কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন :
১। বিদ্যাসাগর কলেজের দিবা বিভাগের সময়কাল সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫-৪৫ মিনিট। ঘটনাস্থল অর্থাৎ কলেজের বিধান সরণী ক্যাম্পাস দিয়ে বিদ্যাসাগর মেট্রোপলিটন কলেজের (সান্ধ্য বিভাগ) প্রবেশের রাস্তা নয়। মেট্রোপলিটনে প্রবেশ পথটি পার্শ্ববর্তী গলির ভিতর দিয়ে, অর্থাৎ বিধান সরণি ক্যাম্পাসের পিছনের রাস্তা দিয়ে। সুতরাং ওই সময়ে বিধান সরণি ক্যাম্পাসে সান্ধ্য কলেজের ছাত্রদের জমায়েত বৈধ নয়, এটি বলা বাহুল্যমাত্র।
২। বিদ্যাসাগর কলেজ ফর উইমেন (প্রাতঃ বিভাগ) ও বিদ্যাসাগর কলেজের (দিবা বিভাগ) পড়ুয়ারা এই বিধান সরণি ক্যাম্পাস সংলগ্ন পথ দিয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু প্রাতঃ বিভাগের ছাত্রীদের ছুটি হয় দুপুরে। সুতরাং সন্ধ্যার সময় দিবা বিভাগের ছুটির প্রায় ৪৫ মিনিট পরে এত ছাত্র-ছাত্রী বিধান সরণি ক্যাম্পাসের ভিতরে জমায়েত হয়েছিল কী উদ্দেশ্যে? তবে কি পরিকল্পিত অশান্তি?
৩। যেসব ছাত্র-ছাত্রীকে দেখা গেছে, তার মধ্যে একজন আবার শোনা যাচ্ছে সিটি কলেজ (মেইন)-এর ২০০৮ সালের বি.কম-এর ছাত্র ছিল। বিদ্যাসাগর কলেজে (দিবা বিভাগ) কোনো বাণিজ্য বিভাগ নেই। তবে ওই সময়, ক্যাম্পাসের ভিতরে ওই ছাত্রটি কী করছিল ? তবে কী সন্ধ্যার পর কলেজের ভিতরে বহিরাগতদের অবাধ গতি? চিন্তার বিষয়।
৪। যে হলুদ পাঞ্জাবি পরা ছাত্রটিকে ঘিরে অভিযোগ, একাধিক ভিডিয়ো ক্লিপে উঠে এসেছে বলে দাবি অর্থাৎ যাকে বাঁশ/লাঠি হাতে নাকি আঘাত করতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ, সেই নাকি পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে। বিষয়টি ভাবতে হবে। আশা করা যায় নিশ্চয়ই কোনো বিজেপি কর্মী ওই প্রতিবাদে শামিল হয়নি। তবে ছেলেটির পরিচয় কী?
৫। হঠাৎ আলো নেভানোর উদ্দেশ্য কী ছিল? নিশ্চয়ই বিজেপির কোনো কর্মী/সমর্থক অতি সন্তর্পণে কলেজে ঢুকে। আলো নেভায়নি!তবেঅন্ধকারে অপরাধীকে আড়াল করবার জন্য কি আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল?
৬। বাইকে আগুন লাগানোর ক্ষেত্রে বিজেপি কর্মীদের প্রতি যে অভিযোগ সে ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন : (ক) বাইকগুলো নাকি টানতে টানতে কলেজের বাইরে নিয়ে আসা হয়েছিল। বিধান সরণি ক্যাম্পাসের লাগোয়া যে প্রবেশ পথে বাইকগুলো ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই প্রবেশ পথে কটি লোহার বড়ো দরজা আছে। বলা হচ্ছে ওই দরজাটি অক্ষত। কেবলমাত্র নাকি বিজেপি কর্মীরা সজোরে ঠেলে তালার চেনটি ছিড়ে দিয়ে দরজাটি খুলে প্রবেশ করেছে। আমার প্রশ্ন, কয়েকশো মানুষ টানাটানি করলেও কি লোহার মোটা চেন ছিড়ে যায় ? আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে কয়েকজন বিজেপি কর্মী ওই দরজাটিকে টানাটানি করেছিল তবে প্রশ্ন যে বিজেপির মিছিলে কি মানুষের বদলে দানবেরা হাঁটছিল, যাদের টানে একেবারে পটাং করে দরজার চেনটি ছিড়ে গেল? নাকি দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে বিজেপি কর্মীদের জাদুস্পর্শে তালাটি নিজে নিজেই খুলে গেল?নাকি তালাটি আগে থেকেই খুলে রাখা হয়েছিল (পরিকল্পিত ভাবে)? মানুষ জানতে চায়।
(খ) আবার বলা হলো বিজেপি কর্মীরা নাকি রেলিং টপকে ভিতরে ঢুকেছিল। রেলিঙের ফলাগুলি টপকে গেল ?মহামানব নাকি? আর বাইকগুলো কি তবে রেলিংয়ের উপর দিয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে বাইরে নিয়ে এসেছিল ?
