লোকসভা ভোটে একা তিনশ পার করেছে বিজেপি। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সেই দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ‘বিগ-ফোর’-এর অন্যতম।
বিষ্যুদবার সন্ধ্যায় রাইসিনা পাহাড়ের উঠোনে জমকালো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর পরই শপথ নিলেন রাজনাথ। আর তার পর পরই..অমিত অনিলচন্দ্র শাহ। অদৃশ্য দেওয়ালে তখনই যেন লেখা হয়ে গেল এক শব্দবন্ধ- ‘অমিত শক্তিধারী’। রাইসিনা পাহাড়ের উঠোন, পার্কিং ছাড়িয়ে ড্রাইভওয়ে মায় দূরে গেট পর্যন্ত বিস্তৃত দর্শকাসন তখন তখন গম গম করছে হাততালিতে।
এ বার লোকসভা ভোটের আগে ঠিক যে মুহূর্তে গান্ধীনগর আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে অমিতের নাম ঘোষণা করা হয়, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সেই সময় থেকেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মোদীকে কি তাঁর উত্তরসূরী তৈরি করছেন? কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ফের সরকার গঠিত হলে অমিত শাহ কি মন্ত্রী হবেন? এবং বিজেপি তথা গেরুয়া পরিবারে অমিতের যা রাজনৈতিক ওজন তাতে প্রায় সকলেই আন্দাজ করতে শুরু করেছিলেন, মন্ত্রী হলে বিগ-ফোরের মধ্যেই থাকবেন অমিত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির সদস্য হবেন তিনি।
বিগ-ফোর অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র, অর্থ, বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। অনেকে এও ধারনা করেছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীই হবেন অমিত। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার মতো বিষয় রয়েছে। অমিতের আচরণ ও মেজাজের সঙ্গে সেটাই মানান সই।
মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এখনও চলছে। এখনও পর্যন্ত দায়িত্ব বন্টনের ঘোষণা হয়নি। অমিত শাহ কোন দফতরের দায়িত্ব পাবেন তাও পরিষ্কার করে বলা হয়নি।
তবে আগের ধারনার বদল হতে শুরু করেছে। মন্ত্রিসভার দায়িত্ব থেকে অরুণ জেটলি অব্যহতি চেয়ে নেওয়ার পর এখন অনেকে বলতে শুরু করেছেন, হতে পারে অর্থমন্ত্রী হবেন অমিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অমিতের লক্ষ্য নয়। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি হিসাবে এমনিতেই অমিত শাহ যাবতীয় গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে থাকেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল তাঁর সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগ রাখেন। বরং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়ে ঘটনা-অঘটনের দায়ও নিতে হতে পারে। তুলনায় বিশ্বজনীন ট্রেন্ডই হল, সরকারের অর্থমন্ত্রীর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই অর্থমন্ত্রী হওয়ার আগ্রহও তাঁর বেশি।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শেষমেশ যে দায়িত্বই পান আপাতত বিজেপি-র সভাপতি পদে থেকে যাবেন। সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হতে এখনও দেড় বছর বাকি। সেই মেয়াদ হয়তো পূর্ণ করবেন তিনি। তা ছাড়া সরকার ও সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটাও তাঁর মাধ্যমেই হবে। সব মিলিয়ে মোদীর পর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সব থকে শক্তিধর নেতা হয়ে উঠলেন তিনিই। এ নিয়ে সন্দেহের আর কোনও অবকাশ নেই।