যে শিক্ষা অন্তরাত্মা কে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে বিকাশশীল চিন্তা চেতনার উৎকর্ষতা সাধিত করে, যে শিক্ষা জীবনের চলার পথকে প্রসারিত ও সহজতর করে এবং ধর্মীয় ভাবাবেগ, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও বিজ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং মানবতার সার্বিক কল্যাণে আত্নোৎসর্গ করার দীক্ষা দেয়, তাকেই প্রকৃত শিক্ষা বলা যেতে পারে। প্রকৃত শিক্ষা আহরণের সমস্ত উপাদানের মধ্যে সঠিক ইতিহাস অধ্যয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রকৃত ইতিহাস অজ্ঞ জাতি মানসিক বিকারগস্ততার শিকার হয়ে অধঃপতনের অতল গহ্বরে ক্রমশঃ হারিয়ে যায়। যে ইতিহাস শিক্ষা যুব মননে নীতি-নৈতিকতার বিকাশ ঘটাতে অপারগ, যে ইতিহাস শিক্ষা যুব মনন কে নিজের ঋদ্ধ ঐতিহ্য বিমুখ করে বিকৃত জড়বাদী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট করে পক্ষান্তরে দেশ বিরোধী জিহাদি শক্তির প্রাণবায়ু হয়ে উঠতে সহায়তা করে, সেই ইতিহাস শিক্ষা কে প্রশ্নের সম্মুখে দাঁড় করানো আজ সময়ের দাবি। কারণ ১৯২০ সাল, যে বছর সুদূর তাসখন্দে জিহাদি শক্তির সহায়তায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়েছিল, সেই সময় থেকে আজ অব্দি এই উপমহাদেশের ইতিহাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে বারংবার দেখিয়ে দেয় এদেশের বাম ইকোসিস্টেম হ’ল মস্তিষ্ক আর জিহাদি মৌলবাদ তার অবয়ব মাত্র।
যুবসমাজের মনস্তাত্ত্বিক ভিত তৈরি হওয়ার সন্ধিক্ষণে যদি মানব সভ্যতার প্রকৃত শত্রুদের তারা চিনতে না শেখে তাহলে সুপ্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার শিক্ষা ব্যবস্থার ম্যান মেকিং মিশন টাই ব্যর্থ পর্যবসিত হবে। নতুন শিক্ষা নীতির আওতায় নবম-দশম শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে স্থান পাক বিশ্বজোড়া গণহত্যার ঘটনা গুলি।
অবিদ্যার উপাসনা যেমন তমিস্রা কে বরণ করে নিতে শেখায়, তেমনি একশ্রেণীর বিকিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিকের কীট দংশিত ইতিহাস পড়ে এই উপমহাদেশের যুব সমাজ বস্তু কেন্দ্রিক বিকৃত সাম্যবাদের অনুরাগী হয়ে ভুল পথে চালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকেই ইতিহাস চর্চা সহ উচ্চশিক্ষা পুরোটাই বামেদের কুক্ষিগত হওয়ার ফলে ছাত্র-যুব মনন আধুনিক যুগের বৈশ্বিক গণগত্যাকারী বলতে শুধু অ্যাডল্ফ হিটলার কে-ই জানে এবং বোঝে।
দেশের উচ্চশিক্ষায় জাঁকিয়ে বসে থাকা বিকৃত বাম ইকোসিস্টেম অত্যন্ত সুচতুরভাবে কমিউনিস্ট শাসিত দেশগুলিতে রাষ্ট্রীয় মদতে চলা পৈশাচিক গণহত্যা গুলি সম্পর্কে হয় নীরব নয়তো প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির প্রপাগাণ্ডা বলে দাগিয়ে দিতে ব্যস্ত। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যারা ইতিহাস পড়েছেন একটু ভেবে বলুন তো যুগোস্লাভিয়া, রোমানিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, কম্বোডিয়া প্রভৃতি দেশ গুলিতে কমিউনিস্ট শাসকদের দ্বারা সংঘটিত বিভৎস গণহত্যা গুলি সম্পর্কে স্কুল পাঠ্যে পড়েছেন কি না? না পড়েন নি। ঠিক এখানেই এদেশের শিক্ষা জগতে রাজত্ব করা বৌদ্ধিক বাম ইকোসিস্টেমের সার্থকতা আর ঠিক ততটাই জাতীয়তাবাদী শক্তির ব্যর্থতা।
ছাত্রসমাজের সামাজিক মনন গড়ে ওঠার সন্ধিক্ষণে তাদের থেকে নিজেদের দেউলিয়া রাজনৈতিক দর্শনের পাপ সন্তর্পণে আড়াল করে মেকি শ্রেণী শত্রুতার বিষাক্ত বিষবাষ্পে ছাত্র মনন কে জারিত করার এই নির্লজ্জ প্রয়াস আর চলতে দেওয়া চলে না। দেশের ছাত্রসমাজ হিটলারের বর্বরতা জানার সাথে সাথে পল পট, মাও সে তুং, নিকোলে চেচেস্কু, জোসেফ স্ট্যালিন, জোসেফ টিটো, কিম জং-উল নামক মানবতার শত্রুদেরও চিনুক। জানুক কোন মতাদর্শে দীক্ষিত হয়ে এই সব নরপিশাচরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছিল। সময় এসেছে এদের বিকৃতির কদর্যতা যা বারেবারে মানব সভ্যতাকে কলঙ্কিত করেছে, তা ছাত্রসমাজের সামনে তুলে ধরার; ঠিক সে-সময় যখন তাদের সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক ভিত গড়ে উঠছে। পাশ্চাত্যের চাপিয়ে দেওয়া বিকৃত সাম্যবাদ কে দুরে সরিয়ে রেখে ছাত্রসমাজ সনাতনী সাম্যবোধের চেতনা লাভ করুক। এভাবেই জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধিক শক্তির ভিত্তি সুদৃঢ় হউক আর রাষ্ট্র তথা সমাজ বাম ও জিহাদি শক্তি মুক্ত হয়ে পুনরায় গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে প্রবেশ করুক। দুয়ারে বাম-জিহাদি শক্তির বিপদ কে রুখে দিয়ে দেশমাতৃকা জগৎ-সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করুক।
ডঃ তরুণ মজুমদার