এতদিনে প্রত্যাশ্যা পূরণ হতে চলেছে। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টাস্ক ফোর্স বা উপদেষ্টামণ্ডলী তৈরি হয়েছিল আগেই, কিন্তু গবেষণার ভিত্তিতে মহামারী ঠেকানোর পরিকল্পনা করার মতো কোনও রিসার্চ কমিটি ছিল না রাজ্যে। এবার সে পথে এগোতে চলেছে রাজ্য সরকার। ডাক্তার, গবেষক, অধ্যাপকদের নিয়ে এমন একটি কমিটি তৈরি হচ্ছে যা রাজ্যে অতিমহামারী পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে। এলাকা বিশেষে আক্রান্তের সংখ্যা, সংক্রমণের হার, চিকিৎসা পরিকাঠামো, ওষুধের জোগান ইত্যাদি দেখেশুনে বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা করে মতামত দেবে।
সরকারি সূত্রে খবর, করোনা ঠেকাতে কী কী গবেষণামূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে মতামত দেবে রিসার্চ কমিটি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সঠিক নীতি নির্ধারণের দায়িত্বও থাকবে এই কমিটির ওপরেই। কারা থাকছেন এই কমিটিতে? সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, কলকাতার স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনের ক্লিনিকাল ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক শান্তনু ত্রিপাঠি, এসএসকেমের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক অভিজিৎ হাজরা, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জ্যোতির্ময় পাল এবং ডক্টর বিসি রয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক সায়েন্সের অধ্যাপক দিলীপ পাল।
SuranaFashion
করোনার দ্বিতীয় ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দিয়েছে দেশে। এ রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। দৈনিক আক্রান্ত বাড়ছে, সংক্রমণের হারে পশ্চিমবঙ্গ দেশের ২৭টি রাজ্যের মধ্যে তিন নম্বরে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আবার করোনার ট্রিপল ভ্যারিয়ান্ট প্রজাতি ছড়িয়েছে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ভাইরাল স্ট্রেনকে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকাতে এবং সংক্রমণের হার কমাতে যে ধরনের গবেষণামূলক পদক্ষেপ নিতে হয় তা সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞরা ছাড়া সম্ভব নয়। ভাইরাসের ভ্যারিয়ান্ট চিহ্নিত করতে তার জিনের বিন্যাস বের করতে হয় যাকে বলে ‘জিনোম সিকুয়েন্সিং’। এই প্রক্রিয়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রণালী নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আসলে মহামারী রোখাটা এলাকাবিশেষে একটা আপৎকালীন ব্যবস্থা, কিন্তু অতিমহামারী ঠেকানো একটা দীর্ঘকালীন যুদ্ধ। তার জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা পরিকাঠামো, বিশেষ রকম থেরাপি (এক্ষেত্রে অক্সিজেন, স্টেরয়েড থেরাপি), ওষুধপত্র, টিকাকরণ, টেস্টিং কৌশলের দরকার হয়। টিকাকরণের ক্ষেত্রেও কিছু কৌশলগত পরিবর্তন দরকার হয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ছাড়া এপিডেমিক ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষণ করা যায় না। রোগের ধরন ও এলাকাভিত্তিতে সংক্রমণের হার দেখে রিস্ক-গ্রপিং করা, সেই মতো টিকারকরণ বা থেরাপি, এগুলো করতে হলে বিশেষজ্ঞের টিম দরকার হয়। কোভিডের বিষয়ক যে কোনও পদক্ষেপের নীতি নির্ধারণ ও গবেষণামূলক পদক্ষেপের জন্য রিসার্চ কমিটি তৈরি করেছে কয়েকটি রাজ্য, এবার সে পথে হাঁটতে চলেছে বাংলাও।