রামে। বয়স ২৬ বছর। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রুমি ছোট। কিছুটা মানসিক রোগী হওয়ায় তার বিয়ের কোনও উদ্যোগ নেয়নি পরিবার। পরিবার সূত্রে জানাগেছে, মাস দুয়েক ধরে ওই যুবতীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শরীর শুকিয়ে যেতে শুরু করে। যা খাওয়াদাওয়া করত কিছুক্ষণের মধ্যে বমি করে ফেলে দিত। এরপরেই রামপুরহাটে বিভিন্ন চিকিৎসককে দেখান। চিকিৎসকের পরামর্শে এক্সরে করান হয়। সেই এক্সরে রিপোর্টে পেটের ভিতর একটি সুতোর মতো কিছু একটা ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে সেই সুতো মলদ্বার দিয়ে বের করার জন্য ওষুধও খাওয়ানো হয়। কিন্তু তাতেও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
শেষে দিন সাতেক আগে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসার চিকিৎসক সিদ্ধার্থ বিশ্বাসকে দেখানো হয়। তিনি এক্সরে রিপোর্ট দেখে পেটের মধ্যে ধাতু জাতীয় কিছু রয়েছে বলে সন্দেহ করেন। ওইদিনই তাকে ভর্তি করা হয় সার্জারি বিভাগে। আজ তার অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রপচার করে ডাক্তাররা অবাক হয়ে যান। দেখেন পেটের ভিতর রয়েছে গয়না এবং পয়সা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণীর পেটে ১ কেজি ৬৮০ গ্রাম গয়না ও পয়সা ছিল। গয়নার মধ্যে রয়েছে গলার চেন, নাকের নথ, কানের দুল, হাতের বালা, পায়ের নুপুর, রিষ্ট বেল্ট, ঘড়ি এবং ৫, ১০ টাকার কয়েন।
আজ দেড় ঘণ্টা ধরে সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। সিদ্ধার্থবাবুর সঙ্গে চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন সহকারি সার্জেন্ট সুমন দে, অজ্ঞানের চিকিৎসক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং অরূপ ঘোষ। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “আমরা সাতদিন ধরে তরুণী পরীক্ষানিরীক্ষা করি। পরীক্ষাতে ধরা পরে পেটের মধ্যে ধাতু জাতীয় কিছু একটা রয়েছে। এরপরেই এদিন অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে গয়না উদ্ধার করা হয়। সমস্ত জিনিসপত্র পাকস্থলীতে আটকে ছিল। গয়নাগুলি অধিকাংশ তামা ও পিতলের। তবে সোনার গয়নাও ছিল। এছাড়া ৯০টি ৫ ও ১০ টাকার কয়েন ছিল।
সিদ্ধার্থবাবু জানান, তরুণীর অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ছিল। কারন তার হিমোগ্লোবিন কম ছিল। সেই জন্য পাঁচ বোতল রক্ত হাতে রেখে নিখুঁত ভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়”।
তরুণীর মা মরফিয়া বিবি বলেন, “মেয়ে মানসিক রোগী। বহু চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। ফলে বাড়িতেই চোখে চোখে রাখতাম। তার মধ্যেই নজর এড়িয়ে এসব খেয়ে ফেলেছে। ছোট ছেলের মনোহারি দোকান রয়েছে। সেখান থেকে কয়েন খেয়েছে। মাঝে মধ্যে চোখের সামনে থেকে গয়না উধাও হয়ে যেত। মেয়েকে ধরলে কাঁদতে শুরু করত। কিন্তু গয়নার হদিশ পেতাম না। ফলে আর কিছু বলতে পারতাম না। মাস দুয়েক থেকে মেয়ের শরীর খারাপ হতে শুরু করে। ইদানিং যা খেত বমি করে তুলে দিত। দুমাস ধরে ওষুধ খাইয়েও কোনও লাভ হয়নি। শেষে হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখাই। হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর আসল তথ্য উঠে এল।