রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরসঙ্চালক মোহনরাও ভাগবত একদা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মুসলমানরা ভারতের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় গোষ্ঠী হতে চলেছে— ভারতের হিন্দুদের বৃদ্ধি ২.১ শতাংশ আর মুসলমানদের ৫.২ শতাংশ, এটা চলতে থাকলে ৫০ বছর বাদে আমরা কী করে হিন্দু রাষ্ট্র থাকব? এটা কি ইসলামিক দেশ হয়ে যাবে না? তিনি এও বলেন হিন্দুদের সংখ্যা বাড়বে না কোন আইনে বলা আছে, বিশেষত যখন অন্যদের সংখ্যা বাড়ছে? এর অর্থ ছিল সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য জনসংখ্যাবৃদ্ধির ব্যাপারে একটা আইন বলবৎ হওয়া উচিত। শ্রী ভাগবতের বক্তব্যের ইঙ্গিত ছিল মুসলমানরা খুব বেশি হারে সন্তান উৎপাদন করছে তাতে ভারতের হিন্দুদের গরিষ্ঠতার ভিত নড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, ভারত হিন্দুদের একমাত্র স্বদেশ (অন্তত দেশবিভাজনের পর তাই দাঁড়িয়েছে)। হিন্দুদের আরও বেশি সংখ্যায় শিশুর জন্ম দেওয়া উচিত। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে মুসলমানদের জন্মনিয়ন্ত্রণ অবশ্যই করতে হবে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে হিন্দুরা ভারতের জনসংখ্যার ৭৯.৮ শতাংশ ছিল আর ২০০১ সালে ছিল ৮০.৪৬ শতাংশ, অপরদিকে মুসলমানদের ছিল যথাক্রমে ১৪.২৩ ও ১৩.৪৩ শতাংশ। হিন্দু জনসংখ্যা বেড়েছে। ১.৫৫ শতাংশ হারে আর মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে ২.২ হারে। স্পষ্টত মুসলমানরা দ্রুততর হারে সংখ্যায় বেড়েছে। শুধু ওই দশ বছর পর্ব নয় তার পূর্বের দশকগুলির দিকে নজর দেওয়া যাক। (সারণী-১ দ্রষ্টব্য)
১৯৫১ থেকে ২০১১ এই ষাট বছরে হিন্দুর সংখ্যা ৮৪.১ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭৯.৮০ শতাংশে; সেখানে ওই একই কাল পর্বে মুসলমানদের সংখ্যা বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ থেকে ১৪.২৩ শতাংশ অর্থাৎ আপেক্ষিক ভাবে হিন্দুর সংখ্যা মুসলমানদের তুলনায় ৯ শতাংশ কমেছে। স্মরণীয় যে পাকিস্তান আদায়ের পরে হিন্দুর সংখ্যা বাড়া উচিত ছিল, কারণ বহু হিন্দুর ভারতে ঢোকার আর মুসলমানদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা। কংগ্রেসের জাতীয় সংবাদমাধ্যমের প্যানেলভুক্ত সলমন আনীস সোজ বলেছেন মুসলমানদের বৃদ্ধির হার হিন্দুদের তুলনায় বেশি হারে কমে যাচ্ছে। ১৯৯১ থেকে ২০০১-এর মধ্যে হিন্দুদের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ১.৮ শতাংশ আর মুসলমানদের জন্য ছিল ২.৬ শতাংশ। ২০০১-২০১১-র মধ্যে হিন্দুদের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ১.৫৫ আর মুসলমানদের ২.২ শতাংশ। মুসলমান বৃদ্ধি হারের এই আপেক্ষিক কমে আসা স্বাভাবিক ডেমোগ্রাফিক রূপান্তরের অংশ। এর বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন নারী শিক্ষা। এই বক্তব্য হাস্যকর। আরও হাস্যকর বক্তব্য :জনসংখ্যা প্রবণতার আর একটা নির্দেশক হলো মহিলা পিছু মোট প্রজনন ক্ষমতা (টিএফআর)। মুসলমান মহিলাদের এই টিএফআর ৩.১ আর হিন্দু মহিলাদের ক্ষেত্রে ২.৭ (২০০৫-০৬); ৯২-৯৩-তে এটা ছিল যথাক্রমে ৪.৪ ও ৩.৩। আমাদের হাতে সোজাসাপ্টা হিসেবে আছে গত ৭০ বছরে মুসলমান জনসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ (২০১৭ পর্যন্ত আনুমানিক বৃদ্ধি ধরে) আপেক্ষিক বৃদ্ধি পেয়েছে। সোজের দাবি মুসলমানদের আর্থসামাজিক উন্নতি করার দায়িত্ব নিতে হবে হিন্দুদের, তাহলে মুসলমানদের প্রজনন ক্ষমতা কমবে। নিজেদের দোষে জনসংখ্যা বাড়িয়ে আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সন্তান উৎপাদন করে এবং আধুনিক শিক্ষাকে বর্জন করে শুধুমাত্র জনবিন্যাসের তারতম্য ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা অধিকার করে দেশকে ইসলামিকরণ করা বা দার-উল-ইসলামে পরিণত করার মানসে যে এটা করা হচ্ছে তা আরও কিছু তথ্য দিয়ে বোঝানো যায়। আর বর্তমানে হিন্দুদের শিক্ষিতদের মধ্যে আপেক্ষিকভাবে বেশি। বিশেষ করে জন্মনিয়ন্ত্রণের ফলে প্রকৃত ফার্টিলিটি বোঝা যাবেনা। কেন পাকিস্তানের হিন্দু জনসংখ্যা ১২-১৮ শতাংশ থেকে ২.৩ শতাংশ কমেছে? •পাকিস্তান থেকে সব হিন্দুকে তাড়ানো হয়েছে।
• স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানে হিন্দুদের জনসংখ্যার কেন হ্রাস পায়, ভারতে মুসলমানদের শতকরা হার বাড়ে?
