বেলঘরিয়া স্টুডেন্টস হোমে ঠাকুরকে বছরে কয়েকবার মাত্র অন্নভোগ দেওয়া হত। শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা, রবীন্দ্রজয়ন্তী (বৈশাখ মাসের এইদিন ছাত্রদের কলেজ ছুটি থাকত বলে), বিদ্যার্থী ব্রত হোমের দিন, শ্রীশ্রী দুর্গা পূজার মহাষ্টমী তিথিতে শ্রীশ্রী কালী পূজার রাত্রে আর ২৪শে ডিসেম্বর রাজা মহারাজের উৎসবের দিন। তখন তো গর্ভমন্দির বলে আলাদা করে কিছু ছিল না তাই ভোগ নিবেদন হলে সবাইকে মন্দিরের বাইরে যেতে হত। সুপ্রকাশ মহারাজ তাঁর টিম নিয়ে ভোগ সাজাতেন আর সব শেষে শিবদাস মহারাজ এসে পূজারীকে দেখিয়ে দিতেন কোথায় কি দেওয়া হয়েছে। সেবারে ভোগ উঠতে বেশ দেরী হয়েছে। আমিও তাড়াহুড়ো করছি। এমন সময় শিবদাস মহারাজ এসে বলতে থাকলেন, অমরনাথ, দেখে নাও ভাতের এখানে ঘী দেওয়া আছে, এই এই দেওয়া হয়েছে, ওইটা ক্ষীর কমলা, ওইটা বুঝলে চন্দন ক্ষীর। আমি কিছু না উত্তর দিয়ে দ্রুত নিবেদন করতে শুরু করলাম। মহারাজ বুঝলেন আমি বিরক্ত আর তাই কথা না বাড়িয়ে ঠাকুরকে প্রণাম করে উনি মন্দির ছাড়লেন।
ভোগারতির পর একটি প্রসাদী সন্দেশ ও ডাব নিয়ে শিবদাস মহারাজকে দিতে গেলাম কারণ উনি তখনও উপবাসী। মহারাজ জল মিষ্টি খেয়ে আমাকে বললেন, তুমি খুব বিরক্ত হচ্ছিলে না? আসলে তুমি তো ঠাকুরকে খেতে দেবে, যদি তুমিই না জানো কি খেতে দিচ্ছো তাহলে ঠাকুরকে কি করে বলবে? দেখতে তো দুটো ক্ষীরই একরকমের, তুমিই যদি না জানো কি করে ঠাকুরকে সঠিক জিনিসটা দেবে? কি জানো, সবটাই ভাব, ভাবলে তিনি জীবন্ত জাগ্রত, না হলে উনি ছবি মাত্র।
ক্লান্ত মহারাজ নতুন উদ্যমে এগিয়ে চললেন পঙ্গতের দিকে, সবাই এক্ষুনি আসবেন প্রসাদ পেতে, দাঁড়ানোর সময় কই? কিন্তু আমার মনে গেঁথে দিলেন একটি অনুপম ভাব, ভাবলে তিনি জীবন্ত জাগ্রত, না হলে উনি ছবি মাত্র।
- স্বামী স্তবপ্রিয়ানন্দ।