বাবুলবাবু দেখলাম বলতে চেয়েছেন “অন্যে করলে উনি করলেই লীলা, আর অন্যে করলে বীলা”।
বলার কথা এটাই লীলা যেটা করছেন সেটা শোভনবাবু করছেন। কারন যা করছেন বুক ঠুকে করছেন।সবার সামনে করছেন। অন্য অনেকের মতো আড়ালে লুকিয়ে চুরিয়ে করতে গিয়ে বিলা কেস খেয়ে এখানে ওখানে হাতে পায়ে ধরেননি।
কথাটা বাবুলবাবু বিশেষ করে ভালোই বোঝেন। তাই আর ওনাকে খুলে বোঝানোর দরকার নেই।
তবে বিলা কেসের আরেকটা উদাহরন দিই। আজকে আনন্দবাজারের হেডলাইন হোল, “এগারোর ব্যবধান দিদি ছাপিয়ে যাবেন একুশে”। বাকী ভেতরের খবরে বলা হয়েছে, “প্রসঙ্গত, চলতি বছর ৫ মে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে তৃতীয়বার শপথ নেন তিনি। তাই ৫ নভেম্বরের মধ্যে তাঁকে বিধানসভার সদস্য হয়ে সাংবিধানিক শর্ত পূরণ করতে হত। ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ২১ মে পদত্যাগ করেন। সেই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মমতা।”
প্রথমত একথা লেখার আনন্দবাজারের সাহস হয়নি যে ২০১১ তে যখন মমতা ব্যানার্জী উপনির্বাচন জিতেছিলেন তখন তিনি মূল বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হননি। এবারে তিনি ৫ই মে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন বটে, কিন্তু নিজে নন্দীগ্রামে পরাজিত হয়েছেন। সেই কারনেই এই উপনির্বাচনের আয়োজন এবং তাঁর এমনই অবস্থা বর্তমানে আরও তিনটি আসন ফাঁকা থাকলেও তিনি সেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার সাহস দেখাতে পারেননি। প্রচুর বড় বড় ডায়লগ গিয়ে শেষে সেই আবার ভবানীপুরেই ফিরলেন। অবশ্য আনন্দবাজারের কিছু করারও নেই। নন্দীগ্রামের কথা উল্লেখ করলেই বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে বাবুলবাবুর এক বন্ধু সাংসদ মহুয়া মিত্র দাবী করেছিলেন না যে মমতা ব্যানার্জী ২০২৪-এ বানারস থেকে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন। খড়দা থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করার সাহস নেই আবার বেনারস।
তবে এতো কিছুর পরেও একটা করুন চিত্র উঠে আসছে। “ঘরের মেয়ে” “আপনার মেয়ে” ইত্যাদি নানাবিধ প্রচারের পরেও ভবানীপুরে ভোট শতাংশ ৫০ শতাংশের সামান্য বেশী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যদি ভবানীপুরে এতোটাই জনপ্রিয় হতেন তাহলে তো ভোটদানের হার অন্তত সত্তর শতাংশ হতো। কিন্তু হোল না কেন?
ভবানীপুরের আর্ধেক বাসিন্দা ভোটদানেই কোন উৎসাহ দেখাননি। কারন তারা মমতা ব্যানার্জীকে সমর্থন করেননা। কিন্তু তারা বিরোধীপক্ষেও ভোট দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি কারন তারা জানেন এই রাজ্যে নির্বাচনেই কিরকম সন্ত্রাসের পরিবেশ থাকে আর এ তো উপনির্বাচন। এখানে যদি তাদের কারনে আবার মমতা ব্যানার্জী পরাজিত হন তাহলে তাদের ঠিক কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
যাইহোক আবার বাবুলবাবুর কথায় ফিরে আসি। মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়াতে বাবুলবাবুর খুব গোসা হয়েছে। ওনার বোধহয় ধারণা হয়েছিল উনি বাড়ির সেই ছোট ছেলে বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠেও যার কপালে মাছের পেটিটাই জুটবে। কিন্তু তা যখন হোলনা তখন তিনি বাচ্ছা ছেলের মতো হাত পা ছুঁড়ে বেড়াচ্ছেন। আমার খালি বাবুলবাবুকে একটিই প্রশ্ন করার। ওনার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কাছে পশ্চিমবাংলা মানে কি? সেখানে কি কোলকাতা আর বৃহত্তর কোলকাতার বাইরের অংশগুলো আসে? মনে তো হয়না। এরাজ্যে তো কৃষিমন্ত্রীও কোলকাতার বাসিন্দা। যিনি বোধহয় কোনদিন টবে জলও ঢালেননি। অথচ বর্ধমান, হুগলী থেকে তৃণমুলের বিধায়ক কম কিছু নেই। তাহলে বাবুলবাবুর কথার সূত্র ধরেই প্রমান হোল, মমতা ব্যানার্জী জেলার লোকেদের সহ্য করতে পারেননা।
ঠিক এই কথাটাই তো আমরা এতোদিন বলে আসছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাজ্য চালানো আর কোলকাতা কর্পোরেশান চালানো একই ব্যাপার। কারন কোলকাতার বাইরে বাকী পশ্চিমবাংলাকে তিনি চেনেনইনা। সেই কারনেই নন্দীগ্রামে পরাজিত হয়েছেন। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল জবাব দিয়েছে। আগামী দিনে বর্ধমান, হুগলীও জবাব দেবে। অপরদিকে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রীসভায় যে চারজন স্থান পেয়েছেন তারা কিন্তু ঐ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিরই বাসিন্দা। বাবুলবাবুর মতো শহুরে সুখের পায়রা নন। তারা গাড়ি ভাঙচুর হওয়ার ভয়ে বাড়িতে বসে থাকেননা।
যাইহোক এখন বাবুলবাবুর গাড়ির ইন্সিওরেন্স হয়েছে। আশা করি এবার বাবুলবাবু একটু বাংলাটা ঘুরে দেখবেন। বাংলা ঘুরে একটু বুঝবেন স্কুলের মিড ডে মিল থেকে চাল আর আলু বাদে বাকী সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে তার মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কিভাবে মাছের তেলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মাছ ভেজে গরীব মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছেন।
বিদ্র – বাবুলবাবুর জন্য আরেকটি খবর। যা আনন্দবাজার ছাপার সাহস করবেনা। ঠিক যেমন এর আগে চুপচাপ মমতা ব্যানার্জীর পাঁচ লাখ টাকা কোলকাতা হাইকোর্টকে জরিমানা দেওয়ার খবর আনন্দবাজার ছাপার সাহস করতে পারেনি।
মমতা ব্যানার্জীর বৌমাকে আজ দিল্লী হাইকোর্টে মুচলেকা দিয়ে গ্রেপ্তারি এড়াতে হয়েছে। বৌমা হাইকোর্টে ইডির হাজিরা এড়াতে মামলা করেছিলেন, সেই মামলাতেই সশরীরে হাজিরা না দিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-এ হাজিরা দেন। তার জেরেই এই মুচলেকা। যাইহোক শ্বাশুরির মুচলেকা আগেই জমা পরেছিল কোর্টে। এবার বৌমারও জমা পরল।
দীপ্তস্য যশ