•মুসলমান দেশগুলিতে হিন্দুদের সংখ্যা দ্রুত কমে কেন?
• হিন্দু, শিখ ও খ্রিস্টানদের পাকিস্তানে। কেন গণহত্যা/গণ ধর্মান্তর করা হয়েছে?
২০১১-২০৬১-তে ভারতে প্রধান। ধর্মগুলির প্রবণতা। (সারণী-২ দ্রষ্টব্য)।
অর্থাৎ চল্লিশ বছর বাদে মুসলমানরা হিন্দুদের জনসংখ্যার তুলনায় আপেক্ষিকভাবে ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে। পিউ ফোরামের সৌজন্যে জানা যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে মুসলমান জনসংখ্যা ২৯ কোটি বেড়ে যাবে আগামী দশ বছরে। আই এস আই প্রকাশিত একটি মানচিত্রে দেখানো হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বৃহত্তর ইসলামিক পাকিস্তানি প্রজাতন্ত্র তৈরি হবে। সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ আল্লাহ ও তার লোকেদের দ্বারা (তার অর্থ আল্লাহ শুধু তার লোকের জন্য সকলের জন্য নয়) অধিকৃত হবে। ইনসাল্লাহ। আই এস আই। এই কথা বলে হিন্দুদের উদ্দেশে সাবধান বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে, “ওহে হিন্দুরা! ইসলাম গ্রহণ করো। নতুবা তোমাদের এখানে বেঁচে থাকার কোনো জায়গা থাকবে না। আল্লাহ হু আকবর।”
১৯৪৭ সালে ঘানায় মুসলমানরা ছিল সংখ্যালঘু, এখন ঘানা ইসলামিক স্টেট অব ঘানা রিপাবলিক। বাংলাদেশে হিন্দুর শতকরা হিসাব।
(সারণী-৩ দ্রষ্টব্য)
সারণী-৩ থেকে একটা চিত্র পরিষ্কার যে পূর্ববঙ্গে একদা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু কমতে কমতে আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে মুসলমানরা ইতিমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেছে। ১৯৮১ থেকে ২০০১-এর মধ্যে যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই ২ কোটি বাড়ার কথা সেখানে কমে গেছে এক কোটি অর্থাৎ তিন কোটি ভারতে অবৈধ/বৈধভাবে প্রবেশ করেছে। এদের মধ্যে এক বিরাট অংশ আছে মুসলমান। পূর্বতন বাম সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে বাংলাদেশি মুসলমানদের (জ্যোতি বসুর পূর্ণ সমর্থনে) মালদা, মুর্শিদাবাদ দুই দিনাজপুর, নদিয়া প্রভৃতি জেলায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল; তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে তাদের রেশন কার্ড চালু করা ও ভোটার তালিকায় নাম ঢুকিয়ে তাদের বৈধ নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এরাই ছিল বামেদের নিশ্চিত ভোটব্যাঙ্ক। ২০০৮ সাল থেকে অন্য একটি রাজনৈতিক দল তাদের অনুকূলে সুকৌশলে বিপরীতমুখী অধিকতর ন্যক্কারজনক মৌলবাদী তোষণের মাধ্যমে এদের ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করে রাজত্ব করছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে মুসলমানরা সাক্ষরতায় সামান্য পিছিয়ে আছে। কিন্তু কর্মে অংশগ্রহণে তারা অধিকতর পিছিয়ে কারণ তাদের পশ্চাৎমুখী মানসিকতা তাদের সংগঠিত ক্ষেত্রে আসার মুখ্য প্রতিবন্ধকতা।
সুদীপনারায়ণ ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.