ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর থেকে ছিটকে গিয়েছে ভারত। ঘরের ড্রইং রুম থেকে পাড়ার মোড়ের জটলা, সংবাদমাধ্যম থেকে ফেসবুকের নিউজ়ফিড– গমগম করছে আলোচনায়। ক্ষোভ, রাগ, দুঃখ, হতাশা, বিশ্লেষণ উপচে পড়ছে চার দিক থেকে। বিশ্বের দরবারে সেমিফাইনাল থেকে ফিরে আসার এই ব্যর্থতা যেন কেউ-ই মেনে নিতে পারছেন না।
এই ক্রিকেট ঝড়ের দাপটেই তাই চাপা পড়ে গেছে ইতালি থেকে উড়ে আসা আর এক খেলোয়াড়ের বিশ্বজয়ের খবর। অনেকেরই জানা হয়নি, ক্রিকেট নিয়ে এই তোলপাড়ের মাঝেই কিছুটা অলক্ষ্যেই ইতিহাস গড়ে ফেললেন ভারতীয় স্প্রিন্টার দ্যুতি চাঁদ। প্রথম ভারতীয় হিসেবে সামার ইউনিভার্সিটি গেমসের ১০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতলেন তিনি।
দ্যুতির এই সাফল্যের আগে কোনও ভারতীয় খেলোয়াড়ই ইউনিভার্সিটি গেমসের ১০০ মিটারের ফাইনাল পর্যন্ত উঠতে পারেননি। সেখানে দ্যুতি ইতালির নাপলসে অনুষ্ঠিত এই গ্লোবাল ইভেন্টের ফাইনালে তো ওঠেনই, এবং সেখানে মাত্র ১১.৩২ সেকেন্ড সময়ে রেস শেষ করে চ্যাম্পিয়ন হন।
গত সোমবার হিটে ১১.৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিলেন দ্যুতি। মঙ্গলবার সেমিফাইনালে ১০০ মিটার অতিক্রম করেন ১১.৪১ সেকেন্ডে। এবং ফাইনালে সেই সময় আরও কমে দাঁড়ায় ১১.৩২ সেকেন্ডে। রেকর্ড গড়ে চ্যাম্পিয়ন হন দ্যুতি। ইতিহাস সৃষ্টি করে সেই জয় নিজের ইউনিভার্সিটি, অর্থাৎ ওড়িশার কেআইআইটি-কে উৎসর্গ করলেন তিনি।
গত মে মাসেই নিজের সমকামী সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছিলেন দ্যুতি। জানিয়েছিলেন, তাঁর সম্পর্ক নিয়ে পরিবারের আপত্তি রয়েছে। কিন্তু হাজার সমস্যার মধ্যেও যে নিজের ফোকাস নষ্ট করেননি দ্যুতি, তার প্রমাণ দিল এই সাফল্য। বাড়ি ও পরিবারের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েও ব্যক্তিগত জীবনের কোনও সমস্যার ছাপ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে পড়তে দেননি তিনি। বরং নিজের সেরাটা দিয়ে প্রথম ভারতীয় অ্যাথলিট হিসেবে সোনা জিতলেন বাঙালি কন্যা।
দ্যুতি বলেন, “প্রথম ভারতীয় অ্যাথলিট নাপেলসে হিসেবে সোনা জিতে দারুণ লাগছে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে এই পদক উৎসর্গ করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর অচ্যুত সামন্তজি খুব খারাপ সময়েও আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।এ ছাড়াও ওড়িশার মানুষ এবং মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েককে ধন্যবাদ জানাই।”
সোনা জিতে সেই ছবি টুইটারে পোস্ট করে আবেগঘন আরও একটি বার্তা দেন অ্যাথলিট। তিনি লেখেন, ‘‘আমাকে টেনে নামাও, আমি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব।”
এই বিভাগে ১১.৩৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে রুপো পান সুইজারল্যান্ডের আজলা দেল। ১১.৩৯ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে ব্রোঞ্জ ঘরে তোলেন জার্মানির লিসা।
সোনা জয়ের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছেন তিনি। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও পদক জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান দ্যুতিকে। লেখেন, ‘‘নাপেলসে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা ইউনিভার্সয়েডে ১০০ মিটারে সোনা জেতার জন্য দ্যুতি চাঁদকে অভিনন্দন। এই মঞ্চে এটাই ভারতের প্রথম সোনা। দেশকে গর্বিত করেছে ও। চেষ্টা চালিয়ে যাও।” বাঙালি অ্যাথলিটকে অলিম্পিকের জন্যও অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
মঙ্গলবারই ডিজিটাল ফ্যাশন পত্রিকা কসমোপলিটান ইন্ডিয়ার জুলাই সংখ্যার প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিল দ্যুতির ছবি। ডিজ়াইনার জুনাইলি মালিকের স্টাইল পরিকল্পনায় দ্যুতির পরিধানে দেখা গিয়েছিল সুপারড্রাই স্পোর্টস ব্রা, একজোড়া ফিলা শর্টস এবং নম্রতা জোশিপুরার তৈরি রামধনু রঙের একটি কেপ। তার পরেই ফের চমক। ফ্যাশন দুনিয়া কাঁপানোর পরেই ঝড় তুললেন ট্র্যাকে।