ঘটনাগুলির মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব মনে হচ্ছে না?
(গ) বলা হচ্ছে নাকি যে জায়গায় অর্থাৎ গেটের বাইরে বাইক পোড়ানো হয়েছে, সেখানে নাকি কেরোসিন তেলের গন্ধ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সন্দেহ বাইকে আগুন লাগাতে নাকি কেরোসিন তেল ব্যবহৃত হয়।
(ঘ) মিছিলে কি কেউ আগে থেকেই এই ভেবে তৈরি ছিল যে ওইখানে বাইক মজুত থাকবে, আর তাতে আগুন লাগানোর জন্য কেরোসিন তেলের পাত্র হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে সূদুর পথ অতিক্রম করে সটান পৌঁছে যাবে গন্তব্যস্থলে। পুলিশ দেখতে পাবে না। কেউ বাধা দেবে না! সরাসরি কলেজে প্রবেশ করে বাইকগুলোকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এসে পুলিশ সহ জনসমক্ষে তাতে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেবে, কেউ কোনো বাধা দেবে , দর্শকাসনে সকলে বিস্ময়ে লীলা দর্শন। করবেন, এমন ভাবনাটা কি খুব যুক্তি গ্রাহ্য ? নাকি আগে থেকেই কেরোসিন তেল মজুত ছিল?
(ঙ) উত্তেজিত জনতা যদি আগুন লাগায় তবে তো কলেজের ভিতরে যেখানে বাইকগুলো ছিল বলে দাবি সেখানেই আগুন লাগাতে পারতো। ভেবে চিন্তে বাইরে এনে আগুন লাগাবে কেন? তবে কী সুপরিকল্পিত ভাবে কোনও চিত্রনাট্য রঙ্গমঞ্চে মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা ছিল ?
৭। এবার সরাসরি আসা যাক মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গে। ক্যাম্পাসের একতলায় কাঠের বাক্সের মধ্যে যেখানে মূর্তিটি ছিল কলেজে ঢুকে সেখানে পৌঁছাতে হলে ২টি দরজা অর্থাৎ একটি লোহার গেট ও একটি কাঠের দরজা পেরোতে হয়। যদি ধরে নেওয়া যায় মিছিল থেকে কেউ ওই দুইটি গেট পেরিয়ে ভিতরে। প্রবেশ করে সযত্নে মূর্তিটি তুলে এনে বাইরে বার করে প্রবেশ পথে নিয়ে এসে ভাঙল, তবে
প্রশ্ন : (ক) কেন কেউ বাধা দিল না?
(খ) উন্মত্ত জনতা যদি ভাঙে তবে তো মূর্তিটি যেখানে ছিল সেখানেই ভাঙতে পারতো। এতো ভেবে চিন্তে, সযত্নে বাইরে এনে ভাঙবে কি?
(গ) এই স্থানটিতো সিসিটিভি-র ঘেরাটোপে থাকার কথা। ফুটেজ কোথায় ? কেন তা প্রকাশ্যে এলো না?নাকি সিসিটিভি নিষ্ক্রিয় ছিল? কেন ছিল? বলা হলো প্রায় মাসখানেক আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিসিটিভি দীর্ঘদিন থানায় রয়েছে। প্রশ্ন দীর্ঘদিন সিসিটিভি নিষ্ক্রিয় থাকা তো কলেজের নিরাপত্তারও পরিপন্থী। আরও প্রশ্ন যদি সিসিটিভি নিস্ক্রিয় হয় তা তো বিজেপি কর্মীদের তা জানার কথা না। জানবে বিশেষ বিশেষ লোকজন, তবে কি নির্দিষ্টভাবে কেউ জেনে বুঝে চিত্রনাট্যটি রচনা করেছিল বিল্ডিংয়ের বাইরে ভেবে চিন্তে, পরিকল্পনা করে? রহস্যের উদঘাটন হবে কোন ফুটেজের ভিত্তিতে? আন্দাজে? নাকি ‘আমি সব জানি’ নামক কোনো অন্তর্যামী আছেন? জানি না!
