আজ কি দিবস জানেন ? না #শ্রমিক_দিবস তো অবশ্যই‚ কিন্তু এরই সাথে আজকের দিনটাকে বলা যায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উল্লু বানানো দিবস!
কিংবা বলা যায় নেকড়ে বা হায়নার গোরু-ছাগল-ভেড়ার প্রতি ভালোবাসা জানানোর দিবস! বুঝলেন না? খুলে বলি –
একে তো এই শ্রমিক দিবস যে ঘটনাকে স্মরণ করে পালিত হয় তাতে কমিউনিস্ট পার্টির কোনো ভূমিকাই ছিলোনা! ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে এই দিনে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিক বিক্ষোভ‚ পুলিশের উপর বোমা নিক্ষেপ ও বদলে পুলিশের গুলিতে ১০-১২ জন শ্রমিকদের মৃত্যু ঘটে। তখন আমেরিকায় কমিউনিস্ট পার্টি তো দূরের কথা‚ কমিউনিজমের নাম টুকুও শ্রমিকরা শুনেছিলো কিনা সন্দেহ!
কিন্তু পরবর্তীতে স্বঘোষিত শ্রমিকদরদী কমিউনিস্টরা “মান ইয়া না মান‚ ম্যায় তেরা মেহমান ” বলে উক্ত শ্রমিকদের আত্মবলিদান হাইজ্যাক করে নিজেদের রাজনৈতিক কাজে লাগায়। এবং সফলও হয়।
ঠিক যেমন ভারতে এত বছরেও কোনো ভালো পেডিগ্রির জুৎসই কমিউনিস্ট নেতা না পাওয়া যাওয়াতে একসময় হুরিয়ে খিস্তি দেওয়া রবীন্দ্রনাথ ( বুর্জোয়া কবি )‚ নেতাজী ( তোজোর কুকুর )‚ বিদ্যাসাগর ( ব্রিটিশের সহকারী আখ্যা দিয়ে তার মূর্তি ভাঙা নকশাল আন্দোলনে একপ্রকার রেওয়াজ ছিলো ) ইভেন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বিবেকানন্দ ( মোদী রামকৃষ্ণ মিশনে যাওয়ার পরের পরিস্থিতি মনে করুন ) কে নিয়েও টানাহেঁচড়া করে বেড়ায় রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য। অন্যদের কৃতিত্ব নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে হাইজ্যাক করে নেওয়াতে এই লাল শিবির রীতিমতো পেটেন্ট নিয়ে নিয়েছে বলা যায়।
আরও মজাদার ঘটনা কি জানেন? যে পুঁজিবাদী আমেরিকার ঘটনা নিয়ে এরা নাচনকোদন করে বেড়ায় সেই আমেরিকার শ্রমিকরাই ১লা মে নিয়ে কোনো আদিখ্যেতা দেখায়না। আমেরিকায় শ্রমিক দিবস পালিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রবিবার!তাহলেই বুঝুন হাইজ্যাকিং আর কাকে বলে?
ওহ হ্যাঁ আরেকটা তথ্য দিয়ে রাখি‚ এই মূহুর্তে ভারতের বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন কোনটা জানেন? RSS এর শাখা সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘ। বা Indian Labour Association ! ২০০৯ তেই যার মেম্বার দেখা যাচ্ছে ১০ মিলিয়ন। অর্থাৎ আমেরিকার মতো ভারতেও কিন্তু কমিউনিস্টরা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে না। সেই বললাম না? মান ইয়া না মান‚ ম্যায় তেরা মেহমান !!
তাও না হয় ছেড়ে দিলাম। অন্যদেশের কথা বাদ দি। খোদ কমিউনিস্ট দেশেই শ্রমিকদের অবস্থা কেমন ছিলো? লেনিন ক্ষমতায় এসেই প্রথম যে পদক্ষেপ গুলো নিয়েছিলো তার অন্যতম হলো শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার বাতিল করা! আজ্ঞে হ্যাঁ‚ ভুল পড়ছেন না। এটাই ঘটেছিলো। এর পর থেকেই এই রুশ মডেলই সারা পৃথিবীর কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের নিয়ম হয়ে যায়। যে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার কোনো অধিকার নেই। কারণ কি? না‚ শ্রমিকরাই তো আমাদের দেশ চালাচ্ছে‚ তাহলে নিজেদের দেশে নিজেরাই ধর্মঘট করে ক্ষতি করবে কেন? কি কিউট যুক্তি না? হ্যাঁ এটাই কমিউনিস্টদের শ্রমিক প্রীতি। নেকড়ের মেষপ্রীতি!
.
যাকগে তাও ছাড়ি। আমি বরং এখন সোভিয়েত ইউনিয়নে ঘটা দুটো শ্রমিক বিদ্রোহের কথা বলি। তাও আবার যার তার সময়ে না‚ কমিউনিস্টদের তৃতীয় নবী খোদ লেনিনের আমলেই ঘটেছিলো! শুনুন তবে . .
.
.
