‘কন্দ ফসল’ চাষে উৎসাহ দিচ্ছে বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

কল্যাণী,৭ ই অক্টোবর।”খনা বলে নদীর ধারে পুতিস কচু।কচু হবে তিন হাত নিচু।” খনার বচনকে সত্য মেনে নিয়ে নদীর ধারে বা জলা জমিতে বিভিন্ন প্রকারের কচু চাষ বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে।কচুর পাশাপাশি অন্যান্য কন্দ ফসলের চাষ করতেও আজকাল কৃষকরা উৎসাহিত হচ্ছেন।তাদের সেই আগ্রহের দিকে দৃষ্টি রেখে বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সর্ব ভারতীয় কন্দ ফসল চাষ বিভাগ’-এর উদ্যোগে আজ একদিনের একটি কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফল গবেষণা কেন্দ্রের দ্বিজেন্দ্রলাল রায়’ কক্ষে। এদিন কল্যাণী,হরিণঘাটা বড়োজাগুলির বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৪০ জন কৃষক উপস্থিত ছিলেন।তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলীপ কুমার মিশ্র, ড.সুরোজিৎ মিত্র(অধ্যাপক,পোস্ট হার্ভেস্ট টেকনোলজি) ও ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।

এদিন শুরুতেই বিভিন্ন প্রকারের কন্দ ফসল নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক সুরোজিৎ মিত্র। কন্দ ফসলের মধ্যে পড়ছে ওল ,মুখীকচু ,লতি কচু , শিমূল আলু, শাঁকআলু, মিষ্টি আলু,খাম আলু প্রভৃতি। এই সব ফসলের বিভিন্ন উন্নত জাত গুলোর চাষ করা উচিত বলে জানান ড. মিত্র।

মিষ্টি আলুর বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিধান জগন্নাথ, বিধান জ্যোতি(কমলা সুন্দরী), তৃপ্তি; কচুর উন্নত জাতের মধ্যে বিধান চৈতন্য, বিধান জয়দেব, তেলিয়া, মুক্তকেশী; ওলের উন্নত জাতের মধ্যে বিধান কুসুম, গজেন্দ্র, NBA; খাম আলুর উন্নত জাত গুলি BCDA-1,BCDA-2 প্রভৃতি।কন্দ ফসলের চাষ বিশেষ করে ওলের চাষ বেশ লাভজনক হচ্ছে বলে অধ্যাপক মিত্র জানান।

কম পরিমাণে আলো পড়ে এমন জমিতে কন্দ জাতের ফসল চাষ করা যায়।তাই আম, পেয়ারা, লিচু, কাঁঠাল প্রভৃতি ফল বাগানের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ওল, শিমূল আলু, মিষ্টি আলু, খাম আলুর চাষ করে বেশি মুনাফা লাভ করা যেতে পারে বলে জানান ড. দিলীপ কুমার মিশ্র।

এই কর্মশালাতে বিশেষ ভাবে উপস্থিত ছিলেন (ডাইরেক্টর অফ রিসার্স) অধ্যাপক জয়ন্ত তরফদার । তিনি বলেন – “১৯৭৬ সাল থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কন্দ জাতের ফসল নিয়ে গবেষণা চলছে এবং উন্নত জাতের বীজ তৈরি করা হচ্ছে আর তা চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।পাশাপাশি উন্নত বীজ থেকে গাছ ভাল হলে খাদ্যগুণ ও ফসল ভাল হবে এবং তা খেলে মানুষের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।কন্দ সফলের চাষ বেশ লাভজনক।তাই বেকারদের উচিত নিজেদেরকে চাষের সাথে আরও বেশি পরিমাণে যুক্ত করে অর্থনৈতিক দিকে দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া।”

মুর্শিদাবাদে গঙ্গা নদীর পাড়ে এবং হাওড়ার বাগবানে প্রচুর পরিমাণে শাঁকআলুর চাষ হয়।বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরে চাষ হয় শিমূল আলু কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। বিস্কুট তৈরি করতে স্টার্চ লাগে আর তা হয় মূলত শিমূল আলু থেকে।তামিলনাড়ু,কর্নাটক প্রভৃতি রাজ্য থেকে তা আমদানি করতে হয় বিস্কুট কোম্পানি গুলোকে।তাই শিমূল আলুর চাহিদা রয়েছে ভীষণ পরিমাণে।আবার রাঙা আলুর কমলা সুন্দরী জাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ রয়েছে যা চোখের পক্ষে উপকারী।

কন্দ ফসল বিশেষ করে ওলের আচার বেশ জনপ্রিয়;ওল ছোটো ছোটো করে কেটে শুকিয়ে রেখে পরে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।মিষ্টি আলু থেকে জ্যাম,সস,নুডুলস,আটাও তৈরি হচ্ছে আজকাল। চিপস, সাবু, পাউরুটি তৈরি করা যায় শিমূল আলু থেকে।তাই আধুনিক পদ্ধতিতে কন্দ জাতের ফসল চাষ বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে।

এদিন প্রশিক্ষণ শেষে চাষিদের হাতে নিম খোল, জৈব সার ও জৈব কীটনাশক তুলে দেওয়া হয়।এই কর্মশালাতে বিশেষ ভাবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউরি ও টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট যোগমায়া ঘোষ।

মিলন খামারিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.