(ঘ) আসা যাক মূর্তির বয়স প্রসঙ্গে। দাবি করা হলো মুর্তিটির বয়স নাকি ২০০ বছর। আচ্ছা বলুন তো ১৮২০ সালে জন্মানো বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই বছর ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান সূচনা হবে সেপ্টেম্বরে। আর মূর্তিটির বয়স নাকি ২০০ বছর। অর্থাৎ বিদ্যাসাগরের জন্মের আগেই বোধ হয় কেউ জানতেন তিনি পরিণত বয়সে কেমন দেখতে হবেন। তাই আগে ভাগেই তার অবয়ব দিয়ে দেওয়া হয়েছিল নিষ্প্রাণ মূর্তিতে। অসাধারণ প্রাজ্ঞ চিন্তা ভাবনা! উন্নততর বাঙ্গলা বা বোধহয় বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত বাঙ্গলার মহান প্রাণের ত্রিকালোজ্ঞ চিন্তার উচ্চতর ভাবনার মূর্ত বিকাশ! অথবা জেনে বুঝে ভণ্ডামি আর মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা ও সন্তর্পণে মানুষের আবেগকে নিয়ে খেলা করার চেষ্টা।
৮। মিছিলে যারা হাঁটছিলেন তাদের অনেকেই নাকি ‘মদ্যপ অবস্থায় বিদ্যাসাগর কলেজে প্রবেশ করেছেন বলে দাবি করেছেন একজন স্বঘোষিত মহান শিক্ষাবিদ। যিনি নিজেকে দায়িত্বশীল নাগরিক বলে দাবি করেন। তার এই কুৎসিত, কদাকার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যের প্রতিবাদ বা বিদ্রুপ করতেও রুচিতে বাধে। শুনলাম কোনো এক ব্যক্তি নাকি কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে সুদূর সোনারপুরের প্রত্যন্ত প্রান্তিক স্থানে ছিলেন। তিনি নাকি বুঝেছিলেন, শুনেছিলেন যে বিজেপির মিছিলে মদ্যপ অবস্থায় লোকজন হাঁটছিলেন! ধন্য কাণ্ডজ্ঞান ! ধন্য দায়িত্ববোধ! ধন্য আঘ্রাণশক্তি! জানি না বিধান সরণি থেকে কোনো অলৌকিক বলে মদের গন্ধ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাতে ছড়িয়ে পড়েছিল! এহেন ত্রিকালদর্শী বিজ্ঞদের জানাই প্রণতি! আরও অভিযোগ মিছিলে হাঁটা লোকজন নাকি অন্যরাজ্য থেকে আমদানি করেছিল বিজেপি। এই মহান সর্বজ্ঞরা তা সহজেই তাদের মহান চিন্তাশক্তি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন। এদের পদধূলিতে ধন্য বাঙ্গলা! তাই এই রকেট বেগে অগ্রগতি, বিশেষত শিক্ষাক্ষেত্রে। বিজেপি কর্মীরা নাকি স্লোগান দিয়েছিল ‘বিদ্যাসাগরকা নাম মিটাদো’ আরও কতো কী! জানি না, একজন যুক্তিবাদী বাঙ্গালি হিসেবে আমার প্রশ্ন বিজেপির কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এমন কোনো কাজ বিজেপি কর্মীরা করবে কি, যাতে প্রতীয়মান হয় বিজেপি বাঙ্গালি বিদ্বেষী? নাকি চক্রান্ত করার জন্যই তাদের যারা কোনো কর্মসূচি ছাড়াই কেবলমাত্র রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য ‘খিচুড়ি ঘোঁট’ তৈরি করে ন্যূনতম নীতি আদর্শের তোয়াক্কা না করে? যাদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিল নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল, যার ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচি ছিল বিগত সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে। বিজেপিকে তবে কী রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা অসম্ভব ছিল? তাই প্রয়োজন পড়ল কাঁচা হাতের স্ক্রিপ্টে রচনা করা এক অসম্ভব নিম্নরুচির সস্তা যাত্রাপালার? যুক্তি কী বলে?
