জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট তুলে নিতে যে ভাবে চরম হুঁশিয়ারি শুনিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাকে স্বৈরাচার বলে মন্তব্য করলেন প্রবীণ বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তাঁর কথায়, রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও পুলিশ মন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাহা ফেল করেছেন। যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তার ষোলো আনা তাঁর, শুধুই তাঁর। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি যে রকম হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেছেন তা দেখে মনে হচ্ছে বাংলায় হিটলারি শাসন চলছে।
বৃহস্পতিবার সকালে নবান্ন যাওয়ার পথে হঠাৎই এসএসকেএম হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি হাসপাতালে পৌঁছতেই জুনিয়ার ডাক্তাররা তাঁকে ঘিরে ধরে স্লোগান তুলতে থাকেন। তাঁরা বলেন, আমরা বিচার চাই।
তাতে দৃশ্যত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দেন, রোগীকে পরিষেবা না দিয়ে এ ভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য অচলাবস্থা তৈরি করা চলবে না। চার ঘণ্টার মধ্যে যে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেবেন না, তাঁদের হস্টেল ছেড়ে দিতে হবে। শুধু তা নয়, মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন হাসপাতালে বহিরাগতরাই অশান্তি পাকাচ্ছে। বিজেপি ও সিপিএমও চক্রান্ত করে অশান্তি জিইয়ে রাখছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই চরমপত্র নিয়ে চিকিৎসকদের বড় অংশের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী যখন বিজেপি ও সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছেন, তখন প্রতিক্রিয়ায় মুখ খুলেছেন তাঁরাও।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ভূমিকা নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে মুকুলবাবু বলেন, দিনের পর দিন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। কোনও ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এ দিন হাসপাতালে পৌঁছনোর পর অনেকে আশা করেছিলেন তিনি জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগের কথা শুনবেন। তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন। তাতে আশ্বস্ত হয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ দেবেন। এবং হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা চালু হবে। কিন্তু তা না করে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে হুঁশিয়ারি দিলেন, তাকে স্বৈরাচার ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি?”
এখানেই থামেননি মুকুলবাবু। তিনি বলেন, ইদানীং একটা নতুন শব্দ শিখেছেন মমতা,-‘বহিরাগত’। সব কিছুতেই উনি বহিরাগত দেখছেন। আর দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমি বলি মুখ্যমন্ত্রীর তো অনেক কাজ। বাংলা দেখতে হবে, গোটা ভারতবর্ষের খেয়াল রাখতে হবে। তার পর ১১ টা দফতরের দায়িত্বও সামলাতে হবে। এই কারণেই পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ব্যর্থতা বারবার সামনে এসে যাচ্ছে। উনি এই দুই দফতর থেকেই ইস্তফা দিন। তাতে বাংলার উপকার হবে। জুনিয়র ডাক্তাররাও বাঁচবেন আর রোগীদেরও চিকিৎসা হবে।
তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, মুকুলবাবুরা চাইছেন হাসপাতালগুলিতে অচলাবস্থা জিইয়ে থাক। আর তার উপর ভর করে ওনারা রাজনীতি করে যাবেন। তাতে রোগীরা পরিষেবা না পেলেও ভাল। এই রাজনীতি বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।