‘নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন মমতা’, ‘জয় শ্রীরাম’ বিতর্কে সোজাসাপটা মত অপর্ণার

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে থাকা যে বুদ্ধিজীবী বৃত্ত, তার অন্যতম মুখ ছিলেন অভিনেত্রী তথা পরিচালক অপর্ণা সেন। কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেল দিদির সেই ঘনিষ্ঠ পরিসরে দেখা যায় না তাঁকে। এখন যখন বিজেপি-র উত্থান আর ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বাংলার রাজনীতি সরগরম, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় তোপ দাগলেন তিনি। এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অপর্ণা বলেছেন, “আমার তো মনে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কবর নিজে খুঁড়ছেন।” ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান প্রসঙ্গে মমতার প্রতিক্রিয়া নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন অপর্ণা।

বাংলায় যে রাজনীতি শুরু হয়েছে সে ব্যাপারে অপর্ণা বলেন, “আমি এটা একেবারেই পছন্দ করি না। আমার মনে হয় ধর্ম ধর্মের জায়গায় থাকুক, রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়। দু’টোকে এক না করাই শ্রেয়। দুটোকে এক জায়গায় করতে গিয়েই সমস্যা হচ্ছে।” এরপরই ওই তিনি বলেছেন, “তবে গণতন্ত্রে প্রত্যেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। যদি কেউ ভাবেন জয় শ্রীরাম বলবেন, আল্লা হু আকবর বলবেন বা জয় মা কালী বলবেন, তাহলে তিনি বলতেই পারেন। আপনি তাঁকে আটকাতে পারেন না।”

প্রথমে চন্দ্রকণা এবং তারপর এই সে দিন নৈহাটি-ভাটপাড়া। কনভয়ের সামনে ‘জয় শ্রীরাম’  স্লোগান শুনে নেমে পড়েছিলেন মমতা। তাড়াও করতে দেখা যায় তাঁকে। এ ব্যাপারে অপর্ণা সেন বলেন, “যে ভাবে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে, কদর্য ভাষা ব্যবহার করে তাঁদের আটকাতে গেলেন, এটা মোটেও মুখ্যমন্ত্রীর শোভা পায় না।”

তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিরকালই আবেগপ্রবণ। করার আগে ভেবে করেন না। যদি তিনি মনে করেন অনেক দিন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, তাহলে তাঁর কথায় লাগাম টানা উচিত। কথার ধরন বদলানো উচিত। অমিত মিত্র, সৌগত রায়ের মতো মানুষদের থেকে তাঁর পরামর্শ নেওয়া উচিত।”

আগামী বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও সাক্ষাৎকারে অকপটে নিজের কথা বলেছেন অপর্ণা। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কঠিন লড়াইয়ে পড়তে হবে বিধানসভা ভোটে। এমনিতেই শহরের নাগরিক সমাজের অধিকাংশই বিজেপি ঘেঁষা হয়ে গিয়েছে। যে কারণে আমি উদ্বিগ্ন। নরেন্দ্র মোদী দেশের জন্য অনেক কিছুই করছেন। কিন্তু তাঁদের প্রাথমিক ধারনাটাই জাতীয়তাবাদ আর হিন্দুত্বকে মিশিয়ে দেওয়া। সাভারকার ব্র্যান্ডের জাতীয়তাবাদ। যেটা আমায় সব সময় ভাবাচ্ছে।” এর থেকে মহাত্মা গান্ধীর বহুত্ববাদের ধারনাতেই যে তাঁর আস্থা তাও জানিয়েছেন ওই সাক্ষাৎকারে।

বাংলায় ভোট বিপর্যয় হয়েছে তৃণমূলের। ৩৪ থেকে আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ২২-এ। দুই থেকে বেড়ে বিজেপি হয়েছে ১৮। এই পরিস্থিতিতে মমতার উদ্দেশে অপর্ণার বার্তা, “প্লিজ! বলার আগে একটু ভেবে বলুন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.