৯। পরবর্তী অভিযোগ ছিল সেদিন মিছিলে কোনো বাঙ্গালি ছিল না। মেড়ো খোট্টার দল’ নাকি মিছিলে হেঁটেছিল। যদি তর্কের খাতিরে ধরেওনি যে মিছিলে কোনো অবাঙ্গালি ছিলেন, ক্ষতি কী ? তারা তো ভারতের নাগরিক। বাংলাদেশ থেকে ভাড়া করে এনে তো আর নির্বাচনী প্রচার করতে হয়নি। কারোও কারোও তো আবার সেটাও প্রয়োজন পড়ে, যা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিপন্থী। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা খুব মনে পড়ছে। শ্যামাপ্রসাদ যখন পঞ্জাব থেকে কাশ্মীর রওনা হয়েছিলেন, এক সাংবাদিকের পারমিট প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন অখণ্ড ভারতে যদি দক্ষিণ কলকাতা (পূর্ব) কেন্দ্রের সাংসদ হিসেবে পঞ্জাবে আসতে তার কোনো পারমিট না লাগে, তবে কাশ্মীর (যা দাবি করা হয় অখণ্ড ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ) যেতে পারমিট লাগবে কেন? আমি পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক হিসেবে জানতে চাইছি যদি কালকে আমি বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে উত্তর প্রদেশে অংশ নিই, তবে কি আমার পারমিট লাগবে?নাকি সেখানে গেলেই লোকে বলবে বাঙ্গালির দল’ বিজেপির প্রচারে এসেছে। আত্মবলিদানের মাধ্যমে কাশ্মীরে পারমিট প্রথা তুলে দিয়ে ভারতকেশরী তথা পশ্চিবঙ্গের স্রষ্টা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় এক অনন্য নজির গড়েছিলেন। আর তাঁরই রাজ্যে যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে অন্য রাজ্য থেকে মানুষ এসেছিলেন, মিছিলে হেঁটেছিলেন, তবে তা কি অপরাধ? বাঙ্গলা কি বধ্যভুমি? অন্যের প্রবেশ নিষেধ? কেউ কেউ কি এখানে তবে পারমিট চালু করার পক্ষে? বিচ্ছিন্নতাবাদকে কে প্রশ্রয় দিচ্ছে? বিভেদকামী শক্তির প্রকৃত মদতদাতা করা? ভারতবর্ষের অখণ্ডতা রক্ষার পরিপন্থী কারা? প্রত্যেককে ভাবতে হবে! সতর্ক হতে হবে। জাগ্রত হতে হবে। যে সকল ‘বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই’ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মতো মহান প্রাণকে তাদের কুক্ষিগত বলে মনে করেন, উপচে ওঠা এই অজ্ঞ বিদ্যাধারীদেরকে দেখলে করুণা হয়। মন্তব্য করার জন্য সমকক্ষ বলে মনে করছি , তাই মন্তব্য করে সময় নষ্ট করলাম না।
১০। তবে কি কারো এই বিষয়ে সংশয় ছিল যে বাঙ্গালি বনাম অবাঙ্গালি বিতর্ক উস্কে না দিলে বা বিজেপি বাঙ্গালি বিদ্বেষী এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে না জাগ্রত করতে পারলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না? আমাদের চিন্তা করতে হবে। এত কিছুর পরেও সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে জোড়াসাঁকো বিধানসভা ক্ষেত্রে মানুষ। বিজেপিকে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন, যার ফলশ্রুতি এই বিধানসভা ক্ষেত্রে বিজেপি প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে, যা ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরীক্ষে প্রায় দশ হাজার ভোট বেশি।। সুতরাং লাভের গুড় বোধ হয় পিপড়ে খেয়ে ফেলেছে। এই ফলাফল প্রমাণ করল এত অঞ্চলের যারা সুধী ভোটার তাঁরা বিজেপিকে তো বাঙ্গালি বিদ্বেষী মনে করেনই না, উপরন্তু বাঙ্গলার একমাত্র রাজনৈতিক ভরসা ও নিরাপত্তার স্থল বলে মনে করে। মানুষ জানে এই সকল মেকি বাঙ্গালি প্রেমীদের, কারা বিধানসভায় ঐতিহাসিক সম্পত্তি ধ্বংস করেছিল? কারা বাঙ্গালির আবেগের অন্যতন প্রাণকেন্দ্র, শিক্ষার পীঠস্থান প্রেসিডেন্সি কলেজে ঢুকে মদত দিয়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর মতো বিশ্ববরেণ্য বাঙ্গালি বিজ্ঞানীদের ঐতিহাসিক ল্যাবরেটরিতে ভাঙচুর চালিয়ে বিশ্বের দরবারে বাঙ্গলা তথা বাঙ্গালির মাথা হেঁট করে দিয়েছিল। বাঙ্গলার ইতিহাস সম্পর্কে নেই ন্যূনতম ধারণা, বাঙ্গলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্ত্রমবোধের যথেষ্ট অভাব যাদের, বাঙ্গলার শ্রেষ্ঠ সন্তান ড. শ্যামাপ্রসাদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম দল তথা ভারতীয় জনসঙ্ঘের উত্তরসূরি ভারতীয় জনতাপার্টির কর্মীরা তাদের থেকে বাঙ্গলার প্রতি দায়বদ্ধতার পাঠ নেবেনা। তাই বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী, জনগণমন অধিনায়ক নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর ভাষায় ‘জনতা জর্নাদন’ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এই মেকি বাঙ্গালিপনার গোরুকে নির্বাচনে নির্বাচক মণ্ডলীইসক্রিয়ভাবে টেনে গাছ থেকে নামিয়ে দিয়েছেন। বিশেষত এই বিধানসভা ক্ষেত্রে ফানুস শতছিদ্র হয়েছে। কাল্পনিক গল্পের যে ‘গুল্পতা আর বোধহয় কাজে এলো না!
