আগে কলকাতা শহরতলীতে শোনা যেত – বাড়ির পাশে জঙ্গল । এখন চিত্রপট বদলে গেছে । কখনো শুনবেন – বাড়ির পাশে জঙ্গি ।
চমকাবেন না । মানাবে না ব্যাপারটা । সবটাই অভ্যাস করতে থাকুন । ভাবাটাও প্র্যাক্টিসে আনুন । দেখবেন সয়ে যাবে সময়ের সঙ্গে ।
কেন বলছি ? আজ সবাই পড়েছেন, শুনেছেন কলকাতায় ধৃত ৩ বাংলাদেশি জঙ্গি । খোদ দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুর থানার অন্তর্গত ঠাকুর পুকুর ক্যান্সার হাসপাতালের পাশেই এরা ডেরা বেঁধে কাজ চালাচ্ছিল । নাজিউর রহমান, শেখ সাবির, রবিউল ইসলাম । বাংলাদেশের দাগী জঙ্গি , কেউ আবার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সটান কলকাতায় । ফলের ঝুড়ি নিয়ে, কাঁধে মশারী নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় যেত । রেকি করত । এলাকা চিনত । টাকা তুলতো । লোক রিক্রুট করত । অপারেশনের ব্লু প্রিন্ট বানাতো ।
কেন কলকাতাকেই বাছলো এরা ? কোন জেলা নয় কেন ? কলকাতার পুলিশ, শহরের গোয়েন্দাতো ভারত বিখ্যাত । সেখানেই এত কনফিডেন্স কেন জামাত – উল – মুজাহিদিনদের ? প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছিলাম আজ সারা দিন । তাহলে কলকাতার গোয়েন্দাদেরও কি পাত্তা দিচ্ছে না জঙ্গীরা ?
উত্তরটা পেলাম এক অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন কলকাতা পুলিশের দুঁদে পদাধিকারীর কাছ থেকে । কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য পুলিশ ইচ্ছে করলেই পারে অবস্থাটা কন্ট্রোল করতে । সন্ত্রাস বাদের ব্যাপারে রাজ্য সরকার যদি জিরো টলারেন্স নীতি নেয় ধর্মীয় বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে তাহলেই অবস্থাটা বদলে যাবে । তা নিচ্ছেনা সরকার । ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে । সকাল বেলা দাঁত মাজতে মাজতে আপনি শুনছেন পাশের বাড়ি থেকে জঙ্গি ধরা পড়েছে কাল মাঝ রাতে । এতদিন যে লোকটার সঙ্গে আপনার সকাল বিকেল দেখা হত সে আদতে জঙ্গি । ১০ লক্ষ টাকা মাথার দাম । লুকিয়ে ছিল আপনার ঘরের পাশে । অন্য নামে । এই এখন অবস্থান।
সরকার তাহলে জিরো টলারেন্স নীতি নিচ্ছেনা কেন ? সরকার কি তাহলে আপনাকে ভালোবাসে না ? অসুবিধেটা কোথায় ?
পাশের রাজ্য অসম । অসমের কথা বলি ।
শপথ নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা থানার ওসিদের বৈঠকে ডেকে বলে দিয়েছেন – প্রয়োজনে পায়ে গুলি করবেন । খোঁড়া করে দেবেন । কিন্তু পালাতে দেবেন না কাউকে । ৬ মাসের মধ্যে আবার ডাকব, বসব আপনাদের সঙ্গে । তার আগে আজ পর্যন্ত যত কেস আপনার থানায় পেন্ডিং আছে সব কটার চার্জসিট কোর্টে জমা করে বসবেন । উকিল সহযোগিতা না করলে পাল্টে দেব সরকারি উকিল । আমার দফতর থেকেও অপরাধী ছাড়ানোর সুপারিশ গেলেও ইগনোর করবেন । শুনবেন না । কোন পোস্টিং এর জন্য কাউকে ধরবেন না । পারফরমেন্স আপনার পোস্টিং ঠিক করে দেবে ।
হিমন্তের এই ঘোষণায় কাজ হয়েছে । অফিসাররা দৌড়চ্ছে প্রতি ঘন্টায় । অপরাধীরা বুঝেছে রাজ্যে সরকার আছে । পালানো মুশকিল । অপরাধীরা এখন পেশা বদলাচ্ছে । রাজ্যে একটা সরকার আছে বুঝে ।
আর পশ্চিমবঙ্গে ?
কালীঘাটে মমতার বাড়ি থেকে উঁকি মারা দূরত্বে ভবানীপুর থানার অ্যাডিশনাল ও সি তোলাবাজ তৃণমূল ছাত্র নেতাদের হাতে বেদম মার খেয়ে জীবন যুদ্ধ লড়ছেন পি জিতে । রা নেই তৃণমূলের । রা নেই সরকারের । রা নেই মুখ্যমন্ত্রীর তথা রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীর । যারা মেরেছেন তাদের অন্তত খুনের দায়ে জেল হবে ? হবে না । দু দিন বাদে বেরিয়ে এসেই কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট লুঠে ব্যস্ত হবে । বেচারি অ্যাডিশনাল ওসি ডিউটি করতে গিয়ে দেখবেন নেতার পাশে হাঁটছে সে যার জন্য জীবন যেতে বসেছিল তাঁর ।
এ রাজ্য তাই অপরাধীদের স্বর্গ রাজ্য হিসেবেই বেঁচে থাকবে । জামাত, আল কায়দা, আই এস এ এ রাজ্যে আসবে, বসবে, ঘাঁটি গাড়বে । বন্ধু সরকার প্রশাসনের, দলের জামাই আদর পাবে । তারপর সময় সুযোগ বুঝে অপারেট করতে ভারতের অন্য প্রান্তে দৌড়বে । আবার ফিরে এসে কোন এক হরিদেবপুরে আস্তানা বাঁধবে । কখনো সখনও ধরা পড়লে সরকার আর তার পোষা বাংলা মিডিয়া বলবে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা । পুলিশ তো ধরেছে । প্রশ্ন করার সাহসটুকু করবেনা যে ঘাঁটি গাড়ার সাহস কিভাবে পাচ্ছে এরা ?
আপনি কি করবেন ? এবার সিরিয়াসলি ভাবুন । ভেবে অবশ্য খুব লাভ নেই । সকালে উঠে যখন শুনবেন আপনার পাশের বাড়িতে তারা এতদিন আস্তানা গেড়ে ছিল তখন মনকে একটু একটু করে বোঝাবেন, বলবেন, যাক আমিতো মরিনি । এইটুকুই বা কম কি !!
এই ভাবনাটা নিয়ে আপাতত বাঁচা প্র্যাক্টিস করুন । সরকার সেটাই বোধহয় চাইছে ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)