১- কনস্টাড বিদ্রোহ
মার্চ ৭-১৭, ১৯২১। এই বিদ্রোহে সামিল ছিল নৌসেনা এবং শ্রমিকরা। প্রসঙ্গত যে এই ক্রনস্টাডরা প্রথমে বলশেভিকই ছিলো। কিন্তু তথাকথিত রুশ বিপ্লবে কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচার ও বিপ্লবের নামে লেনিনের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা দেখে এরা বিদ্রোহ করে বৃহত্তর গনতন্ত্রের ডাক দিয়ে।
ফলে রেড আর্মি প্রায় ১০০০ জন বিদ্রোহীকে খুন
করে, ৪০০ জনের ফাঁসি হয়। নেহাৎই নৌ সেনা
বিদ্রোহ হলে এই বিদ্রোহের প্রসঙ্গ এখানে আনতামই না। জানেন এই কনস্টাড
বিদ্রোহের বিপ্লবীদের দাবী কি কি ছিল ??
.
শুনবেন? ওদের ১৫ দফা দাবী ছিল! যার মধ্যে অন্যতম ছিলো ট্রেড ইউনিয়ান করার অধিকার ফেরাতে হবে, গণতন্ত্র বাক স্বাধীনতা ফেরাতে হবে, সোভিয়েতের শ্রমিকদের হাতে ক্ষমতা ফেরাতে হবে!
অর্থাৎ ১৯২১ সালের মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়ানের শ্রমিক কৃষকরা বুঝে গেছে, শ্রমিক দরদের মূলো ঝুলিয়ে কি টুপিই তাদের পরিয়ে দিয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি!
.
(২) তম্ভব কৃষক বিদ্রোহ –
১৯২০ সাল। প্রায় ৭০,০০০ কৃষক ও কৃষি শ্রমিক নিজেদের পরিবার বাঁচাতে কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কারন গৃহযুদ্ধ কালীন রেড
আর্মির খাবার জোগাতে তাদের ওপর অসম্ভব অত্যাচার শুরু হয়। প্রতি গ্রামে নির্দিষ্ট লেভি বেঁধে দেওয়া হয়। অর্থাৎ নিজেদের হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফলানো ফসলের একাংশ কমিউনিস্ট পার্টিকে তুলে দিতেই হবে। এখন যেমন মাফিয়ারা তোলা আদায় করে ব্যবসায়ীদের থেকে‚ ঠিক তেমনি। আর দিতে না পারলেই শুরু হতো রেড আর্মির অত্যাচার! আর এই অত্যাচার এর পন্থা বলে দিয়েছে স্বয়ং লেনিন –
” শস্য উৎপাদক অঞ্চলে ২৫-৩০ জন ধনী চাষিকে আটক করতে হবে, জামিন হিসেবে, যথেষ্ট সংগ্ৰহ না-হলে তাদের গুলি করা হবে।”
এমনক ‘হাউ টু অর্গানাইজ কম্পিটিশন’-এ লেনিন স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছে – ” কোথাও এমন বদমায়েশদের জেলে পুরতে হবে, আরেক জায়গায় এদের দিয়ে ল্যাট্রিন সাফ করাতে হবে, অন্য কোথাও হলুদ কার্ড দিতে হবে যেন সবাই নজর রাখে এদের ওপর। চতুর্থ জায়গায় এমন জনা দশেককে স্পটে গুলি করে মারতে হবে … যত বেশি বৈচিত্র্য তত আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়বে, ততই নিশ্চিত আর দ্রুততার সঙ্গে আমাদের সমাজতন্ত্র জয়ী হবে।’
যাইহোক‚ মনে রাখা উচিৎ যে এরা কেউই দক্ষিন পন্থী ছিল না‚ ছিলো বলশেভিকদের কৃষক সংগঠনের লোক। রেড আর্মিরই একটা ফ্যাকশন। ১৯১৭ সালে লেনিনের সাথেই ছিলো এরা। কিন্তু যখন দেখলেন লেনিন বিশ্বাসঘাতক, মারাত্মক এক সর্বগ্রাসী চিটিংবাজ‚’যার হাতে পরে রাশিয়ার শ্রমিক কৃষকরা জারের আমলের সামন্ততান্ত্রিক সিস্টেমে পাওয়া ন্যূনতম অধিকার টুকুও ( প্রায় শূন্য ) খুইয়ে আক্ষরিক অর্থেই ক্রীতদাস হতে চলেছে তখন বলশেভিকদের কৃষক সংগঠন ভেঙেই এই বিদ্রোহের শুরু হয়। প্রায় ১৪,০০০ কৃষক হত্যা করে লেনিন এই বিদ্রোহ দমন করেন।
.
এতো মাত্র দুটো ঘটনা! এমন বহু বহু শ্রমিক বিদ্রোহ কে বুলেটের সামনে স্রেফ গুড়িয়ে দিয়েছিল তথাকথিত শ্রমিকদরদী কমিউনিস্টরা! তাদের নেতা লেনিন-স্টালিন-ট্রটস্কিরা
*আজ এই প্রচলিত শ্রমিকদের দিবসে শ্রমিকদের ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের নোংরা রাজনীতি থেকে শ্রমিকদের মুক্তির দিন হোক আজ! সেই চেষ্টাই করি আমরা! তাহলে সেটাই হবে হে মার্কেট সহ পৃথিবীর যাবতীয় আত্মত্যাগী কৃষক শ্রমিকদের প্রতি আজকের শ্রদ্ধাঞ্জলি
Copied from Arindam Argha Mukherjee’s Facebook page…