ভারতকেশরী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনিষ্ঠতম উ পাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবরূপকার, বাঙ্গালির হৃদয়ের মণিকোটার স্থায়ী সম্রাট বঙ্গজনক ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য, তার মহান কর্মক্ষেত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা তার অধীনস্থ কোনোমহাবিদ্যালয়ে বিজেপির কোনো কর্মী, সমর্থক বা শুভাকাঙ্ক্ষী কখনও কোনো অবস্থাতেই আঘাত হানতে পারে কোনো বাঙ্গালি তা বিশ্বাস করেন না। বিজেপি এই ক্ষেত্রগুলিকে মন্দির অপেক্ষা অধিকতর পবিত্র মনে করে। আর এই বিষয়ে চেতনা জাগ্রত করতে হলে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি করা প্রয়োজন। এমন দলের অনুসারী, যাদের দলের নেই কোনো নীতি, আদর্শ, অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি, উজ্জ্বল ইতিহাস তাদের মধ্যে এই অনুভূতি জাগ্রত হওয়া সম্ভবপর নয়। বিশৃঙ্খলা ও গালাগালি যাদের সম্পদ তাদের থেকে বাঙ্গালি নেবে সংস্কৃতির পাঠ ? দুর্ভাগ্যজনক আবদার! আর যারা বিজেপিকে ‘মেড়ো খোট্টার দল’বলে বিদ্রুপ করে, তাদের অবগতির জন্য জানাই এই দলের প্রতিষ্ঠাতা না থাকলে এই মাটিতে দাঁড়িয়ে আজ এই সকল কথা বলার মতো পরিস্থিতিও তাদের থাকতো না। এই সকল স্বঘোষিত শিক্ষাবিদদের উদ্দেশ্যে বিনীত আবেদন ইতিহাস জেনে কথা বলুন। এক্ষেত্রে গবেষণালব্ধ ইতিহাসের কথা বলছি।। গালগল্পে ভরা স্বরচিত ইতিহাস নয়। এদের জ্ঞানের অজ্ঞতার প্রতি পরমেশ্বরের কাছে যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণের ভাষায় আমার প্রার্থনা—এদের চৈতন্য হোক’। পরিশেষে সকলের প্রতি যাঁরা পাশে ছিলেন সহযোদ্ধা বা সমর্থক বা শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে, যাঁরা বিপক্ষে ছিলেন, যাঁরা মনের সুখে কুৎসা ও গালাগালি করেছেন, আর বিশেষত যারা বিজেপির এই বিপুল জয়ে হতাশায় ভুগছেন, তাঁদের সকলকে জানাই জাতীয়তাবাদী গৈরিক অভিনন্দন। সুধী নাগরিকদের প্রতি আবেদন, বাঙ্গলার গৌরব ভারতকেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবায়ণের লক্ষ্যে সমাজের প্রান্তিক মানুষগুলিকে বিকাশের মূলস্রোতে যুক্ত করতে তথা পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়ের একাত্ম মানবদর্শনের সার্থক রূপদানের উদ্দেশ্যে নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সরকারকে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ ও সমর্থন করে বিকাশ ও প্রগতির ধারাকে সুনিশ্চিত করে জাগ্রত ও উন্নত বাঙ্গলা গঠনের পথখে প্রশস্ত করুন। আসুন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ ও নির্মল বাঙ্গলা গড়ে তুলি।
ড. শুভদীপ গাঙ্গুলী
(লেখক বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক)
2019-06-07