একে অতিমারী আবহের আতঙ্ক। তায় আবার ঘূর্ণিঝড়ের চোখরাঙানি। মন আর ভাল থাকেই বা কী করে! তবে হ্যাঁ, মহাকাশপ্রেমীরা একটু গা-ঝাড়া দিয়ে বসতে পারেন। আপনাদের বিষণ্ণতা কিছুটা হলেও মিটতে চলেছে আজ।
এক অঙ্গে তিন তিনটি রূপ। সুপার মুন (supermoon)। ব্লাড মুন (Blood moon)। এবং ফ্লাওয়ার ফুল মুন (Flower fool moon)। সকলে মিলে ধরা দেবে আজ। আদপে গোটাটাই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। আরও স্পষ্ট করে বললে, চলতি বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ (Lunar eclipse)।
যদিও এই গ্রহণ ভারতে পুরোপুরি দেখা যাবে না। দেশের পূর্বাংশের রাজ্যগুলি থেকে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। তা-ও আবার গ্রহণের শেষটুকুই এবং খুবই অল্প সময়ের জন্য। তার উপর আবার ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর কারণে বঙ্গে বুধ-সন্ধ্যার আকাশজুড়ে থাকবে মেঘের ঘনঘটা। তবুও এই দুর্লভ মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে আগ্রহীরা আজ সন্ধেয় পুব আকাশে একটু নজর রাখতে ভুলবেন না যেন!
এমপি বিড়লা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড এমপি বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের অধিকর্তা, ড. দেবীপ্রসাদ দুয়ারির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “আজ, ২৬ মে নিছকই পূর্ণিমা নয়। বরং এটি ব্যতিক্রমী এবং বিরল মূলত তিনটি কারণে। প্রথমত, আজ চাঁদ অবস্থান করবে পৃথিবী থেকে নিকটতম দূরত্ববিন্দুতে, যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় ‘পেরিজি’ বলা হয়। ঠিক সন্ধ্যা ৭.২৩ মিনিটে এই ঘটনা ঘটবে, যখন পৃথিবী থেকে
চাঁদের দূরত্ব থাকবে ৩,৫৭,৩০৯ কিলোমিটার। চাঁদ নিজের প্রকৃত অবস্থান থেকে প্রায় ২৭ হাজার কিলোমিটার এগিয়ে আসার ফলে তাকে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বড় দেখাবে। এমন চাঁদ হল ‘সুপার মুন’।
দ্বিতীয়ত, পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে এমন অবস্থানে এসে উপস্থিত হবে যে পৃথিবীর ছায়া চাঁদকে সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেবে। আর তৃতীয়ত, ওই সময় চাঁদকে দেখলে মনে হবে, একটা কালচে লাল রঙের আভা যেন তাকে ঘিরে আছে। এই রক্তিমতার কারণে তার নাম ‘ব্লাড মুন’।”
আর ‘ফ্লাওয়ার ফুল মুন’? এটি আর কিছুই নয়, পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত পূর্ণিমার চাঁদেরই (মে মাসের) একটি বিশেষ নাম। এই সময় প্রচুর ফুল ফোটে কিছু কিছু দেশে। তাই এহেন নামকরণ। ক্ষেত্রবিশেষে ‘পিঙ্ক মুন’ও বলা হয়।
কিন্তু সব কথার এক কথা হল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজ এ দেশ তথা রাজ্য থেকে ‘সুপার মুন’, ‘ব্লাড মুন’ তথা ‘পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ’ পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না। চাঁদের আংশিক গ্রহণ শুরু হবে আজ ভারতীয় সময় দুপুর ৩.১৫ মিনিটে এবং শেষ হবে সন্ধ্যা ৬.২২ মিনিটে। পূর্ণগ্রাস গ্রহণ হবে বিকেল ৪.৪১ মিনিট থেকে ৪.৫৬ মিনিটের মধ্যে, মাত্র ১৪ মিনিটের জন্য।
দুয়ারিবাবু জানাচ্ছেন, আজ কলকাতার আকাশে চাঁদ উঠবে সন্ধ্যা ৬.১৫ মিনিটে। তাই এ রাজ্যে যাঁরা এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে চান, তাঁরা আংশিক চন্দ্রগ্রহণের শেষের দিকের অল্প কিছু সময়ই (৭ মিনিট) দেখতে পারবেন, তাও আবার ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর জেরে, আকাশে জমা মেঘের চাদর কিছুটা সরলে, তবেই। বুধ-সন্ধ্যার পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ সম্পূর্ণ মহিমায় দেখা যাবে এশিয়ার পূর্বাংশ, উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে। পরবর্তী পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হবে ২০২২ সালের ১৬ মে।