তাঁর ডাক নাম ছিল রুমা, ভালো নাম কমলিকা। অনেকেই জানেন না, এই কমলিকা নামটি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাই এই নামটি রুমা রেখে দিয়েছিলেন বুকের মধ্যে, একান্ত নিজের করে। সকলের করতে দিয়েছিলেন শুধু ডাক নামটিকে। তাই এই ডাক নামেই বিখ্যাত হয়েছিলেন রুমা গুহঠাকুরতা।
একাধারে গায়িকা ও নায়িকা রুমার জন্ম হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। যশোরে। বাবা সত্যেন্দ্রনাথ ঘোষ, মা সীতা দেবী। মা ছিলেন এইচ এম ভি’র নিয়মিত গায়িকা। বাবাও ছিলেন অভিনয় আর সঙ্গীতের সমঝদার গুণী মানুষ। পাড়ার নাটকেপালায় অভিনয় করতেন। তাই গান আর অভিনয় রক্তে নিয়েই জন্মেছিলেন রুমা। মায়ের কাছেই তাঁর গানের তালিম হয়েছিল, অভিনয়টা শুরু হয়েছিল হঠাৎ সুযোগে।
দেশ ভাগের পর বাবা চাকরি নিয়ে কলকাতায় এলেন। মা এখানে এসে খুললেন গানের স্কুল ‘স্বরবিতান’। নামটা বাবার দেওয়া। এটাই কলকাতার প্রথম গানের স্কুল। কলকাতায় এসে রুমা যোগ দিলেন উদয় শঙ্করের ট্রুপে। ভারতের নানান প্রান্তে নাচের অনুষ্ঠান করতে লাগলেন। বোম্বের এক অনুষ্ঠানে তিনি চোখে পড়ে গেলেন তখনকার হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত নায়িকা দেবিকারানির। তিনি ডাকলেন বোম্বে টকিজের ছবি ‘জোয়ার ভাটা’য় একটি নর্তকীর ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য। এটি অভিনেতা দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি। এই ছবি দিয়েই চলচ্চিত্র জগতের যাত্রা শুরু হল রুমার, নাম হল, রুমা দেবী। তারপর হিন্দি ও বাংলা মিলিয়ে অনেক বিখ্যাত ছবি তাঁর অভিনয় দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন।
ছায়াছবিতে রুমা দেবীর বিশেষত্ব ছিল তিনি অন্যের গানে লিপ দিতেন না। ‘আশিতে আসিও না’-ছবির জন্য ‘তুমি আকাশ যদি হতে’ গানটি রেকর্ডিং করা হয়ে গিয়েছিল। গানটি ডুয়েট। প্রথমে মান্না দে ও বনশ্রী সেনগুপ্তের কন্ঠে রেকর্ডিং করা হয়েছিল। তখন অন্য এক নায়িকার অভিনয় করার কথা ছিল। তিনি করতে না পারায় নেওয়া হয় রুমাকে। তখন রুমার শর্ত অনুযায়ী গানটি আবার রেকর্ডিং করতে হয়। ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল গানটি।